ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের প্রবেশের ঘটনার প্রতিবাদে আন্দোলন নেমে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা। নিরাপত্তা পেলে একাডেমি কার্যক্রমে ফিরবেন বলেও জানিয়েছেন তারা।
রোববার বিকালে বুয়েটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা বলেন আন্দোলনকারীরা। সংবাদ সম্মেলনে দু'জন শিক্ষার্থী লিখিত বক্তব্য পাঠ করে শোনান। তবে তাদের নাম পরিচয় দেননি।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, "আমাদের ক্যাম্পাসের রাজনীতিমুক্ত থাকা, অপশক্তির কবল থেকে মুক্ত থাকা এবং নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পেলে আমরা সকল ব্যাচের শিক্ষার্থীরা অনতিবিলম্বে আমাদের একাডেমিক কার্যক্রমে ফেরত যাব।"
যে দুদিন শিক্ষার্থীরা টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা বর্জন করেছে, সেই দুই দিনের পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
সংবাদ সম্মেলন নিজেদের অবস্থান তুলে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বলা হয়, "বুয়েটে
ছাত্র রাজনীতিবিহীন ক্যাম্পাসের পক্ষে আন্দোলনরত সকল ব্যাচের শিক্ষার্থীর রোববার নিরাপত্তাজনিত তীব্র শঙ্কার কারণে কেউ কোনোরূপ সমাগম করেনি।
"ক্যাম্পাসের আশপাশের সকল এলাকায় শনিবার রাত থেকে ক্রমাগত মাইকিং, শিক্ষার্থীদের ফোন কলে হুমকি ধামকি প্রদান করা, সোশাল মিডিয়ায় নানারকম গুজব, বুয়েট শিক্ষার্থীদের মিথ্যা ট্যাগ দেওয়া, শিক্ষার্থীদের ছবি নাম পরিচয়সহ পোস্ট করে তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা গুরুতরভাবে বিঘ্নিত হয়- এমন সকল অপপ্রচার চালানো হয়েছে।"
ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকা বুয়েটের শিক্ষার্থীদের জন্য অনিরাপদ হয়ে পড়েছে মন্তব্য করে সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারীরা বলেন, "এমনকি বুয়েট ক্যাম্পাসের বাইরেও শিক্ষার্থীরা তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত।
"নিরাপত্তাজনিত এ সব কারণে বুয়েট শিক্ষার্থীদের রোববার ক্যাম্পাসে অবস্থান না নেওয়া মানে এই নয় যে- বুয়েট শিক্ষার্থীরা তাদের ছাত্ররাজনীতিবিহীন ক্যাম্পাসের দাবি থেকে সরে এসেছে, এ দাবি বুয়েটের সকল ব্যাচের সকল শিক্ষার্থীর।"
ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের বিষয়ে বলা হয়, রোববার বুয়েটের ২০ ব্যাচের টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা ছিল, উক্ত পরীক্ষায় ক্যাম্পাসে কোনোরূপ অবস্থান আন্দোলন ছাড়াই, কোনো বাধা ছাড়াই নিয়মিত শিক্ষার্থীদের শুধুমাত্র ১ জন বাদে সকল শিক্ষার্থীই স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত ছিল।
"১২১৫ জন ২০ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১২১৪ জনই পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। এ থেকেই শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত নৈতিক অবস্থান ক্যাম্পাসে পুনরায় ছাত্ররাজনীতি প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে কতটুকু সুদৃঢ় তা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়।"
শনিবারও বুয়েট ২২ ব্যাচের প্রথম টার্ম ফাইনাল পরীক্ষাতেও কোনো শিক্ষার্থীই অংশগ্রহণ করেনি বলে দাবি করেন শিক্ষার্থীরা।
বুয়েট শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে দাবি করে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, "সম্প্রতি মিডিয়ায় বুয়েটের আন্দোলনরত বিপুল সংখ্যক সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। আমরা আবারও সাফ জানিয়ে দিতে চাই যে, আমাদের অবস্থান কোনো একক ছাত্ররাজনীতিক সংগঠনের বিরুদ্ধে নয়, বরং বুয়েট ক্যাম্পাসে বাংলাদেশের সকল ছাত্ররাজনৈতিক সংগঠনের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে।"
বুয়েটে হিযবুত তাহরীর কার্যক্রম নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, "বর্তমানে হিজবুত তাহরীর নিয়ে কথা উঠেছে। এটি কোনো রাজনৈতিক দল না, বরং নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন। এদের কর্মকান্ড আমরা ক্যাম্পাসে দেখতে পাই বহিরাগতদের (সিসি ফুটেজ অনুযায়ী) লাগানো বিভিন্ন পোস্টার, মেইল বা প্রচারপত্র ইত্যাদির ভিত্তিতে। তাদের পরিচয় সম্পর্কে আমরা স্পষ্ট না।
"আমাদের ইন্সটিটিউশনাল মেইলে হিজবুত তাহরীর সংক্রান্ত মেইল দেখার পর অনতিবিলম্বে সর্বপ্রথম ডিএসডবিস্নউ স্যারকে ভার্চুয়ালি এই মর্মে ইনফর্ম করা হয়, আমাদের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকেই। এ ব্যাপারে ডিএসডবিস্নউ স্যারের কাছে যথাযথ পদক্ষেপ আহ্বান করা হয়। পরবর্তীতে ভিসি স্যারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ ব্যাপারে অগ্রগতি জানতে চাওয়া হলে স্যার জানান, এ ব্যাপারে বুয়েট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।"
২০২৩ সালের জুলাইয়ে সুনামগঞ্জের হাওরে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র ও নাশকতার অভিযোগে বুয়েটের সাবেক ও বর্তমান ৩৪ জন শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার হয়। তারা বর্তমানে জামিনে আছেন।
এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, "যেসব শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে শিবিরের কার্যক্রমে যুক্ত থাকার অভিযোগ আসছে, তাদের ঘটনাটি বুয়েটের বাইরে হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত এই ঘটনার বিষয়ে আমাদের কাছে সুস্পষ্ট কোনো প্রমাণ নেই। তবে অভিযোগ আসার সঙ্গে সঙ্গে আমরা তাদের সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেবার জন্য লিখিতভাবে আহবান জানাই এবং এটি আমাদের পূর্বের একটি আন্দোলনের অন্যতম দাবি হিসেবে ছিল।
"সে সময়ে ইন্টারভাল ১৮ এর ফেসবুক পেজে সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে বিবৃতি দেওয়া হয়, যা বুয়েট সাংবাদিক সমিতির ফেসবুক পেইজ থেকেও প্রচার করা হয়। আদালতে বর্তমানে এই মামলাটি বিচারাধীন আছে এবং এই বিচার প্রক্রিয়ার রায় সাপেক্ষে যদি এরকম কোনো শিক্ষার্থীর শিবির সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়, আমরা তাৎক্ষণিক তাদের বহিষ্কারের দাবি জানাব।"