বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্ররাজনীতি ফেরানোর দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করার পর প্রকাশ্যেই নেতাকর্মীদের নিয়ে বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান।
রোববার দুপুর আড়াইটার দিকে কয়েকশ নেতাকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে বুয়েট শহীদ মিনারে ফুল দেন তারা। সেখানে ফুল দেওয়ার পর তারা অল্প সময়ের মধ্যে বুয়েট ত্যাগ করেন। এ সময় বুয়েটের মূল ফটক এবং বিভিন্ন হলের প্রবেশ পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
গত ২৮ মার্চ গভীর রাতে বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ নেতাদের প্রবেশের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পাল্টায় রোববার ক্যাম্পাসে ঢুকে নিজেদের শক্তির জানান দিল সরকার সমর্থক ছাত্র সংগঠনটি।
দুপুরে বুয়েট ক্যাম্পাসে যাওয়ার আগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি ফেরানোর দাবি 'আলটিমেটাম' দেয় ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন।
তিনি বলেন, 'বুয়েট প্রশাসনের কাছে আমাদের আহ্বান থাকবে, অনতিবিলম্বে ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি চালু করতে হবে। যে নিয়ম আপনারা শুরু করেছেন সেটি কালাকানুন, সেটি কালো আইন।'
তিনি বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করার কোনো আইন নাই। যদি থেকেও থাকে সেটি সংবিধানবিরোধী। আমরা আজ শহীদ মিনার থেকে বুয়েট প্রশাসনকে আলটিমেটাম দিচ্ছি, অনতিবিলম্বে ছাত্ররাজনীতি চালু করতে হবে। স্বল্পতম সময়ের মধ্যে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিতে হবে। বুয়েট শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য
ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম রাব্বির সিট ফিরিয়ে দিতে হবে।'
২০১৯ সালে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার পর আন্দোলনের মুখে ওই ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হয়। ২৮ মার্চ গভীর রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি, দপ্তর সম্পাদকসহ অনেকে বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে এর প্রতিবাদে ২৯ মার্চ থেকে ফের আন্দোলন শুরু হয়।
শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমালা লঙ্ঘন করে পুরকৌশল বিভাগের ২১তম ব্যাচের ছাত্র ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম এ সমাগম ঘটান।
এ ঘটনায় ওইদিন বিকালে বুয়েটের শহীদ মিনারের সামনে শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালকের (ডিএসডবিস্নউ) কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিক্ষোভ দেখান।
এরপর রাতে বুয়েটের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ফোরকান উদ্দিনের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ইমতিয়াজ হোসেন রাহিমের হলের সিট বাতিল করা হয়। পাশাপাশি বিষয়টি তদন্তে কমিটি গঠন করে ৮ এপ্রিলের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।
ইমতিয়াজকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করাসহ ছয় দফা দাবিতে রোববার সকাল থেকে ফের বিক্ষোভের ঘোষণা দিয়েছিলেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। তবে রোববার সকাল থেকে ক্যাম্পাসে তাদের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।
শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিতের ইঙ্গিত দিলেও ইমতিয়াজকে বহিষ্কারের প্রতিবাদে এবং বুয়েটে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্ররাজনীতি ফেরাতে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রতিবাদ সমাবেশ করে ছাত্রলীগ।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনানের সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল, ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, বাঙলা কলেজ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগসহ আশপাশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ইউনিট ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সমাবেশে যোগ দেন।
'জায়ামাত-শিবির-রাজাকার, তাড়াতাড়ি বাংলা ছাড়', 'মৌলবাদের বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন, শিবিরের বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন', 'শিবিরে আস্তানা, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও' ইত্যাদি সেস্নাগান দেওয়া হয় সমাবেশ থেকে।
ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম বলেন, 'আমরা জানি, ছাত্ররাজনীতিতে নেগেটিভ এলিমেন্ট রয়েছে। তবে এটাকে সংস্কার করতে হবে আরও ভালো ছাত্ররাজনীতি দিয়ে। ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের নামে সংবিধান অবমাননা করা হয়, যাচ্ছেতাই ক্যাম্পাস কালচার তৈরি করে।'
'অন্ধকার রাজনীতি চর্চা করবে মৌলবাদী ও স্বাধীনতার বিপক্ষের গোষ্ঠীরা। হিজবুত তাহরীর শিক্ষার্থীদের অফিসিয়াল ইমেইলে মেইল পাঠায় খেলাফত প্রতিষ্ঠার, ক্যাম্পাসে কিউআর কোড লাগায় জঙ্গিবাদ চর্চার। আমরা চাই বুয়েটের শিক্ষার্থীরা আধুনিকায়ন করে স্মার্ট ছাত্ররাজনীতি উপহার দেবে। তারা তাক লাগানো প্রযুক্তি তৈরি করে বাংলাদেশকে গর্বিত করবে।'
প্রতিবাদ সমাবেশে অন্যদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন, সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বক্তব্য দেন।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা চাইলে বুয়েটে ছাত্র
রাজনীতির অনুমতি : উপাচার্য
শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ক্যাম্পাসে আবারও ছাত্ররাজনীতি করার অনুমতি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য সত্য প্রসাদ মজুমদার।
তিনি বলেছেন, 'তখন যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, সেই পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সেটা যদি পরিবর্তন করতে হয় তাহলে তাদের আবার উদ্যোগী হতে হবে।'
রোববার দুপুরে বুয়েটে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য এসব কথা বলেন।
উপাচার্য বলেন, 'রাজনীতি না করলে শিক্ষার্থীদের চোখ খুলবে না, দেশের প্রতি তাদের প্রেম আসবে না। এই বিষয়গুলো তারা (শিক্ষার্থী ও শিক্ষক) চিন্তা করে যদি সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে (ছাত্র) রাজনীতি ওপেন হতে পারে।'
তিনি বলেন, 'প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা রাজনীতি করতেই হবে- এমন তো কাউকে জোর করতে পারব না। তারা যদি নিজ থেকে উদ্যোগ নেয়- আমরা শিখতে চাই, করতে চাই, প্র্যাকটিস করতে চাই, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে; আমরাও করতে চাই। তাদের যদি সিদ্ধান্ত হয় তাহলে তারা চালু করতে পারে, এটা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার।'