পবিত্র ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে বিশেষ ট্রেনযাত্রা। বুধবার সকাল থেকে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে পর্যায়ক্রমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের উদ্দেশ্যে যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর ট্রেন। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ট্রেন সময়সূচি অনুযায়ী ছাড়তে পারেনি।
এদিকে, প্রথম দিনের ঈদযাত্রা পরিদর্শন শেষে রেলমন্ত্রী মো. জিলস্নুল হাকিম সাংবাদিকদের বলেছেন, যাত্রী সক্ষমতা বাড়াতে আগামী এক বছরের মধ্যে ৮০০টি কোচ ও লোকমোটিভ রেলওয়ে বহরে যুক্ত করতে চান। ইতোমধ্যে ২০০টি বগি আমদানির অনুমতি পাওয়া গেছে।
অন্যদিকে, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বুধবার থেকে ফিরতি যাত্রার টিকিট অনলাইনে বিক্রি শুরু হয়েছে। আরও ৭দিন
টিকিট বিক্রি অব্যাহত থাকবে।
বুধবার সকালে সময়সূচি অনুযায়ী ট্রেন ছাড়তে না পারার বিষয়টি স্বীকার করে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, 'শিডিউল বিপর্যয়ের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে একটি ট্রেন ছাড়তে কিছুটা সময় বিলম্ব হয়েছে। আপনারা জানেন, আজ ট্রেনে ঈদযাত্রার প্রথম দিন। আমরা গত ২৪ মার্চ ট্রেনের যে অগ্রিম টিকিট বিক্রি করেছিলাম সেটির আজ প্রথম দিন।'
তিনি বলেন, 'এখন পর্যন্ত আমরা সব ট্রেনই যথাসময়ে ছাড়তে পেরেছি। শুধু একটি ট্রেন ছাড়তে ১ ঘণ্টা ডিলে (দেরি) হয়েছে। এর কারণ, উত্তরবঙ্গের বা পশ্চিম অঞ্চলের ট্রেনগুলো সেখান থেকে আসার পর আবার প্রস্তুত করে সেগুলো ফিরতি ট্রিপে চালাতে হয়। ওই ট্রেনগুলো যদি বিলম্বে কমলাপুর আসে তাহলে আমাদেরও বিলম্বে ছাড়তে হয়।'
ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার বলেন, 'আমরা যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। অন্যান্য সময়ের চেয়ে এখন মানুষের ভিড় বেশি। সেজন্য প্রতিটি স্টেশনেই যাত্রী উঠানামার জন্য দুই মিনিট করে সময় বাড়ানো হয়। সেজন্য কিছুটা সময় বিলম্ব হয়েছে। আর মূল কথা হচ্ছে, মানুষজন যেন স্বাচ্ছন্দ্যে এবং নিরাপদে বাড়ি পৌঁছাতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে। আমরা আশা করছি গতবারের মতো এবারও সবাই স্বস্তি নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারবেন।'
এ বছর ট্রেনের শতভাগ টিকিট অনলাইনে উন্মুক্ত করা হয়েছে। সপ্তাহজুড়ে অনলাইনের মাধ্যমে যেসব যাত্রী ট্রেনের টিকিট কাটতে পেরেছেন তারাই বুধবার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছেন। অর্থাৎ গত ২৪ মার্চ যেসব যাত্রী ৩ এপ্রিলের অগ্রিম টিকিট কেটেছেন তারাই গ্রামের উদ্দেশে গেছেন।
বুধবার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ভোরেই ট্রেন ছাড়া শুরু হয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ঢাকা থেকে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে প্রথম ট্রেন ধূমকেতু এক্সপ্রেস (৭৬৯), দ্বিতীয় ট্রেন কক্সবাজারগামী পর্যটক এক্সপ্রেস (৮১৬), তৃতীয় ট্রেন সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেস (৭০৯), নীলসাগর (৭৬৫), সোনার বাংলা (৭৮৮), এগারো সিন্দুর (৭৩৭), তিস্তা (৭০৭), মহানগর প্রভাতি (৭০৪), সুন্দরবন (৭২৬), মহুয়া (৪৩), কর্ণফুলী (০৪), রংপুর এক্সপ্রেস (৭৭১), তিস্তা (৩৪), জামালপুর এক্সপ্রেস (৭৯৯) পর্যায়ক্রমে ছেড়ে গেছে।
অন্যদিকে চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে ১০, ১১ ও ১২ এপ্রিলও টিকিট বিক্রি করা হবে। একইসঙ্গে যাত্রীদের অনুরোধে ২৫ শতাংশ টিকিট যাত্রা শুরুর আগে প্রারম্ভিক স্টেশন থেকেও বিক্রি করছে রেলওয়ে।
ফিরতি টিকিট বিক্রি চলবে আরও ৭ দিন
তিনি জানান, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আগাম টিকিট বিক্রি শেষে ফিরতি যাত্রার টিকিট অনলাইনে বিক্রি হয় বুধবার সকাল ৮টায়। রেলওয়ের ওয়েবসাইট ও মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। ট্রেনের সব টিকিট এবার অনলাইনেই বিক্রি করা হচ্ছে। আগামী ৯ এপ্রিল পর্যন্ত ফিরতি যাত্রার টিকিট বিক্রি করা হবে।
অগ্রিম টিকিটের মতোই ওয়েবসাইটে চাপ কমাতে পূর্ব ও পশ্চিমের ফিরতি টিকিট দুই সময়ে বিক্রি হবে। সকাল ৮টা থেকে পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেনের টিকিট এবং দুপুর ২টায় বিক্রি হবে পূর্বাঞ্চলের ট্রেনের টিকিট।
সূচি অনুযায়ী, ঈদের আগে আন্তঃনগর ট্রেনের ১৩ এপ্রিলের ফিরতি টিকিট বিক্রি করা হয়েছে ৩ এপ্রিল। আজ বিত্রি হবে ১৪ এপ্রিলের টিকিট। এছাড়া ১৫ এপ্রিলের টিকিট ৫ এপ্রিল; ১৬ এপ্রিলের টিকিট ৬ এপ্রিল; ১৭ এপ্রিলের টিকিট ৭ এপ্রিল; ১৮ এপ্রিলের টিকিট ৮ এপ্রিল এবং ১৯ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি করা হবে ৯ এপ্রিল। এছাড়া যাত্রী সাধারণের অনুরোধে ২৫ শতাংশ টিকিট যাত্রা শুরুর আগে প্রারম্ভিক স্টেশন থেকে পাওয়া যাবে।
রেলবহরে ৮০০ কোচ-ইঞ্জিন
যুক্ত করতে চান রেলমন্ত্রী
বুধবার ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনে ঈদযাত্রা পরিদর্শন করতে এসে রেলমন্ত্রী মো. জিলস্নুল হাকিম সাংবাদিকদের বলেন, 'রেলের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য কোচ আমদানি করা হচ্ছে। লোকোমোটিভ আমদানির ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা ২০০ বগি আমদানির জন্য অনুমোদন পেয়েছি। আশা করি এক বছরের মধ্যে ৭০০ থেকে ৮০০ কোচ এবং ইঞ্জিন আমদানি করে ট্রেনে যাত্রী পরিবহণের ক্ষমতা এবং মাল পরিবহণের সক্ষমতা বাড়াতে পারব।'
দুর্নীতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'কোনো সংস্থাই চায় না সেই সংস্থার মধ্যে দুর্নীতি থাকুক। আমরাও চাই না রেলের মধ্যে দুর্নীতি থাকুক। কেনাকাটায় সব জায়গাতেই কিছু না কিছু দুর্নীতি থাকে। অনেক বড় বড় জায়গায়ও হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে রেল অনেক ছোট জায়গা। অনেক নামিদামি জায়গাতেও ক্রয়ের ক্ষেত্রে কিছুটা দুর্নীতি থাকে। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি যেন আমাদের রেলে কোনো ধরনের এরকম কিছু না থাকে। আমরা চেষ্টা করব সব রকম দুর্নীতি বন্ধ করতে।'
রেলপথ মন্ত্রী বলেন, 'আপনারা দেখেছেন এবার যাত্রীরা যেন ঈদে নিরাপদে বাড়িতে গিয়ে ঈদ করতে পারে সেজন্য আমাদের রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছে। এখানে আমরা ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানোর ব্যবস্থা করেছি। বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছি। যারা আসন পাবেন না তারা যেন অন্তত দাঁড়িয়ে যেতে পারেন, সেজন্য আলাদা টিকিটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঈদে যত লোক বাড়িতে যাবে, তাদের সবাইকে তো আমাদের পক্ষে পাঠানো সম্ভব নয়।'
তিনি বলেন, 'এবার ঈদে কালোবাজারি যেন টিকিট নিতে না পারে সেজন্য আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। এসব ব্যবস্থা কিন্তু যাত্রীদের কল্যাণের জন্য। নিরাপত্তা রক্ষার জন্য আমাদের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী আছে,র্ যাব, পুলিশসহ সরকারি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আমাদের সহযোগিতা করছে। আমরা আমাদের চেষ্টার ত্রম্নটি রাখি নাই। সাধ্যমতো আমরা আমাদের প্রস্তুতি নিয়েছি।'