বিএনপির কারণেই গণহত্যার স্বীকৃতি পাইনি :কাদের
প্রকাশ | ২৬ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
বিএনপিকে 'দালাল' মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, 'এরা দালাল। এদের কারণে গণহত্যার স্বীকৃতি আজও আমরা পাইনি। আমরা পাকিস্তানের কাছ থেকে আমাদের ন্যায্য পাওনা আমরা পাইনি। পাকিস্তানি নাগরিকরা বছরের পর বছর বোঝা হয়ে আছে। কথা দিয়ে তাদের নাগরিকদের ফেরত নেয়নি। পাকিস্তান একাত্তরে গণহত্যার জন্য একটিবারও দুঃখপ্রকাশ করেনি। কোনো সরকারও প্রকাশ্যে এই যুদ্ধাপরাধের জন্য বাংলাদেশের কাছে এ যাবত ক্ষমা প্রার্থনা করেনি। সে পাকিস্তানের যারা দালালি করে তারা স্বাধীনতার শত্রম্ন।'
সোমবার রাজধানীর গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত এক সমাবেশে
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস উপলক্ষে এই সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা আওয়ামী লীগ।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন- আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, মুক্তিযুদ্ধ সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস প্রমুখ।
ওবায়দুল কাদের বলেন, 'বিএনপি পাকিস্তানের দালালি করে, আমাদের শত্রম্ন। এই শত্রম্নরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল, জেলে চার নেতাকে হত্যা করেছিল। জয় বাংলা, ৭ মার্চ নিষিদ্ধ করেছিল। ২৬ মার্চে স্বাধীনতার স্থপতিকে নিষিদ্ধ করেছিল।'
সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে ক্ষমতার দিবাস্বপ্ন দেখছেন ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে ক্ষমতার দিবাস্বপ্ন দেখছেন বলে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, 'সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে ফখরুল ক্ষমতার দিবাস্বপ্ন দেখছেন। বিদেশে বিএনপির প্রভু আছে। যারা স্বার্থের জন্য বিএনপির পক্ষে ওকালতি করে আর আমাদের বন্ধু আছে, প্রভু না। ৭১-এও বন্ধুরা আমাদের সঙ্গে ছিল। এবার বিএনপি যখন নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করেছিল, তখনো বন্ধুরা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল।'
সিঙ্গাপুরে প্রায় তিন সপ্তাহ চিকিৎসা শেষে গত শনিবার ঢাকায় ফেরেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রোববার ঢাকায় নিয়োজিত বিদেশি কূটনীতিকদের সম্মানে বিএনপি আয়োজিত ইফতার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ঢাকায় ফিরে প্রথম কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেন তিনি।
সোমবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বিএনপির একটি সমাবেশেও বক্তব্য রাখেন মির্জা ফখরুল। ওই সভার কথা উলেস্নখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, 'নয়াপল্টনে মির্জা ফখরুল মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ করেছেন। আমি জানতে চাই, ৭১-এ আপনি (ফখরুল) কোথায় ছিলেন? কোথা থেকে ট্রেনিং নিয়েছেন, কোন সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন?'
ওবায়দুল কাদের বলেন, 'মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ করলেন, অথচ ২৫ মার্চ গণহত্যা নিয়ে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। এরা কারা? এরা পাকিস্তানের দালাল। বিএনপির মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ ভুয়া। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ওই সমাবেশ করা হয়েছে। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না, তারা কোনো দিনও মুক্তিযোদ্ধা হতে পারে না।'
বিএনপি দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী
বিএনপি নেতাদের প্রতি ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, 'ভারতের পেঁয়াজ দিয়ে পেঁয়াজু খায়, ভারতের গরুর মাংস দিয়ে সেহরি খায়, ভারতের শাড়ি পরে স্ত্রীরা সাজে, কিন্তু বয়কটের ডাক দেয়! তারা ভারতীয় পণ্য বয়কটের নামে মানুষের সঙ্গে তামাশা করছে। বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য তারা চেষ্টা করছে।'
হাছান মাহমুদ বলেন, 'একাত্তরের ২৫ মার্চ গণহত্যা হয়েছে। এক দিনে এত বড় হত্যাকান্ড ইতিহাসে বিরল। রিকশাচালক, পিলখানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হত্যাকান্ড চালানো হয়েছিল।'
এই গণহত্যার স্বীকৃতির বিষয়ে তিনি বলেন, 'জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর সব গণহত্যার আলামত নষ্ট করা হয়েছিল। জেনারেল জিয়াউর রহমান প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছিলেন শাহ আজিজকে, যে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানের প্রতিনিধি দলের প্রধান হয়ে জাতিসংঘে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে বক্তব্য রেখেছিল।'
তিনি বলেন, 'যারা বুদ্ধিজীবী হত্যা করেছিল, যারা সবুজ পতাকার বদলে পাকিস্তানি চার তারকা চেয়েছিল, সেই জামায়াতে ইসলামি নেতাদের খালেদা জিয়া মন্ত্রী বানিয়েছিলেন। যারা লাল-সবুজ পতাকা চায়নি, তাদের গাড়িতে লাল সবুজ পতাকা দিয়েছিল। যেখানে ৩০ লাখের তুলনায় আরও কম মানুষ হত্যার স্বীকার হয়েছে, সেগুলোও স্বীকৃতি পেয়েছে। '৭৫ এর পরবর্তী গণহত্যার প্রমাণ মুছে দিয়েছিল, জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়াও ৩০ লাখের ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করেছিল।'
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'আমাদের গণহত্যার স্বীকৃতি এ জন্য দরকার, যেন ভবিষ্যতে এমন গণহত্যা পৃথিবীর কোথাও না হয়। গাজায় যে হত্যা হচ্ছে, সেখানে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বক্তব্য রাখছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। আমরা এই গণহত্যা বন্ধ চাই।'
মিথ্যাচারের কারণে গণহত্যার স্বীকৃতি পাইনি : হানিফ
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, 'জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে যারা ক্ষমতায় এসেছিল, তারা মুক্তিযুদ্ধের সব ইতিহাস মুছে দিয়েছিল। তাদের কারণে আমরা এখনো স্বীকৃতি পাইনি। তারা বলে ৩০ লাখ মানুষ প্রাণ হারায়নি। এই মিথ্যাচারের কারণে আমরা এখনো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাইনি।'
তিনি আরও বলেন, 'এই দিন আমাদের নিরস্ত্র মানুষের ওপর হামলা চালিয়ে পাকিস্তান গণহত্যা শুরু করেছিল। এই গণহত্যায় ৩০ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, কিন্তু এখনো স্বীকৃতি পাইনি। নাৎসি বাহিনীর হাতে এক লাখ ১০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল, সেটার স্বীকৃতি আছে, রুয়ান্ডার গণহত্যা, বসনিয়ার গণহত্যার স্বীকৃতি আছে, কিন্তু আমাদের যে ৩০ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল, সেটার স্বীকৃতি নেই।'
পাকিস্তানি দোসরদের প্রতিহত করুন : নাছিম
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম বলেন, 'রাতের অন্ধকারে অপারেশন সার্চ লাইটের নামে ইয়াহিয়া খান, টিক্কা খানদের নির্দেশে নির্মম হত্যাকান্ড করা হয়েছে। এই গণহত্যার স্বীকৃতি আমরা এখনো জাতিসংঘ থেকে পাইনি। যতদিন স্বীকৃতি আমরা আদায় করতে না পারব, আমাদের যে বীর সন্তানরা নির্মম হত্যার স্বীকার হয়েছে, তাদের মর্যাদা আমরা দিতে পারব না।'
নাছিম বলেন, 'দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে। ত্রিশ লাখ শহীদের হত্যার স্বীকৃতি আমাদের আদায় করতে হবে। খুনি মুশতাক, জিয়ারা স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে। খুনি জিয়া ক্ষমতা দখল করে খুনিদের দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেয়।
পাকিস্তানিদের দোসর সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়িয়ে দেওয়াদের প্রতিহত করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের এই গণহত্যার স্বীকৃতি আদায় করতে হবে। এর মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনী হবে যুদ্ধাপরাধী সেনাবাহিনী আর পাকিস্তান হবে যুদ্ধাপরাধী দেশ।
এর আগে দুপুর ২টার দিকে অনুষ্ঠান শুরু হয়। সমাবেশের জন্য বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর পূর্ব পাশে একটি অস্থায়ী মঞ্চ করা হয়। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড কমিটির নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে দলে দলে সমাবেশস্থলে জড়ো হন। সমাবেশে যোগ দিতে আসা নেতাকর্মীদের মিছিল আর ভিড়ের কারণে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউসহ গুলিস্তানের আশপাশের সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
এদিকে মিছিল নিয়ে আসা নেতাকর্মীদের পবিত্র রমজান মাসের কারণে নীরব থাকতে বলা হয়। নেতাকর্মীরাও মিছিল বন্ধ করে সমাবেশের জন্য রাখা চেয়ারে বসে পড়েন। মঞ্চের সামনের দিকে চেয়ারে ও সড়কে বসেন নারী নেতাকর্মীরা।
সমাবেশের শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফি বলেন, 'রোজার মাস, আমরা মিছিল স্স্নোগান দেব কম, কথা বলব কম। কিন্তু কাজ করব বেশি। আমাদের কাজের মাধ্যমে শত্রম্নর বিরুদ্ধে সজাগ থাকতে হবে।'