মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
প্রসঙ্গ ভারতনীতি ও উপজেলা নির্বাচন

রণকৌশল ঠিক করতে আরও সময় নেবে বিএনপি

হাসান মোলস্না
  ২৭ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
রণকৌশল ঠিক করতে আরও সময় নেবে বিএনপি

দলীয়ভাবে ভারতীয় পণ্য বর্জনের আন্দোলনের সঙ্গে যেমন যুক্ত হতে চায় না, তেমনি উপজেলা নির্বাচনেও অংশ নিতে চায় না বিএনপি। তবে দুটি ইসু্যতে কৌশলী অবস্থানে থেকে রাজনৈতিক সুবিধা আদায় করতে চায় দলটি।

এই ইসু্যতে দলের অবস্থান ঠিক করতে সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম বৈঠক করেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। তবে গত সোমবার রাতে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নেতারা নিজেদের মতামত দিয়েছেন। অধিকাংশ নেতাদেরই মত হচ্ছে, ভারতীয় পণ্য বর্জনের আন্দোলনের সঙ্গে বিএনপির দলগতভাবে যুক্ত হওয়া ঠিক হবে না। পাশাপাশি দলগতভাবে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়া যেমন ঠিক হবে না, তেমনি কেউ নিজ উদ্যোগে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাইলে তাকে বাধা দেওয়া উচিত হবে না।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ভারতীয় পণ্য বর্জন নিয়ে গত কয়েকদিন রাজনৈতিক অঙ্গনে যে তর্কবিতর্ক চলছে, সেই পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে বিএনপির কৌশল কী হবে, সে বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। স্থায়ী কমিটির সদস্যরা মনে করেন, জনগণ তাদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ থেকে ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে। কিন্তু দল হিসেবে বিএনপি সরাসরি এই আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হলে এতে রাজনৈতিক 'রং' লেগে যাবে। ফলে সামাজিক যে আন্দোলন গড়ে উঠছে, তা সঠিক পথে থাকবে না। বাংলাদেশের নির্বাচন ও রাজনৈতিক নানা প্রেক্ষাপট নিয়ে ভারতের বিষয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের এক ধরনের ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে আগের চেয়ে অনেক বেশি ভারতবিরোধী মনোভাব দেখা যাচ্ছে। বৈঠকে এই বিষয়টিও উঠে আসে। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিচার বিশ্লেষণ করে বিএনপির ভারতবিরোধিতার একটি কৌশল ঠিক করা উচিত বলে পরামর্শ দেন স্থ্থায়ী কমিটির একজন নেতা।

বৈঠক সূত্র আরও জানায়, সামগ্রিকভাবে ভারতের বিষয়ে বিএনপির বক্তব্য কী হবে, কোন কৌশলে তারা এগুবেন, তা নিয়ে আরও আলোচনা হবে। আগামী কয়েকটি বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনার পর বিএনপি তাদের অবস্থান পরিষ্কার করতে পারে। বৈঠকের বিষয়ে স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা হলেও তারা কেউ নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। গত ২০ মার্চ সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ভারতীয় পণ্য বর্জনের আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন। সেদিন রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নিজের ব্যবহার করা ভারতীয় চাদর ছুঁড়ে ফেলে দিলে নেতাকর্মীরা এতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপর বিএনপির ভারতবিরোধিতার বিষয়টি বেশ আলোচনায় আসে। রিজভীর পর বিএনপির আরও কয়েকজন নেতাও ভারতীয় পণ্য বর্জনের বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে সোমবারের বৈঠকে অনির্ধারিত এই আলোচনা তোলেন স্থায়ী কমিটির একজন প্রভাবশালী সদস্য। বৈঠকে রিজভীর ভারতবিরোধী বক্তব্যের বিষয়ে কেউ সরাসরি বিরোধিতা করেননি। তবে দায়িত্বশীল পদে থেকে তিনি পণ্য বর্জনের ডাক দিয়ে যেভাবে চাদর ছুঁড়ে ফেলে প্রতিবাদ জানিয়েছেন, তা শোভনীয় ছিল না বলে মনে করেন তারা। দলের অন্যতম মুখপাত্র রিজভীর এই বক্তব্য দলীয় কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। এ সময় দলের শীর্ষ নেতৃত্ব বলেন, এ বিষয়ে রিজভী পরবর্তীতে গণমাধ্যমে জানিয়েছে, তিনি তার ব্যক্তিগত বিবেচনাবোধ থেকে চাদর ছুঁড়ে ফেলেছেন। বৈঠক সূত্র জানায়, স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, বিএনপিকে অবশ্যই ভারতের কর্মকান্ডের সমালোচনায় সোচ্চার থাকতে হবে। কিন্তু সেটার কৌশল কী হবে, তা আগে ঠিক করতে হবে। কমিটির আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য বলেন, বিএনপি সরকারবিরোধী একটি বড় আন্দোলন করেছে। এখন তার মূল্যায়ন হওয়া উচিত। আন্দোলন ও এর পরবর্তী প্রেক্ষাপট বিচার-বিশ্লেষণ করে কৌশল ঠিক করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। বৈঠকে কমিটির আরেকজন নেতা বলেন, দেশের জনগণ যদি ভারতীয় পণ্য বর্জন করে, তাহলে দল হিসেবে বিএনপির কিছু করার নেই। জনগণের বিবেচনাবোধকে তারা অগ্রাহ্য করতে পারেন না। কিন্তু ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়ে এতে সরাসরি সম্পৃক্ত হওয়া কয়েকবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকা বিএনপির জন্য মর্যাদাকর নয়। বিএনপিকে ভারত সরকারের নীতি ও কর্মকান্ডের সমালোচনা করতে হবে।

বৈঠকে উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির কৌশল কী হওয়া উচিত, সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। প্রায় সব সদ্য দলগতভাবে নির্বাচনে না গিয়ে কৌশল গ্রহণ করার পক্ষে মত দেন। নেতারা কেউ কেউ বলেন, যেখানে সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না, সেখানে এই সরকারের অধীনে অন্য নির্বাচনে যাওয়ার প্রশ্ন আসে না। তবে কেউ নিজ উদ্যোগে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাইলে তাকে বাধা দেওয়া উচিত হবে না বলেও মনে করেন তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নেতা বলেন, যতটুকু আলোচনা হয়েছে, এতে মনে হয়েছে, উপজেলায় প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে দলীয় নেতাদের উৎসাহিত না করা, কেউ নির্বাচনে যেতে চাইলে তাকে দলীয়ভাবে বাধা না দেওয়ার বিষয়ে মতামত এসেছে। কয়েকজন সদস্য বলেছেন, বিএনপি দলগতভাবে যে নির্বাচনে যেতে চায় না, তা পরিষ্কার করতে হবে। এরপর কেউ নির্বাচনে আগ্রহী হলে নিজ দায়িত্বে অংশ নিতে পারেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে