স্বাগত মাহে রমজান
জাহান্নামের আগুনের জ্বালানি হবে মানুষ এবং পাথর
প্রকাশ | ০১ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
মাহে রমজানের দ্বিতীয় দশক 'মাগফিরাত' শেষ হয়ে আজ থেকে শুরু হলো নাজাতের দশক। এ সময় মুমিন বান্দারা জাহান্নামের আগুন থেকে নিষ্কৃতি লাভের আশায় আলস্নাহর দরবারে আকুল আবেদন জানাবেন। পাপি-তাপি বান্দারা তাদের বিগত জীবনের ভুলত্রম্নটি ক্ষমার জন্য রহমানুর রাহিমের কাছে কেঁদে আকুল আবেদন জানাবেন। পবিত্র এ মাসে কারো দোয়া আলস্নাহ রাব্বুল আল আমিন কবুল করে নিলে ওই মুমিন বান্দার জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম হয়ে যাবে।
জাহান্নামের আযাব সম্পর্কে কুরআন করিমে বলা হয়েছে, 'তোমরা জাহান্নামের ঐ আগুনকে ভয় করো, যার জ্বালানি হবে মানুষ এবং পাথর। যা অবিশ্বাসী কাফেরদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। (বাকারা-২৪) তাই জাহান্নামের আগুন থেকে নিজে বাঁচার পাশাপাশি নিজ পরিবারবর্গকে বাঁচানোর জন্য ইসলামে তাগিদ দেওয়া হয়েছে।'
মহান আলস্নাহ রাব্বুল আলামিন সূরা তাহরিমে বলেন, 'হে ঈমানদারগণ! নিজেকে এবং নিজের পরিবারবর্গকে সে আগুন হতে রক্ষা করো, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। সেখানে অত্যন্ত কর্কশ, রুঢ় ও নির্মম স্বভাবের ফেরেশতা নিয়োজিত থাকবে। যারা কখনো আলস্নাহর আদেশ অমান্য করে না। যে আদেশ তাদেরকে দেওয়া হোক না কেন, তা ঠিকঠিকভাবে পালন করে।'
পবিত্র কোরআনের অন্যত্র বলা হয়েছে, যখন তাদের (জাহান্নামিদের) গলায় শিকল ও জিঞ্জির লাগানো হবে, তখন তা ধরে টগবগ করে ফুটন্ত
পানির দিকে টানা হবে এবং পরে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করা হবে। (সূরা মুমিন)
পবিত্র কোরআনের সূরা সা'দে উলেস্নখ করা হয়েছে, 'আর খোদাদ্রোহী মানুষকে নিকৃষ্ট পরিণতি হচ্ছে জাহান্নাম। সেখানে তারা (অনন্তকাল) জ্বলবে। এটা অত্যন্ত খারাপ স্থান, প্রকৃত পক্ষে এ স্থান তাদের জন্যই। অতএব সেখানে তারা স্বাদ গ্রহণ করবে টগবগে ফুটন্ত পানি, পুঁজ, রক্ত এবং এ ধরনের আরও অনেক কষ্টের। (সূরা সাদ-৫৫-৫৮)
পবিত্র কুরআনে সূরা হজ্জে বলা হয়েছে, 'জাহান্নামিদের মাথার ওপরে প্রচন্ড গরম পানি ঢেলে দেওয়া হবে, ফলে তাদের পেটের মধ্যে অবস্থিত সকল বস্তু ও চামড়া মুহূর্তের মধ্যে গলে যাবে এবং তাদের জন্য লোহার ডান্ডাসমূহ থাকবে। যখনই তারা শ্বাসরোধক অবস্থায় জাহান্নাম হতে বের হওয়ার চেষ্টা করবে তখনই তাদেরকে প্রতিহত করা হবে এবং বলা হবে দহনের শাস্তি ভোগ করতে থাক। (হজ্জ-১৯-২২)
হযরত আবু হুরাইরাহ রাদিয়ালস্নাহু তায়ালা আনহু বলেন যে, নবী করিম সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেছেন, 'নিশ্চয়ই (জাহান্নামে) কাফেরদের চামড়া বিয়ালিস্নশ গজ পুরু হবে এবং এক একটি দাঁত উহুদ পাহাড়ের সমান হবে। জাহান্নামে একজন জাহান্নামি যে স্থানজুড়ে অবস্থান করবে তা মক্কা হতে মদিনার দূরত্বের সমান। (তিরমিজি)
মহান আলস্নাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, 'যখন তাদের দেহের চামড়া আগুনে পুড়ে গলে যাবে, তখন (সাথে সাথে) সেখানে অন্য চামড়া সৃষ্টি করে দেবো; যেন তারা আজাবের স্বাদ পুরাপুরি গ্রহণ করতে পারে। বস্তুত আলস্নাহ বড়ই শক্তিশালী এবং নিজের ফয়সালাসমূহ কার্যকরী করার কৌশল খুব ভালো করেই জানেন।' (সূরা নিসা-৫৬)
আলস্নাহর রাসূল বলেন, 'আগুনকে এক হাজার বছর তাপ দেওয়া হলো তখন আগুন লালবর্ণ ধারণ করল। আবার এক হাজার বছর তাপ দেওয়া হলো তখন আগুন কালোবর্ণ ধারণ করল। সে জন্যই জাহান্নামের আগুন কালো এবং অন্ধকারময়।' (তিরমিজি)
জাহান্নামিগণ একদল আরেক দলকে অভিশাপ দেবে। যারা জাহান্নামে যাবে তারা একদল আরেক দলকে দোষ দেবে যে, আমরা তোমাদের কারণেই আজ এই কঠিন শাস্তির স্থান জাহান্নামে এসেছি। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআন বলছে, প্রত্যেকটি দল যখনই জাহান্নামে প্রবেশ করবে, নিজের সঙ্গের দলটির ওপর অভিশাপ দিতে দিতে অগ্রসর হবে। শেষ পর্যন্ত সকলেই যখন সেখানে সমবেত হবে, তখন প্রত্যেক পরবর্তী লোক পূর্ববর্তী লোকদের সম্পর্কে বলবে, হে আমাদের রব! এ লোকেরাই আমাদেরকে বিভ্রান্ত করেছে। এখন তাদেরকে আগুনে (আমাদের চেয়ে) দ্বিগুণ শাস্তি দাও। আলস্নাহ বলবেন, সকলের জন্যই দ্বিগুণ আজাব কিন্তু তোমরা তা বুঝবে না। (সূরা আ'রাফ-৩৮)
এছাড়া যারা পৃথিবীতে ইসলামি বিধি বিধানের তোয়াক্কা করেনি, যারা ধারণা করত মৃতু্যর পরে কোনো জীবন নেই। কোরআন-হাদিস সম্পর্কে যারা ছিল উদাসীন; যারা অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ দখল করত। পৃথিবীতে নিজের শক্তির মহড়া দিয়ে অন্যায় কাজ করত। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে দুর্বলদের ওপর অত্যাচার করত- তাদেরকে পরকালে আযাবের পর আযাব দেওয়া হবে।
এ সম্পর্কে মহান আলস্নাহ বলেন, 'এরা অবস্থান করবে উত্তপ্ত বাতাস ও ফুটন্ত পানির মধ্যে। তাদেরকে অচ্ছাদিত করে রাখবে উত্তপ্ত কৃষ্ণবর্ণ ধুম্ররাশি যা কখনো শীতল ও আরামদায়ক হবে না। এরা ওই সমস্ত মানুষ- যারা পৃথিবীর জীবনে ছিল সুখী সচ্ছল। তাদের সুখী সচ্ছল জীবন তাদেরকে লিপ্ত করেছিল পাপ কাজে। সে সব পাপ কাজ তারা করত জিদ ও অহংকারের সাথে। তারা বলত, মৃতু্যর পর তো আমরা কংকালে পরিণত হবো। মিশে যাবো মাটির সাথে। তারপর আবার কী করে আমরা জীবিত হবো? আমাদের বাপ-দাদাকেও এভাবে জীবিত করা হবে? হে নবী! তাদেরকে বলে দাও, পরবর্তী এবং পূর্ববতী সকলকেই একদিন উপস্থিত করা হবে। তার জন্য সময় কালও নির্ধারিত হয়ে আছে। হে পথভ্রষ্ট মিথ্যাবাদীর দল, তোমরা জাহান্নামে যকুম বৃক্ষ খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করবে। তা দ্বারাই তোমরা উদরপূর্ণ করবে। তারপর তৃষ্ণার্ত উটের মতো তারা পেট ভরে পান করবে উত্তপ্ত ফুটন্ত পানি?' (সূরা ওয়াকিয়া-৪২-৫৫)
কুরআনে বলা হয়েছে, জাহান্নামিগণ পৃথিবীতে ফিরে আসতে চাইবে নিজেকে আলস্নাহর পথে পরিচালনার জন্য। তবে আলস্নাহ সরাসরি তাদের আবেদন-নিবেদন সরাসরি প্রত্যাখ্যান করবেন। এ সম্পর্কে সূরা আনয়ামে বলা হয়েছে, 'তাদেরকে যদি পূর্ববর্তী জীবনের দিকে ফিরিয়ে দেয়া হয় তবুও তারা সে সব কাজই করবে যা হ'তে তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে। তারা তো সবচেয়ে বড় মিথ্যাবাদী।'
সূরা হাদিদের ১৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে- '(যখন ফেরেশতাগণ জাহান্নামিদেরকে জাহান্নামের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাবে, তখন বলবে) আজ তোমাদের নিকট হ'তে কোনো বিনিময় গ্রহণ করা হবে না এবং যারা পৃথিবীতে (প্রকাশ্য দাম্ভিকতার সাথে আলস্নাহর আয়াতগুলো) অস্বীকার করেছিল, (তাদেরকেও বিনিময় নিয়ে মুক্তি দেওয়া হবে না) তোমাদের ঠিকানা জাহান্নাম। সে জাহান্নামই তোমাদের খোঁজখবর গ্রহণকারী অভিভাবক। কত নিকৃষ্ট পরিণতি।' (সূরা হাদিদ-১৫)
হাদিসে এসেছে, জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণের উপায় মূলত দু'টি। প্রথমত, ঈমান আনা ও সৎকর্ম সম্পাদন করা। দ্বিতীয়ত, জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সব সময় আলস্নাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা।
জাহান্নামের আগুনে দগ্ধ হওয়ার মূল কারণ হলো কুফুরি। সুতরাং তা থেকে বেঁচে থাকাই জাহান্নাম থেকে মুক্তির প্রধান উপায়। সেক্ষেত্রে ঈমানের ছয়টি রুকনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা অত্যাবশ্যক। এ প্রসঙ্গে আলস্নাহ তাআলার বাণী, 'যারা বলে, হে আমাদের রব! নিশ্চয়ই আমরা ঈমান আনলাম। অতএব আমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করুন এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন' (আলে-ইমরান ২/১৬)।
অন্যত্র তিনি আরও বলেছেন, 'হে আমাদের রব! তুমি এসব অনর্থক সৃষ্টি করনি। তুমি পবিত্র। সুতরাং তুমি আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা কর। হে আমাদের রব! নিশ্চয়ই তুমি যাকে আগুনে প্রবেশ করাবে, অবশ্যই তুমি তাকে লাঞ্ছিত করবে। আর যালিমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই।' হে আমাদের রব! নিশ্চয়ই আমরা একজন আহ্বানকারীকে ঈমানের দিকে আহ্বান করতে শুনেছি যে, 'তোমরা তোমাদের রবের প্রতি ঈমান আন'। তাই আমরা ঈমান এনেছি। হে আমাদের রব! আমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা কর, বিদূরিত কর আমাদের ত্রম্নটি-বিচু্যতি এবং আমাদেরকে মৃতু্য দাও নেককারদের সাথে। হে আমাদের রব! আর তুমি আমাদেরকে তাই প্রদান কর যার ওয়াদা তুমি আমাদেরকে দিয়েছ তোমার রাসূলগণের মাধ্যমে। আর কিয়ামতের দিনে তুমি আমাদেরকে লাঞ্ছিত করবে না। নিশ্চয়ই তুমি অঙ্গীকার ভঙ্গ কর না' (আলে ইমরান ২/১৯১-১৯৪)।