সিসিইউতে খালেদা জিয়া
মৃতু্যর সঙ্গে লড়াই করছেন :মির্জা ফখরুল
প্রকাশ | ০১ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ নিয়ে গত এক মাসে দ্বিতীয়বারের মতো হাসপাতালে ভর্তি হতে হলো সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে। সেখানে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন তিনি।
শনিবার গভীর রাতে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর রোববার সকালে আবারও দুই দফায় তার শারীরিক পরীক্ষা করে মেডিকেল বোর্ড। সব পরীক্ষার রিপোর্ট পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী টিকিৎসার সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিযেছেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, 'ম্যাডামের শারীরিক কন্ডিশন দেখে চিকিৎসকরা তাকে ভর্তি করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হবে। এখন তিনি করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) আছেন।'
কবে ফিরতে পারেন বাসায়- এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, এটা মেডিকেল বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়েছে। চিকিৎসাও চলছে।
ডা. জাহিদ জানান, শনিবার রাত পৌনে ৩টায় হাসপাতালে আনার পরপরই কয়েকটি টেস্ট করা হয়। মেডিকেল বোর্ড পরীক্ষার রিপোর্ট দেখে চিকিৎসার ওষুধপত্র প্রদান করেন।
দলীয় প্রধানের শারীরিক অবস্থা প্রসঙ্গে রোববার দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, 'দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বন্দি অবস্থায় মৃতু্যর সঙ্গে লড়াই করছেন। '
খালেদা জিয়ার মেডিকেল কোরের একটি সূত্র জানায়, তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছেন।
হাসপাতালের একাধিক সূত্র জানায়, হাসপাতালে পৌঁছানোর পর খালেদা জিয়াকে সরাসরি সিসিইউতে নেওয়া হয়। তার পুরনো রোগ লিভার সিরোসিস জটিলতা বেড়ে যাওয়ায় তাকে সিসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চিকিৎসকরা।
গত ২৭ মার্চ রাতেও বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। সেদিনও হাসপাতালে নেওয়ার কথা আলোচনা হলেও পরে নেওয়া হয়নি। পরদিন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেছিলেন, বিপজ্জনক অবস্থান থেকে বেগম খালেদা জিয়াকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন চিকিৎসকরা।
মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সর্বশেষ গত ১৩ মার্চ এভার কেয়ারে ভর্তি হয়েছিলেন খালেদা জিয়া। শারীরিক কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ১৪ মার্চ গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় ফেরেন তিনি।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রম্নয়ারি খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর থেকে তার অসুস্থতা বাড়া-কমার মধ্যে রয়েছে। করোনা মহামারির সময় ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি পেয়ে বাসায় ফেরেন তিনি। এরপর বেশ কয়েকবার হাসপাতালে যান। সবশেষ গত বছরের মাঝামাঝি সময় তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। গত বছরের ২৬ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স হাসপাতালের তিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বাংলাদেশে আসেন খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য। তাদের চিকিৎসা শুরুর পরই খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হতে শুরু করে। সে যাত্রায় হাসপাতালে ১৫৬ দিন থেকে বাসায় ফেরেন খালেদা জিয়া। এরপর থেকে কিছু দিন বিরতি দিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য এভার কেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে তাকে। ৭৯ বছর বয়সি সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কিডনি ও ফুসফুস জটিলতাসহ নানা রোগে ভুগছেন।
সরকার খালেদা জিয়ার সাজা ২০২০ সালের ২৫ মার্চ নির্বাহী আদেশে স্থগিত করে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছিল। তখন থেকে ছয় মাস পরপর তার সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। তবে চিকিৎসার জন্য তার বিদেশে যেতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।