বিএনপি নেতারা যদি বাসায় গিয়ে স্ত্রীদের ভারতীয় শাড়ি পুড়িয়ে ফেলেন, তাহলেই তাদের ভারতীয় পণ্য বর্জনের বিষয়টি 'বিশ্বাস হবে' হবে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
যে বিএনপি নেতারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছেন, তাদের স্ত্রীদের কয়খানা ভারতীয় শাড়ি আছে এবং সেগুলো কেন পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না, সে প্রশ্ন তুলে শেখ হাসিনা বলেন, 'আমি এখন বলব আমাদের এই বিএনপি নেতাদের, যারা যারা ভারতীয় পণ্য বর্জন করবেন, সবাই বাড়িতে গিয়ে তাদের বউরা যেন কোনোমতে কোনো ভারতীয় শাড়ি না পরেন। তাদের আলমারিতে যে কয়টা শাড়ি আছে, সব এনে যেদিন ওই অফিসের সামনে পোড়াবেন, সেই দিন বিশ্বাস করব যে আপনারা সত্যিকার ভারতীয় পণ্য বর্জন করলেন।'
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বুধবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'মসলাপাতি, আদা যা কিছু আসছে, তাদের কারও পাকের ঘরে যেন এই ভারতীয় মসলা না দেখা যায়। তাদের রান্না করে খেতে হবে এইসব মসলাবিহীন। কাজেই এটা তারা খেতে পারবেন কি না, সেই জবাবটা তাদের দিতে হবে।'
একাত্তরে ২৫ মার্চের রাতে বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান সেই 'আক্রমণকারীদের একজন' ছিলেন বলে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, 'পাকিস্তান হানাদার বাহিনী যখন এখানে (ঢাকায়) গণহত্যা শুরু করে, তারা কিন্তু চট্টগ্রামেও হত্যাকান্ড শুরু করেছিল। যারা জাতির পিতা আহ্বানে সাড়া দিয়ে ব্যারিকেড দিচ্ছিল, তাদের ওপর গুলি চালিয়েছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। চট্টগ্রামের সেনাবাহিনীর দায়িত্বে ছিল জিয়াউর রহমান। সেই সময় যারা ব্যারিকেড দিয়েছে, জিয়াউর রহমানও তাদের ওপর গুলি চালিয়েছে। শুধু তাই নয়, সোয়াত জাহাজ এসেছে পাকিস্তান থেকে অস্ত্র নিয়ে, সেই অস্ত্র খালাস করতে গিয়েছিল জিয়াউর রহমান। ২৫ মার্চে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী যে আক্রমণ চালায়, সেই আক্রমণকারী একজন কিন্তু জিয়াউর রহমান।'
সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান যে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে বেতনভুক্ত কর্মচারী ছিলেন, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে বলেন, 'আজকের যে দলটি বড় বড় কথা বলে যে, ২৫ মার্চ আওয়ামী লীগের সবাই পালিয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে যুদ্ধ পরিচালনা করল, শুধু যুদ্ধ পরিচালনা নয়, সশস্ত্র বাহিনীর গড়ে তোলা হয়। বিভিন্ন সেক্টরে বাংলাদেশকে ভাগ করা হয়। এক একটা সেক্টরের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেক্টর যিনি দায়িত্ব ছিলেন, তিনি আহত হওয়ার পর জিয়াউর রহমান দায়িত্ব পায়, জিয়াউর রহমান একটা বেতনভুক্ত কর্মচারী হিসেবে কাজ করেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে বেতনভুক্ত কর্মচারী ছিল জিয়াউর রহমান। এই কথা নিশ্চয়ই
তাদের ভুলে গেলে চলবে না। এটাও ভুললে চলবে না যে, স্বাধীনতার পর জিয়াউর রহমান ছিলেন একজন মেজর।'
শেখ হাসিনা বলেন, 'জিয়াউর রহমানের জন্ম কলকাতায়। ভারত-পাকিস্তানের বিভক্ত হয়, তখন তারা কিন্তু পূর্ব বাংলায় আসেনি, তারা করাচিতে গিয়েছিল। জিয়াউর রহমান সেখানে পড়াশোনা করে। সেখানেই আর্মিতে যোগ দেয়। সেখান থেকে কার্যাদেশ করে সামরিক অফিসার হিসেবে পূর্ব বাংলায় এসেছিল দায়িত্ব পালন করতে। এটাই হলো বাস্তবতা। কিন্তু তার মনে তো পাকিস্তানটাই রয়ে গেছে। তার প্রমাণও আছে। স্বাধীনতার পর জিয়াউর রহমান মেজর থেকে মেজর জেনারেল হলো, এই প্রমোশনগুলা একে একে কে দিয়েছে? এটাও তো আওয়ামী লীগ সরকার দিয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব দিয়েছে। এই অকৃতজ্ঞরা সেটাও ভুলে যায়।'
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ৫৩ বছরের মধ্যে যে ২৯ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতার বাইরে ছিল, সেই সময়টাকে 'জাতির দুর্ভাগ্যের বছর' হিসেবে বর্ণনা করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, 'এই দেশটি পরাধীন, এ দেশের মানুষ ছিল শোষিত বঞ্চিত। সেই জাতিকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্ভুদ্ধ করে, মুক্তিযুদ্ধ করে, স্বাধীনতার বিজয় এনে দেওয়া একমাত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দানকারীর জন্য সম্ভব। ১৫ আগস্টে জাতির পিতাকে হত্যা করার পর এ দেশে ইতিহাস বিকৃতির পালা দেখেছি।'
বিএনপি নেতা 'মঈন খানের বাবার কারণে' স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে দেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল বলেও মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'স্বাধীনতা পর ৭৪ সালে যে দুর্ভিক্ষ হয়, তখন খাদ্য সচিব ছিল মঈন খানের বাবা মোমিন খান। সে ছিল খাদ্য সচিব। জাহাজ ফিরিয়ে দিয়ে খাবার আসতে দেয়নি বাংলাদেশে, দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। দুর্ভিক্ষ কিন্তু বাংলাদেশে ছিল। আমি ৮১ সালে দেশে আসি সারা বাংলাদেশ ঘুরি, তখন প্রতিবছর দুর্ভিক্ষ লেগে থাকত। বাংলাদেশের মানুষের জীবনে পরিবর্তন তারা করতে পারেনি। কারণ তারা আমাদের বিজয় নস্যাৎ করতে চেয়েছিল।'
শেখ হাসিনা বলেন, 'বাংলাদেশকে তারা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিল। এটাই তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল। যার কারণে জাতির পিতাকে হত্যা করল। এরপর ৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতা হত্যা করল, আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে তাদের ওপর নির্যাতন করা হয়। এরপর দল গঠন। আজকে রাজনৈতিক দল করে অনেক বড় বড় কথা বলে।'
সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোশাররফ হোসেন, আব্দুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক রোকেয়া সুলতানা, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজীর আহমেদ প্রমুখ।