ঈদ উপলক্ষে এবারও সড়ক পথে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে কৌশল বদলেছেন বাস ও পরিবহণ সংশ্লিষ্টরা। যদিও বাড়তি ভাড়া নিলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন পুলিশের আইজিপি। কিন্তু বাস্তবে নিয়মিত ভাড়ার তুলনায় ১শ' থেকে ৩শ' টাকা বাড়তি নেওয়ার পাশাপাশি যাত্রীদের বাধ্যকরা হচ্ছে সংশ্লিষ্ট রুটের শেষ গন্তব্যের টিকিটের মূল্য পরিশোধে। এতে কোনো কোনো রুটে যাত্রীকে ৫শ' টাকা পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে।
এদিকে, এবার ঈদে উপলক্ষে বাস ও পরিবহণ মালিকদের ব্যাপক প্রস্তুতি থাকলেও প্রত্যাশানুযায়ী টিকিট বিক্রি হয়নি বলে জানা গেছে। পরিবহণ সংশ্লিষ্টরা জানান, এবার ঈদে ছুটির দিন বেশি থাকায় দু'সপ্তাহ আগে থেকে আগাম টিকিট বিক্রি শুরু করা হয়েছে। কিন্তু এপ্রিলের ৫, ৮ ও ৯ এই তিন দিনের বাইরে তেমন কোনো টিকিট বিক্রি হয়নি।
এদিকে ঈদে পরিবহণে বাড়তি ভাড়া আদায় করলে বাস বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির সভাপতি মসিউর রহমান রাঙ্গা। তিনি বলেছিলেন, অনেক পরিবহণই ঈদের সময় অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে। যেসব বাস কোম্পানি সুনামের সঙ্গে কাজ করছে তাদের কোনো বাস যদি ভাড়া বেশি নেয় তাহলে ব্যবস্থা নেব। প্রয়োজনে স্পটে উপস্থিত হব। অভিযোগ পেলেই আমরা সেখানে যাব। কোনো কোনো জায়গায় কারা বাড়তি ভাড়া নিচ্ছে, তা আমরা শনাক্ত করব। ওই গণপরিবহনের চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হবে।
কিন্তু গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে প্রকাশ্যে বাসের আগাম টিকিটে ভাড়তি ভাড়ার পাশাপাশি নতুন কৌশলে যাত্রীদের পকেট কাটা হলেও কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন এ বিষয়ে যাত্রীরা কোনো অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
রোববার রাজধানীর বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড ও কাউন্টারগুলোতে সরেজমিন যাত্রীদের ভিড় কিংবা টিকিট কাউন্টারে তেমন কোনো ব্যস্ততা দেখা যায়নি। তবে যাত্রীদের অভিযোগ রয়েছে বাড়তি ভাড়া আদায়ের। রাইয়ান নামে এক যাত্রী জানান, ৫ রমজানে তিনি শ্যামলী এন. আর পরিবহণে নন এসি বাসে পটুয়াখালী থেকে ঢাকা এসেছেন ৬৫০ টাকায়। কিন্তু ৮ তারিখ ঢাকা-পটুয়াখালীর আগাম টিকিট কিনতে হয়েছে ৮৫০ টাকায়।
দক্ষিণাঞ্চলগামী পরিবহণগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাস চলাচল করে সাকুরা পরিবহণের। যার মধ্যে অর্ধেক বাসের গন্তব্য থাকে বরিশাল সদর। প্রায় প্রতি ঘণ্টায় সায়দাবাদ ও গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে বাস ছেড়ে যায়। এর বাইরে সীমিত সংখ্যক বাস বরিশাল শহর পাড় হয়ে পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলা হয়ে কুয়াকাটা যায়। অথচ এখন বারিশালগামী
কোনো বাস পাচ্ছে না যাত্রীরা। ফলে বরিশাল যেতে গুনতে হচ্ছে শেষ স্টপিসের টিকিটের ভাড়া।
দেখা গেছে, ঈদের আগে ঢাকা থেকে বরিশাল নন এসি বাসে ৫৫০, পটুয়াখালী ৬৫০, বরগুনা ৭শ ও কুয়াকাটা ৭৫০ টাকা ভাড়া নেয়া হতো। কিন্তু ঈদ উপলক্ষে বরিশাল পর্যন্ত ৭৫০ টাকা এবং এর পর যে কোনো গন্ত্যব্যে ভাড়া গুনতে হচ্ছে ৯৫০ টাকা। যাত্রীদের অভিযোগ এবার বাড়তি ভাড়া আদায়ে নতুন কৌশল নিয়েছে পরিবহণ সংশ্লিষ্টরা।
গাবতলি বাসস্ট্যান্ডে আগাম টিকিটের জন্য কাউন্টারে আসা ফকরুল হাসান বলেন, প্রতিবছর এমনিতেই স্বাভাবিক ভাড়ার তুলনায় এক থেকে দেড়শ টাকা বেশি নেয়া হয়। কিন্তু এবার তা বেড়ে ৩শ' টাকা ছাড়িয়েছে। গত ঈতে ৬শ টাকায় বরিশালের পরের স্টপেজ বাকেরগঞ্জ গিয়েছে। কিন্তু এবার কুয়াকাটার টিকিট কাটতে হচ্ছে। অথচ বাকেরগঞ্জ থেকে কুয়াকাটার দূরত্ব ১০০শ' কিলোমিটারেরও বেশি। দক্ষিণাঞ্চলের আরেকটি রুট হচ্ছে বরিশাল হয়ে ঝালকাঠি ও পিরোজপুর জেলার বিভিন্ন থানা। সে ক্ষেত্রেও যাত্রীকে গুনতে হবে বাড়তি শেষ গন্তব্যের ভাড়া।
যাত্রীদের অভিযোগ, আগে কাউন্টারে এসে পিরোজপুর কিংবা পটুয়াখালীর বাস আছে কিনা জানতে চাইলে বলা হতো রাতে ১টা বা ২টা বাস আছে। যেহেতু প্রতিঘণ্টায় বরিশাল বাস যায় তাই বারিশালের বাসের টিকিট কেটে যাওয়া হতো, তারপর লোকার বাসে নির্দিষ্ট গন্ত্যব্যে পৌঁছাতেন যাত্রীরা। কিন্তু এবার আগাম টিকিট বিক্রির সময় বরিশালের কোনো বাসে টিকিট নেই বলা হচ্ছে, সে ক্ষেত্রে বরিশাল হয়ে দূরের জেলাগামী বাসে বাধ্য হয়ে ৩শ' টাকা পর্যন্ত বাড়তি দামে টিকিট সংগ্রহ করতে হচ্ছে।
একই অবস্থা উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলগামী বাসেও। তবে তুলনামূলকভাবে স্বাভাবিক রয়েছে চট্টগ্রাম অঞ্চলের যাত্রী পরিবহণে ভাড়া। উত্তরাঞ্চলগামী হানিফ পরিবহণের টিকিট সংগ্রহ করতে আসা যাত্রীরা জানান, নন এসি বাসে গত সপ্তাহের তুলনায় দেড়শ' টাকা ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। এছাড়াও কুষ্টিয়ার পর যে কোনো গন্তোব্য যেতে গুনতে শেষ গন্তব্যের ভাড়া। যা আগে ছিল না। ফলে ৮শ' টাকায় লালমনির হাটের টিকিট দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৫০ টাকা।
হানিফের গাবতলী কাউন্টারের কর্মকর্তরা বলেন, ঈদের সময়ে নন এসি পরিবহণ স্যংখ্যা বাড়ানো হয়, ফলে বাড়তি খরচ করতে হয় তাই এই সব বাসে ১শ' টাকার ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। তবে শেষ স্টপেজের ভাড়া দেওয়ার কারণে যাত্রীরে ভাড়া আগের থেকে অনেকটা বেড়েছে। দেখা গেছে পঞ্চগড়গামী বাসে কুষ্টিয়া পর্যন্ত ৬৫০ টাকা ভাড়া। এরপর যেকোনো স্থানে ভাড়া ১ হাজার ২৫০ টাকা করা হয়েছে।
তবে যাত্রী চাপ তুলনামূলক কম থাকায় চট্টগ্রাম রুটে বাসের ভাড়া অপরিবর্তিত রয়েছে। সেন্টমার্টিন পরিবহণের কর্মমর্তারা জানান, ঈদে অন্যান্য রুটে বাসের সংখ্যা বাড়ানো হলেও চট্টগ্রাম রুটে পরিবহণের সংখ্যা কমানো হয়েছে। ঢাকা চট্টগ্রাম কক্সবাজার রুটে দিনে ২০টি গাড়ি চলাচল করলেও ঈদে তা কমে ১৫ হয়েছে। তবে ঈদের পরে টু্যরিস্ট বাড়লে এই রুটে যাত্রী বাড়তে পারে বলেও জানান তিনি।
এছাড়া বাড়তি ভাড়া নেয়ার অভিযোগ রয়েছে বিলাসবহুল বাসের টিকিটেও। ঈদকে সামনে রেখে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বিলাসবহুল বাসগুলো স্বাভাবিকের তুলনায় ৫শ' টাকা পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ জানিয়েছেন যাত্রীরা। বরিশালের যাত্রীরা বলেন, ১ হাজার টাকা টিকিট ঈদ উপলক্ষ্যে ১ হাজার ৩শ টাকায় কিনতে হচ্ছে। একইভাবে চট্টগ্রাম রুটে ১ হাজার ৫শ' টাকার টিকিট ২ হাজার, রাজশাহী অঞ্চলে ১ হাজার ৪শ' টাকার টিকিট ১ হাজার ৮শ' টাকা নিচ্ছে পরিবহণগুলো।
দেখা গেছে বিলাসবহুল বাসের ভাড়া সরকার নির্ধারণ করে না। মূলত প্রদত্ত পরিসেবার মানের উপর ভিত্তি করে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি দ্বারা এ ধরনের বাসের ভাড়া নির্ধারিত হয়। তবে এবার ঈদে ভাড়া নির্ধারণে বিলাসবহুল বাস সার্ভিস প্রোভাইডারদের সঙ্গে পরিবহণ মালিক সমিতির আলোচনায় বসার কথা থাকলেও তা হয়নি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির সহ-সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, 'আমাদের সেক্রেটারি অসুস্থ এবং বর্তমানে চিকিৎসাধীন থাকায় আমরা এখনো কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বসতে পারিনি। তবুও, কোনো নির্দিষ্ট কোম্পানির বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব।'