মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
ঈদযাত্রায় চাপ নেই বাস কাউন্টারগুলোতে

দশ মিনিটেই বিক্রি শেষ পশ্চিমের ট্রেনের টিকিট

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৯ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
দশ মিনিটেই বিক্রি শেষ পশ্চিমের ট্রেনের টিকিট

ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরুর পঞ্চম দিনে পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেনের টিকিটের চাহিদা আরও বেড়েছে।

বৃহস্পতিবার ঈদযাত্রার ট্রেনের টিকিট বিক্রির জন্য উন্মুক্ত করার প্রথম ১০ মিনিটের মধ্যেই বিক্রি শেষ হয়ে যায় পশ্চিমাঞ্চলের সব টিকিট। এদিন দুপুর ২টায় পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন রুটের ট্রেনের টিকিটও বিক্রি হয়। তবে সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১০ ঘণ্টায় সারাদেশে ৪৪ হাজার ৯৫২টি টিকিট বিক্রি হয়েছে বলে রেলওয়ে সূত্র নিশ্চিত করেছে।

এদিকে, অনলাইনে টিকিট বিক্রি হওয়ায় এবার রাজধানীর বাস কাউন্টারগুলোতে অগ্রিম টিকিটের জন্য যাত্রীদের তেমন চাপ নেই। বৃহস্পতিবার দূরপালস্নার বিভিন্ন বাস কাউন্টার ঘুরে যাত্রীদের ভিড় বা সারি দেখা যায়নি। অন্যদিকে, মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও বিআইডবিস্নউটিএ সূত্রে জানা গেছে, এবারের ঈদযাত্রায় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে যাত্রী ও যানবাহন পারাপারের জন্য ১৫ ফেরি এবং ২০ লঞ্চ চলাচল করবে। তবে ঈদের আগে এবং পরে মিলিয়ে ছয় দিন অপচনশীল পণ্যবাহী কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারবে না।

বাংলাদেশ রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা

জানিয়েছেন, চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে ১০, ১১ ও ১২ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি করা হবে। তবে আগামী ১১ এপ্রিল সম্ভাব্য ঈদের দিন ধরে নিয়ে ঈদযাত্রার সূচি সাজারো হয়েছে। সে অনুযায়ী গত রোববার ৩ এপ্রিল ট্রেনযাত্রার টিকিট অনলাইনে উন্মুক্ত করা হয়। আগামী ৩০ মার্চ পর্যন্ত টিকিট বিক্রি চলবে, সেদিন বিক্রি হবে ৯ এপ্রিলের টিকিট।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টিকিট বিক্রি শুরুর প্রথম দিন রোববার টিকিটের চাহিদা কিছুটা কম ছিল। দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে টিকিটের চাহিদা বাড়ে। সোমবার, মঙ্গলবার এবং বুধবার টিকিট বিক্রি হয়ে যায় আধা ঘণ্টার আগে। আর বৃহস্পতিবার টিকিট বিক্রি শুরুর প্রথম পাঁচ মিনিটেই কয়েকটি ট্রেনের টিকিট বিক্রি শেষ। ১০ মিনিট পর ওয়েবসাইট বা অ্যাপে ঢুকে কোনো টিকিট পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, সকাল ৮টায় অনলাইনে টিকিট বিক্রি শুরুর আগে রাজশাহী স্টেশনের জন্য ধূমকেতু এক্সপ্রেসে ৩৫৪টি, পদ্মা, বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনে ৬৩৬টি, সিল্কিসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনে ২৮৮টি, মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেনে ৭০টি এবং পদ্মা এক্সপ্রেস ট্রেনের ৬৬০টি আসন ছিল। ৮টা ৫ মিনিটের মধ্যে এসব ট্রেনের সব টিকিট বিক্রি হয়ে যায়।

দিনাজপুর স্টেশনের জন্য থাকা সব টিকিট সকাল ৮টা ৬ মিনিটের মধ্যে বিক্রি হয়ে যায়। বিক্রি শুরুর আগে এই স্টেশনের জন্য একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের ১৩১টি, দ্রম্নতযান এক্সপ্রেস ট্রেনের ১৬২টি, পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেনের ২১৪টি আসন ছিল।

পার্বতীপুর স্টেশনের জন্য নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনের ৯০টি, একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের ১০৩টি, চিলাহাটি এক্সপ্রেস ট্রেনের ১৫৮টি, দ্রম্নতযান এক্সপ্রেস ট্রেনের ৯৫টি কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ট্রেনের ৭৭টি, পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেনের ১৪২টি টিকিট ছিল বিক্রি শুরুর আগে। বিক্রি শুরুর প্রথম ১০ মিনিটের মধ্যে এসব ট্রেনের সব টিকিট বিক্রি হয়ে যায়।

রংপুর স্টেশনের জন্য রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের ১১২টি এবং কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ট্রেনের ১১৪টি টিকিট ছিল। সকাল ৮টা ৮ মিনিটের মধ্যে টিকিটগুলো বিক্রি হয়ে যায়। ওই সময় পর্যন্ত ওই দুটি ট্রেনের অন্যান্য স্টেশনের জন্য বরাদ্দ টিকিটও আর বাকি ছিল না।

খুলনা স্টেশনের জন্য সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনের ১০৬টি এবং চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেনের ১৮২টি টিকিট ছিল। বিক্রি শুরুর পর সকাল ৮টা ১০ মিনিটের মধ্যে সবগুলো টিকিট বিক্রি হয়ে যায়।

দেখা গেছে, পশ্চিমাঞ্চলের অন্যান্য রুটের ট্রেনগুলোর টিকিটও এই সময়ের মধ্যেই বিক্রি হয়ে গেছে।

গত ১৩ মার্চ রেল ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে রেলওয়ের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সরদার সাহাদাত আলী অগ্রিম টিকিট বিক্রির সূচি প্রকাশ করেন। রেলপথ মন্ত্রী মো. জিলস্নুল হাকিমও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, আজ শুক্রবার পাওয়া যাবে ৮ এপ্রিলের ঈদযাত্রার টিকিট আর শনিবার ৯ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি হবে। ফিরতি যাত্রার অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হবে ৩ এপ্রিল। ৯ এপ্রিল পর্যন্ত ফিরতি যাত্রার অগ্রিম টিকিট মিলবে। এবারও ঈদযাত্রায় অনলাইন পস্ন্যাটফর্ম থেকে শতভাগ টিকিট বিক্রি হচ্ছে। তবে ২৫ ভাগ টিকিট যাত্রার দিন কাউন্টার থেকে কেনা যাবে। এবার ঈদের আগে সারাদেশের বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী আন্তঃনগর ট্রেনের ৩৩ হাজার ৫০০টি টিকিট বিক্রি হবে। আর ঈদ উপলক্ষে আট জোড়া বিশেষ ট্রেন চালানো হবে।

এদিকে, বৃহস্পতিবার রাজধানীর মহাখালী, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, গাবতলী ও কলাবাগান বাসস্ট্যান্ড গিয়ে কাউন্টারগুলোয় যাত্রীদের ভিড় বা সারি দেখা যায়নি। পরিবহণ কোম্পানির কর্মীরা বলছেন, যারা বাসের অগ্রিম টিকিট সংগ্রহ করছেন তারা মূলত অনলাইন থেকেই কিনছেন। টিকিট প্রত্যাশীরা কাউন্টারে এসে এখনো সেভাবে টিকিট সংগ্রহ করছেন না।

কলাবাগানে গ্রিন লাইন পরিবহণের টিকিট বিক্রয়কর্মী এমরান হোসেন জানান, দ্বিতীয় রমজান থেকে তাদের টিকিট বিক্রি শুরু হয়। দুই দিন আগেই অগ্রিম টিকিট বিক্রি শেষ হয়ে গেছে। ঈদযাত্রার অংশ হিসেবে ৪ থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত সব টিকিট বিক্রি শেষ। বেশিরভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রি হয়েছে।

শ্যামলী এনআর পরিবহণের কাউন্টারে গিয়ে কোনো যাত্রীর দেখা মেলেনি। দু'জন টিকিট বিক্রয়কর্মী নিজেদের দাপ্তরিক কাজ করছিলেন। কাউন্টার ব্যবস্থাপক রিয়াজ হোসেন বলেন, 'সকাল থেকে একটিও অগ্রিম টিকিট বিক্রি করিনি। অনলাইনে কিছু টিকিট বিক্রি হয়েছে। বুধবার কাউন্টার থেকে তিনটি টিকিট বিক্রি হয়েছে।'

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মহাখালী বাস টার্মিনালে গিয়ে কাউন্টারগুলোয় একই দৃশ্য দেখা যায়। কিছু কাউন্টারে দিনের যাত্রার (রানিং গাড়ি) যাত্রী বসে ছিলেন। কিন্তু কাউকে অগ্রিম টিকিট সংগ্রহের জন্য আসতে দেখা যায়নি।

সায়েদাবাদে হানিফ পরিবহণের ঢাকা-চট্টগ্রাম গন্তব্যের কাউন্টার মাস্টার জাহাঙ্গীর আকিব বলেন, '৩৬ বছর আছি এই পেশায়। তবে এবারের মতো এমন অবস্থা দেখিনি। আগের কোনোবারই ঈদের অগ্রিম টিকিটের জন্য এত কম ভিড় থাকতে দেখিনি।'

তবে ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রি শেষ হয়ে গেলে বাসের টিকিটের জন্য চাপ বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।

লন্ডন এক্সপ্রেসের কাউন্টার ম্যানেজার আরিফ খান বলেন, 'অনলাইনে সহজ ডটকম, বাস বিডি ও আমাদের অনলাইন অ্যাপ লন্ডন এক্সপ্রেস ডটকমে টিকিট পাওয়া যাচ্ছে। যারা অগ্রিম টিকিট সংগ্রহ করতে চাইছেন তারা অনলাইন থেকেই কিনছেন। বেলা ১১টার দিকে ঢাকা-সিলেট গন্তব্যের ৭ এপ্রিলের ৪টি অগ্রিম টিকিটের ৩টি অনলাইন থেকে বিক্রি হয়েছে।'

অন্যদিকে, এবারের ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ঈদের আগে ও পরে মোট ৬ দিন জরুরি ও পচনশীল ব্যতীত পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া যাত্রীদের সুবিধার্থে ১৫টি ছোট-বড় ফেরি ও ২০টি লঞ্চ চলাচল করবে। মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসনের সমন্বয় সভা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খানের সভাপতিত্বে ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোছা. মোরশেদা খাতুনের সঞ্চালনায় সমন্বয় সভায় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. ইফতেখারুজ্জামান, গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র, গোয়ালন্দঘাট থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রাণবন্দু চন্দ্র বিশ্বাস, বিআইডবিস্নউটিসি দৌলতদিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মো. সালাহউদ্দিন, বিআইডবিস্নউটিএর আরিচা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক এসএম সাজ্জাদুর রহমান, দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান, রাজবাড়ী জেলা সড়ক পরিবহণ মালিক গ্রম্নপের প্রতিনিধি, সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতিনিধি ও গণমাধ্যমকর্মীরা।

জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান বলেন, 'জরুরি সেবা ব্যতীত সব পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ঈদের আগে ও পরে ৬ দিন ফেরি দিয়ে পারাপার বন্ধ থাকবে। রাতে সব ধরনের বালুবাহী বাল্কহেড চলাচল বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া ৬ এপ্রিল থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত সার্বক্ষণিক বালুবাহী বাল্কহেড চলাচল বন্ধ থাকবে। ঈদযাত্রায় ১৫টি ফেরি ও ২০টি লঞ্চ চলাচল করবে। ঘাট এলাকায় বাসের ভাড়ার মূল্য তালিকার চার্ট টানিয়ে দিতে হবে। যাত্রীদের সুবিধার্থে ঘাট এলাকায় সার্বক্ষণিক নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার থাকবে। ঘাট এলাকায় সার্বক্ষণিক আলোকসজ্জার ব্যবস্থা থাকবে। ঘাট এলাকায় চাঁদাবাজি বন্ধে আমাদের জিরো টলারেন্স।'

বিআইডবিস্নউটিএ ও বিআইডবিস্নউটিসি কর্মকর্তারা জানান, আসন্ন ঈদে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার নির্বিঘ্ন করতে দুটি ফেরি বাড়িয়ে ১৫টি এবং তিনটি লঞ্চ বাড়িয়ে ২০টি করা হয়েছে। যার প্রায় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। দৌলতদিয়া প্রান্তে তিনটি ঘাট সচল থাকবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে