মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
স্বাগত মাহে রমজান

আলস্নাহ অহংকারীকে পছন্দ করেন না

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৭ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
আলস্নাহ অহংকারীকে পছন্দ করেন না

রোজা মানুষের সব অহমিকা পুড়িয়ে তাকে নিরহংকারী ও বিনয়ী করে তোলে। মুমিনের জান্নাতে প্রবেশের পথ সুগম ও প্রশস্ত করে দেয়। আলস্নাহর নৈকট্য লাভের সুযোগ সৃষ্টি করে। কেননা মহা পরাক্রমশালিী সৃষ্টিকর্তা দম্ভকারীদের পছন্দ করেন না।

হাদিসে এসেছে, 'যার অন্তরে অণু পরিমাণ অহংকার থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।' এ প্রসঙ্গে আলস্নাহ্‌ রাব্বুল আলামীন বলেন, 'সুতরাং, তোমরা দ্বারগুলো দিয়ে জাহান্নামে প্রবেশ কর, সেখানে স্থায়ী হবার জন্যে; দেখ অহংকারীদের আবাসস্থল কত নিকৃষ্ট।' (সূরা নাহল; ১৬:২৯)

এতেই প্রমাণিত হয়, অহংকার মানুষকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায় এবং জান্নাতে যাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। রাসুল (সা.) অহংকার সম্পর্কে বলেছেন, সত্য প্রত্যাখ্যান করা বা তা গ্রহণ না করাই হলো অহংকার বা দাম্ভিকতা। তাই মহান আলস্নাহ্‌ রাব্বুল আলামীন কোরআন আল কারিমে প্রিয় নবী (সা.) এর মাধ্যমে যে সত্য আমাদের কাছে পাঠিয়েছেন তা বিনয়ের সঙ্গে গ্রহণ করা এবং মেনে চলা আমাদের জন্য ফরজ। আর যারাই কিনা অহংবোধ আর দাম্ভিকতার কারণে আলস্নাহ্‌ এবং তার রাসুল (সা.) এর বাণী ও বিধানে বিশ্বাস স্থাপনে অপারগতা প্রকাশ করে এবং তা মেনে চলতে অনীহা প্রকাশ করে তারাই হলো কাফির বা অবিশ্বাসী। তাদের ঠিকানা হলো জাহান্নাম, যেখানে তারা অনন্তকাল থাকবে। কারণ নবী-রাসুলদের মাধ্যমে তাদের কাছে যখন সুস্পষ্ট

প্রমাণসহ সত্য (কোরআন ও আসমানি কিতাবসমূহ) পাঠানো হয়েছিল, তারা তা প্রত্যাখ্যান করেছিল; অহংবোধ ও দাম্ভিকতা তাদেরকে সত্য গ্রহণ করা থেকে বিরত রেখেছিল। কোরআন আল কারিমে আলস্নাহ্‌? রাব্বুল আলামিন বলেন, 'যখন তার নিকট আমার আয়াতসমূহ আবৃত্তি করা হয়, তখন সে দম্ভভরে মুখ ফিরিয়ে নেয়, যেন সে এটা শুনতেই পায়নি, যেন তার কর্ণ দুটি বধির। অতএব, তাকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দিয়ে দাও।' (সুরা লোকমান; ৩১:৭)

'যারা নিজেদের নিকট কোন দলীল না থাকলেও আলস্নাহ্‌র নিদর্শন সম্পর্কে বিতর্কে লিপ্ত হয়, তাদের আছে শুধু অহংকার, যা সফল হবার নয়। অতএব, আলস্নাহ্‌?র শরণাপন্ন হও; তিনি তো সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।' (সুরা আল-মু'মিন; ৪০:৫৬)

অপর এক আয়াতে আলস্নাহ্‌? রাব্বুল আলামীন বলেন, 'ভূ-পৃষ্ঠে দম্ভভরে বিচরণ করো না। তুমি তো কখনোই পদাভরে ভূ-পৃষ্ঠকে বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং উচ্চতায় তুমি কখনোই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না।' (সুরা বানী ইসরাইল, ১৭:৩৭)

তবে যাদের ঔদ্ধত্য এবং অহংবোধ তাদেরকে পরিপূর্ণভাবে সত্য গ্রহণ করা থেকে বিরত রাখে অর্থাৎ যারা মতের অমিলের কারণে বা খেয়াল-খুশিমতো সত্য আংশিকভাবে মেনে চলে এবং আংশিক মেনে চলা থেকে বিরত থাকে তারা কাফির নয়। যদিও তাদের দাম্ভিকতার জন্যও রয়েছে যথোপযুক্ত শাস্তি। আর এ কারণেই আলেমরা এই ব্যাপারে একমত যে, যখন কেউ আলস্নাহ্‌?র রাসুল (সা.) এর সুন্নাহ্‌? সম্পর্কে অবগত হয় তখন তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া তার পক্ষে সমীচীন নয়; ঠিক তেমনি সমীচীন নয় তার ওপরে অন্য কারোর কথা বা কাজকে প্রাধান্য দেওয়া সে যেই হোক না কেন-যত প্রভাবশালী ব্যক্তিই হোক না কেন। তাই প্রকৃত জ্ঞান অন্বেষণকারীদের কর্তব্য হলো অন্য কারও কথার আগে আলস্নাহ্‌? এবং তার রাসুলের (সা.) কথাকে নিরঙ্কুশ প্রাধান্য দেওয়া; তারা কি বুঝাতে চেয়েছেন তা গভীরভাবে অনুভবের ও অনুসন্ধানের চেষ্টা করা এবং তার ওপর ভিত্তি করে চিন্তাভাবনা করা, মতামত প্রদান করা ও জ্ঞান চর্চায় অগ্রসর হওয়া। কেউ এই স্বতঃসিদ্ধ নিয়ম মেনে সত্য উদ্ঘাটনে অগ্রসর হলে তার জন্য রয়েছে কল্যাণ আর সফলতা। আর তা করতে গিয়ে কোনো ভুলত্রম্নটি হয়ে থাকলে তার ক্ষমা রয়েছে?।

অন্যদিকে মানুষকে হেয় প্রতিপন্ন করার ব্যাপারেও কোরআন মজিদে কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এই অহংকারের ব্যাপারে কোরআন আল কারিমে আলস্নাহ্‌? রাব্বুল 'আলামিন বলেন, '(অহংকারবশে) তুমি মানুষ হতে মুখ ফিরিয়ে নিও না এবং পৃথিবীতে ঔদ্ধতভাবে বিচরণ করো না; কারণ আলস্নাহ্‌? কোনো ঔদ্ধত, অহংকারীকে পছন্দ করেন না।' (সুরা লোকমান, ৩১:১৮)

সহিহ্‌? মুসলিমে বর্ণিত এক হাদিসে প্রিয় নবী মুহম্মদ (সা.) বলেছেন, 'একজন মুসলিমের জন্য এটা অনেক বড় গুনাহের কাজ যদি সে তার অপর এক মুসলিম ভাইকে অশ্রদ্ধা কিংবা অবজ্ঞার চোখে দেখে।' (সহিহ্‌? মুসলিম; অধ্যায় : ৩২, হাদিস নম্বর : ৬২১৯)

হাদিসে কুদসিতে বর্ণিত আছে, রাসুলুলস্নাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, আলস্নাহ তাআলা বলেছেন, 'অহংকার আমার পরিচ্ছদ, এই পোশাক যে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে চেষ্টা করে, তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব।' (মুসলিম)।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে