চলছে পবিত্র রমজান মাস। সৈকতে নেই পর্যটকের চাপ। সাগরপাড়ের বালিয়াড়িতে সারি সারি বসানো কিটকট চেয়ারগুলো তপ্ত রোদে খালি পড়ে আছে। হাতে কাজ না থাকায় ক্যামেরাম্যানরা অনেকটা অলস ভঙ্গিমায় ছায়ায় ঘুমিয়ে সময় পার করছেন। যেন সুনসান নিরবতা বিরাজ করছে সাগরপাড়ে। অথচ পর্যটন নগরী কক্সবাজারে বছরজুড়েই ভ্রমণপিপাসুদের আনাগোনায় সরব থাকলেও পবিত্র রোজার মাসে এখন পর্যটক শূন্য সৈকত। নেই কোনো মানুষের কোলাহল। শহরে পর্যটন জোন কলাতলীর হোটেল-মোটেল রেস্টুরেন্ট ও কটেজগুলোতে প্রায় বুকিং শূন্য। ভোক্তা না থাকায় বহু হোটেল ও রেস্টুরেন্ট বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে এই রোজার মাসেও পর্যটকদের জন্য বিশেষ
সুবিধার্থে হোটেল-গেস্টহাউস রিসোর্টগুলো সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বিশেষ ছাড় ঘোষণা করছেন হোটেল- মোটেল মালিকপক্ষ।
পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানিয়েছে, রোজার কারণে পর্যটক কমতে শুরু করেছে। এখন সবকটি হোটেল-মোটেল মিলিয়ে দুই-তিন হাজারের মতো পর্যটক আছেন। শুধু হোটেল-রেস্টুরেন্ট নয়, রমজানের কারণে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসাগুলোও বন্ধ রয়েছে। বিশেষ করে সৈকত এলাকার ঝিনুক, আচার, মাছ ফ্রাই এবং কাপড়ের দোকানগুলো প্রায় বন্ধ রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে ঈদকে সামনে রেখে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সাজসজ্জার সময় হিসেবে নিয়েছেন মালিকরা।
সরেজমিন মঙ্গলবার দুপুওে সৈকতের সুগন্ধা, সিগ্যাল ও লাবণী পয়েন্টেও গিয়ে দেখা যায়, তীব্র গরমে সৈকত খাঁ খাঁ করছে। বালুচরে নেই পর্যটকের ভিড়, পর্যটক না থাকায় কিটকট চেয়ারগুলো খালি পড়ে রয়েছে। সৈকতে নামার মুখের শামুক ঝিনুকের দোকানপাটগুলো বন্ধ। রমজান মাসে অনেকটায় জনশূন্য সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। চারদিক যেন সুনসান নীরবতা। ঘোড়াওয়ালা, বাইকওয়ালা, লাইফগার্ড ও চিত্রগ্রাহকরা অলস সময় পার করছেন। কক্সবাজারে ৫ শতাধিক হোটেল-মোটেল ও ৪ শতাধিক রেস্তোঁরা রয়েছে। পর্যটক কমে যাওয়ায় কখনো ৮০ শতাংশ, কখনো ৯০ শতাংশ হোটেলেরই কক্ষ খালি যাচ্ছে এখন। ফলে ৬০ শতাংশ বিশেষ ছাড় দিয়েছে হোটেল-মালিক পক্ষ।
লাইফ গার্ডের কর্মী ওসমান গণি বলেন, রমজানের আগে আগে সৈকতে লাখো মানুষের সমাগম হয়েছিল। এখন পর্যটক নেই, নামমাত্র কিছু পর্যটক আসে। পর্যটক না থাকায় আমাদের ব্যবসা খুবই খারাপ যাচ্ছে। তারপরও আমরা নিয়মিত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। বিচ বাইক চালক রিয়াদ বলেন, রমজান পর্যটক খুবই কম। লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্ট সব মিলিয়ে কয়েকশ পর্যটক দেখা যাচ্ছে।
ঘোড়াওয়ালা আবদুল পারভেজ বলেন, রমজানে পর্যটক না থাকায় ঠিকমতো ঘোড়াকে খাবার দিতে খুবই কষ্ট হয়। আমাদের ব্যবসাও খারাপ। বিচ বাইক চালক মামুন বলেন, রমজান পর্যটক খুবই কম। সব মিলিয়ে হাজারের মতো পর্যটক দেখা যায়। সৈকতের ফটোগ্রাফার আবদুল মাবুদ বলেন, পর্যটকের চাইতে স্থানীয়রা বেশি সৈকতে ঘুরতে আসে। এখন পর্যন্ত ৭শ টাকা আয় করতে পেরেছি। আবার মাঝেমধ্যে একদম হয় না।
হোটেল সীগালের ম্যানেজার নুর মোহাম্মদ বলেন, হাতেগোনা কিছু পর্যটক আছে। ৬০ শতাংশ ছাড় দিয়েও পর্যটক পাওয়া যাচ্ছে না। হোটেল কক্সটুডের ব্যবস্থাপক আবু তালেব শাহ বলেন, কক্সবাজারে পাঁচ শতাধিক হোটেল, রিসোর্ট, গেস্টহাউস ও কটেজে সব মিলিয়ে একশো থেকে দুশো পর্যটক রয়েছে। চেষ্টা করছি সবাইকে সেবা দিতে। তবে ঈদের দিন থেকে আবারও কক্সবাজার তার পর্যটন রূপ ফিরে পাবে বলে বিশ্বাস তাদের।
কক্সবাজার হোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, রমজানে খুবই অল্পসংখ্যক পর্যটক কক্সবাজার ভ্রমণে আসেন। বিষয়টি বিবেচনায় রেখে হোটেল-মোটেল কক্ষে বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়েছে। এখন কক্সবাজারে হাতেগোনা কিছু পর্যটক রয়েছে। তাছাড়া অন্যান্য বছরের মতো এবারের রমজানে বেশিরভাগ রেস্তোরাঁ বন্ধ রাখা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এসব কর্মচারীর এক মাসের বেতন-বোনাস অগ্রিম দিয়ে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। পুরো রমজান মাসে পর্যটক টানতে হোটেল গেস্ট হাউস ও রিসোর্টগুলোর কক্ষভাড়ার বিপরীতে সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ বিশেষ ছাড় ঘোষণা করা হয়েছে। আশা করছি, আগামী ঈদের ছুটিতে বিপুলসংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটবে কক্সবাজারে।
খুলনা থেকে আসা পর্যটক রুমানা পারভিন ও ইসমাত উলস্নাহ বলেন, রমজানে পরিবার নিয়ে কক্সবাজার আসলাম। ভিন্ন পরিবেশ খুবই ভালো লাগছে। একদম সাগরের আসল সৌন্দর্যটা উপভোগ করতে পারছি। একদম নিরিবিলিতে সৈকতে যেভাবে আপন করে পেতে চাই, সেভাবেই পাচ্ছি। দেখলাম হোটেলগুলোতে বিশেষ ছাড় দিয়েছে। সিলেটের পর্যটক মফিজুর রহমান বলেন, অসম্ভব ভালো লাগছে। কক্সবাজারে এখন মানুষের চাপ না থাকায় সমুদ্রে নোনা জলে দীর্ঘক্ষণ স্নান করেছি। সৈকতে হাতেগোনা মানুষজন দেখা রয়েছে। তবে কিছু রেস্টুরেন্টগুলো বন্ধ, কিছু খোলা রয়েছে, তাই খাওয়াদাওয়া করতে সমস্যা নাই। দামও কম লাগছে।
টুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিওনের অধিনায়ক আপেল মাহমুদ বলেন, এখন রমজান মাস অফ সিজন, তাই পর্যটক কম। কক্সবাজার পর্যটক স্পটগুলোতেও কোনো পর্যটক নেই। তারপরও আমরা নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছি।