স্বাধীনতা দিবস উদযাপন
শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় সিক্ত জাতির সূর্য সন্তানরা
স্মৃতিসৌধে মানুষের ঢল চট্টগ্রামের নানা আয়োজন
প্রকাশ | ২৭ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
হাতে লাল সবুজের পতাকা আর রঙবেরঙের ফুল নিয়ে মঙ্গলবার সকাল থেকে হাজারো মানুষের ঢল নামে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে। দেশের সূর্য সন্তানদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় ফুলে ফুলে ঢেকে যায় স্মৃতিসৌধের শহীদ বেদি। ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি, আধাসরকারি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সাধারণ মানুষ। স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে যুদ্ধাহত অনেক মুক্তিযোদ্ধাও আসেন শ্রদ্ধা জানাতে। তাদের অনেকের হাতে ছিল লাল-সবুজের পতাকা।
এর আগে, ঢাকাসহ সারাদেশে প্রতু্যষে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে ৫৪তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের সূচনা হয়। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে স্মৃতিসৌধে প্রথমে শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। রাষ্ট্রপতির পরপরই জাতির সূর্য সন্তানদের শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর সেখানে এক মিনিট নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন তারা। এ সময় সশস্ত্র বাহিনীর একটি দল রাষ্ট্রীয় অভিবাদন জানায় এবং বিউগলে বেজে ওঠে করুণ সুর। পরে দলীয় প্রধান হিসেবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান দলের সভাপতি শেখ হাসিনা।
\হএসময় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়াও
জাতীয় সংসদের স্পিকার, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, তিন বাহিনীর প্রধান ও ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিকরা এ সময় স্মৃতিসৌধে উপস্থিত ছিলেন।
একই সময় বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশে আসা ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগুয়েল ওয়াংচুক। স্বস্ত্রীক তিনি স্মৃতিসৌধে উপস্থিত থেকে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে উপস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। বিদেশি কূটনীতিবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
এরপর জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় সর্বস্তরের মানুষের জন্য। মুহূর্তেই জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ জনসমুদ্রে পরিণত হয়। সারিবদ্ধভাবে ফুল নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে লাখো জনতা। যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে এই দেশ, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে লাখো মানুষের ঢল নামে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে।
দিবসটি উপলক্ষে ঢাকা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকায় নেওয়া হয় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সিসি ক্যামেরাসহ সাদা পোশাকেও পুলিশের নজরদারি রাখে স্মৃতিসৌধ এলাকায়।
বাংলাদেশের ৫৪তম 'স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস-২০২৪' উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে রক্ষিত তার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি এবং স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা ও প্রধানমন্ত্রীর একমাত্র ছোট বোন শেখ রেহানা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে। পরে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে সঙ্গে নিয়ে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা তাঁর দলের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে আরেকবার পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। দিবসটি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী পরে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে একটি স্মারক ডাক টিকিট, উদ্বোধনী খাম ও একটি ডাটা কার্ড অবমুক্ত করেন।
মঙ্গলবার সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পতাকা এবং ঢাকা শহরে সহজে দৃশ্যমান ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। সোমবার রাত থেকেই গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাসমূহে আলোক সজ্জায় সজ্জিত করা হয়। ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপসমূহ জাতীয় পতাকা ও অন্যান্য রঙিন পতাকায় সজ্জিত করা হয়। দিনটি ছিল সরকারি ছুটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসেও দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে কর্মসূচি নেয়া হয়। সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবির বাংলাদেশ দূতাবাসে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালিত হয়। যথাযোগ্য মর্যাদা ও উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপিত হয়েছে। কলকাতায় বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে বঙ্গবন্ধুসহ মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীরদের স্মৃতির প্রতি পুষ্পস্তবক দিয়ে 'মুজিব চিরঞ্জীব' ভাস্কর্যে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে সংবাদপত্রসমূহ বিশেষ ক্রোড়পত্র, নিবন্ধ ও সাহিত্য সাময়িকী প্রকাশ করে। পাশাপাশি ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলো মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রচার করে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাংলাদেশ শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশুদের চিত্রাঙ্কন, রচনা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র এবং চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হয়। শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করে।
যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করেছে পুলিশ, বিজিবি ও ফায়ার সার্ভিসসহ অন্যান্য সংস্থা। মঙ্গলবার তারা বীর শহীদদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান ও পতাকা উত্তোলনসহ অন্যান্য কর্মসূচি পালন করে। দিবসটি উপলক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সকাল ৮টায় রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে পুলিশ স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পুলিশ সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর মোহাম্মদপুর গজনবী রোডে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন কেন্দ্রে (মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ার-১) যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের ফলমূল এবং মিষ্টান্ন পাঠান। মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব-২ গাজী হাফিজুর রহমান লিকু এবং প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব এবিএম সরওয়ার-ই-আলম সরকার প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে উপহার সামগ্রী তুলে দেন।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসমূহে দেশের শান্তি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও উপাসনার আয়োজন করে। দেশের সকল হাসপাতাল, জেলখানা, শিশু পরিবার, বৃদ্ধাশ্রম, ভবঘুরে প্রতিষ্ঠান ও শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়। শিশুপার্ক ও বন্দরসমূহ উন্মুক্ত রাখা হয়।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও অভিযাত্রী যৌথভাবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অদম্য পদযাত্রা, যা শেষ হয় জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়ে। তরুণদের পদযাত্রায় অধ্যাপক জাফর ইকবালসহ বিশিষ্ট নাগরিকরা অংশ নেন।