সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

বিক্ষুব্ধ বুয়েট, ৬ শিক্ষার্থীকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের দাবি

যাযাদি রিপোর্ট
  ৩১ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) মধ্যরাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রবেশের ঘটনায় শনিবারও ক্যাম্পাসে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা -যাযাদি

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ নেতাদের প্রবেশের ঘটনায় দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

শনিবার সকাল ৮টা থেকে বুয়েটের শহীদ মিনারে সামনে জড়ো হয়ে তারা বিক্ষোভ করেন; এরপর বেলা ১১টায় সংবাদ সম্মেলনে এসে দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন।

নতুন করে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ নেতাদের সমাগমের ঘটনায় পুরকৌশল বিভাগের ২১তম ব্যাচের ছাত্র ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইমতিয়াজ হোসেন রাহিমের হলের সিট বাতিল করা হয়েছে। তবে ইমতিয়াজসহ আরও পাঁচ শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন শিক্ষার্থীরা।

২০১৯ সালে শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হয় বুয়েট ক্যাম্পাসে। তবে গত বৃহস্পতিবার গভীররাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি, দপ্তর সম্পাদকসহ অনেকেই বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন।

শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমালা লঙ্ঘন করে পুরকৌশল বিভাগের ২১তম ব্যাচের ছাত্র ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম এ সমাগম ঘটান।

এ ঘটনায় শুক্রবার বিকালে বুয়েটের শহীদ মিনারের সামনে শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালকের (ডিএসডবিস্নউ) কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিক্ষোভ দেখান।

এরপর রাতে বুয়েটের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ফোরকান উদ্দিনের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ইমতিয়াজ হোসেন রাহিমের (স্টুডেন্ট নং ২১০৪১৪১) হলের সিট বাতিল করা হয়।

শনিবার শিক্ষার্থীদের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ইমতিয়াজ হোসেন রাহিমের সঙ্গে

বুয়েটের বাকি যেসব শিক্ষার্থী জড়িত ছিল তাদের একাংশের নাম-পরিচয় ও ছবি ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়েছে। ইমতিয়াজের মতোই বিশ্ববিদ্যালয় সংবিধানের নিয়ম ভঙ্গের দায়ে এবং বুয়েট ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক অপশক্তি অনুপ্রবেশ করানোর চেষ্টা করায় তাদের সবাইকে স্থায়ীভাবে একাডেমিক ও হল থেকে বহিষ্কারের দাবি জানাচ্ছেন।

বলা হয় 'এর বাইরে বাকি আরও যারা জড়িত, যাদের আমরা শনাক্ত করতে পারিনি, তাদের সবাইকেই যেন বুয়েট প্রশাসন অনতিবিলম্বে শনাক্ত করে এবং উলিস্নখিত অভিযুক্তদের মতোই একই মেয়াদে শাস্তির ব্যবস্থা করে।'

অন্য দাবিগুলো হলো-

১. লিখিতভাবে ইমতিয়াজ হোসেন রাহিমকে একাডেমিকভাবে স্থায়ী বহিষ্কার করা।

২. বহিরাগত রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ক্যাম্পাসে প্রবেশের বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বুয়েট প্রশাসনের লিখিত নোটিশ ও শিক্ষার্থীদের দাবি বাস্তবায়ন করা।

৩. শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য 'রাত সাড়ে ১০টার পর ছাত্রছাত্রীর ক্যাম্পাসে থাকা নিষেধ' এবং যে কোনো প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের ওই সময়ের বেশি ক্যাম্পাসে অবস্থান করতে গেলে ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের (ডিএসডাবিস্নও) অনুমতির প্রয়োজন পড়ে।

(ক) এক্ষেত্রে যদি বহিরাগতদের অনুমতি দেওয়া না হয়ে থাকে, তাহলে ডিএসডাবিস্নওর প্রটোকল ভেঙে তারা মধ্যরাতে সেমিনার রুমে মিটিং করেছে। এক্ষেত্রে ডিএসডাবিস্নও নিজের প্রটোকল অব্যাহত রাখতে ব্যর্থ।

(খ) আর যদি বহিরাগতদের অনুমতি দেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে রেজিস্ট্রার অফিসের দেওয়া 'বুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক সংগঠন এবং কার্যক্রম নিষিদ্ধ' ঘোষণার লঙ্ঘন করেছেন ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালক মিজানুর রহমান।

(গ) ক্যাম্পাসের অডিটরিয়াম, সেমিনার রুম, ক্যাফেটেরিয়া সংলগ্ন জায়গার ব্যবহার ডিএসডাবিস্নউ আওতাধীন। অনুমতি ছাড়া বহিরাগতদের এ জায়গাগুলো ব্যবহার করার মতো ধৃষ্টতান্তমূলক আচরণ ডিএসডবিস্নউর দায়িত্ব পালনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

'দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ' ছাত্রকল্যাণ দপ্তর পরিচালক মিজানুর রহমানের দ্রম্নততম সময়ের মধ্যে পদত্যাগের দাবি করছে শিক্ষার্থীরা।

১. ক্যাম্পাসে মধ্যরাতে বহিরাগতদের প্রবেশে শিক্ষার্থীরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। এর প্রতিবাদে ৩০ ও ৩১ মার্চের টার্ম ফাইনাল বর্জনসহ সব একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করছে শিক্ষার্থীরা।

২. আন্দোলনরত বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কোনোরকম হয়রানিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না- এই প্রশাসনের মর্মে লিখিত প্রতিশ্রম্নতি দেওয়া।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, 'গতকাল আমাদের আন্দোলনের পর তথাকথিত রাজনৈতিক সংগঠনের কিছু ব্যক্তিবর্গকে ফেসবুকে পোস্ট করে আন্দোলনের উদ্দেশ্য নিয়ে অপপ্রচার চালাতে দেখি। আমরা তাদের এমন বক্তব্যের ধিক্কার জানাই। আমরা সবসময়ই বুয়েটের সংবিধানে থাকা 'বুয়েটে সব রকম ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ'- এই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, সংঘবদ্ধ এবং যে কোনো মূল্যে বুয়েটকে ছাত্ররাজনীতির হাত থেকে মুক্ত রাখতে বদ্ধপরিকর।

'আমরা আবারও সুস্পষ্ট করে বলতে চাই, আমাদের এসব দাবি কেবল কোনো বিশেষ ছাত্র রাজনৈতিক সংগঠনের বিরুদ্ধে নয়; বরং আমরা বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বুয়েটের সংবিধান অনুযায়ী সব রকম ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান করছি।'

সংবাদ সম্মেলন শেষে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে এম এ রশীদ প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ করেন। বেলা সাড়ে ১২টায় কর্মসূচি শেষ করেন। দাবি না মানলে রোববার সকাল থেকে ফের আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।

বুয়েটে ছাত্রলীগের প্রবেশ

অনিয়মতান্ত্রিক: উপাচার্য

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি): বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) চলমান আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন উপাচার্য সত্য প্রসাদ মজুমদার। এ সময় ছাত্রলীগের প্রবেশকে 'অনিয়মতান্ত্রিক' বলেছেন উপাচার্য।

শনিবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন।

বুয়েট উপাচার্য বলেন, গভীররাতে (ক্যাম্পাসে) প্রবেশ করা অবশ্যই অনিয়মতান্ত্রিক কে এসেছে, তাকে আগে চিহ্নিত করতে হবে।?চিহ্নিত না করে তো শাস্তি দেওয়া যাবে না। তার জন্য সময় প্রয়োজন?যদি কোনো নিরাপত্তারক্ষী বহিরাগত ব্যক্তিদের ঢুকতে দিয়ে থাকেন, তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব।?

তিনি জানান, পুরো ঘটনা তদন্ত করতে ৬ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত করে ৮ এপ্রিলের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে কমিটিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ইমতিয়াজকে হল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে, তবে তাকে টার্ম বহিষ্কার করতে হলে নিয়মতান্ত্রিকভাবে শৃঙ্খলা কমিটির সভা ডেকে করতে হবে। সেক্ষেত্রে তদন্ত প্রয়োজন এবং অভিযুক্তকে আত্মপক্ষের সমর্থনও দিতে হবে। তদন্ত প্রতিবেদন ছাড়া শৃঙ্খলা কমিটি ব্যবস্থা নিতে পারে না। আদালতে গিয়েও তা টিকবে না। আমাদের আইন ও নিয়ম অনুযায়ী চলতে হবে।

ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালকের পদত্যাগের দাবি প্রসঙ্গে বুয়েট উপাচার্য বলেন, ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পদত্যাগের বিষয়ে আমরা ভাবছি না। এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, নিয়ম অনুযায়ী সময় মতো হবে। শিক্ষার্থীরা দাবি করতেই পারে, তবে দাবির মুখে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি না।

তবে মধ্যরাতে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের প্রবেশের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে বলে জানান সত্য প্রসাদ মজুমদার। তিনি বলেন, তিনি (নিরাপত্তা কর্মকর্তা) কেন প্রবেশ করতে দিলেন। তার তো প্রবেশ করতে দেওয়া উচিত হয়নি।?

উলেস্নখ্য, ২৮ মার্চ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেনসহ একদল নেতাকর্মী বুয়েটে 'মহড়া' দেন। এ ঘটনায় ক্যাম্পাসে নিরাপত্তার শঙ্কা তুলে পাঁচ দফা দাবি নিয়ে আন্দোলন করছেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের জেরে ২১ ব্যাচের পুরকৌশল বিভাগের ইমতিয়াজ হোসেন রাহিমের (ইমতিয়াজ রাব্বি) হল বাতিল করেছে প্রশাসন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে