স্বাগত মাহে রমজান
সর্বাবস্থায় আলস্নাহর জিকিরের তাগিদ
প্রকাশ | ২৬ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
উন্নত মানবিক গুণাবলি অর্জনের মাস রমজানুল মুবারকের আজ পঞ্চদশ দিবস। এদিন মুমিন মুসলমানরা নামাজ, জিকিরসহ নানা ইবাদতের মাধ্যমে মহান আলস্নাহকে সর্বোচ্চ স্মরণ করার চেষ্টা করছেন। আলস্নাহর পবিত্র নামের যে বরকত ও লযযত এবং স্বাদ ও আনন্দ রয়েছে তা গ্রহণে মশগুল রয়েছে।
পবিত্র কুরআন মজিদে আলস্নাহর জিকির বেশি বেশি করতে বলা হয়েছে। অন্য কোনো ইবাদত সম্পর্কে এমন কথা বলা হয়নি। কারণ আলস্নাহর জিকির তথা আলস্নাহর স্মরণ এমন এক বিষয়, যা মানুষকে সব ধরনের গুনাহ থেকে রক্ষা করে এবং শরিয়তের হুকুম মোতাবেক চলতে সাহায্য করে।
আলস্নাহর জিকির হচ্ছে যাবতীয় ইবাদতের রূহ। আবু ওসমান নাহদি রাহ. বলেন, কুরআন মজিদের ওয়াদা অনুযায়ী যখন কোনো বান্দা আলস্নাহকে স্মরণ করে তখন আলস্নাহ তাঁকে স্মরণ করেন।
আলস্নাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন- তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব এবং শোকর গোযারি করো, না-শোকরি করো না।-সূরা বাকারা : ১৫২
সুতরাং আমরা যখন আলস্নাহর জিকিরে মশগুল হই তখন একথা স্মরণ করা কর্তব্য যে, স্বয়ং আলস্নাহ তাআলাও আমাদেরকে স্মরণ করছেন। এতে যিকিরের স্বাদ ও লযযত বহুগুণ বৃদ্ধি পায়।
কুরআন মজিদে আলস্নাহতাআলা বলেন, আলস্নাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করবে যাতে তোমরা
সফলতা অর্জন কর। -সূরা আনফাল : ৪৫
অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, যারা ঈমান আনে এবং আলস্নাহর স্বরণে যাদের অন্তর প্রশান্ত হয়, জেনে রাখ আলস্নাহর যিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ শান্তি পায়। (সূরা রা'দ : ২৮)
কুরআনে আরও বলা হয়েছে, যারা ঈমানদার তারা এমন যে যখন তাদের সামনে আলস্নাহর নাম নেওয়া হয় তখন তাদের অন্তর ভীত হয়ে পড়ে। (সূরা আনফাল : ২)
আলস্নাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, 'যাদের হৃদয় ভয়ে কম্পিত হয় আলস্নাহর নাম স্মরণ করা হলে।' (সূরা হজ্ব : ৩৫)
কুরআনের সূরা আহযাব-এ বলা হয়েছে আলস্নাহর অধিক যিকিরকারী পুরুষ ও যিকিরকারী নারী, তাদের জন্য আলস্নাহ প্রস্তুত রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপুরস্কার।
মুমিনদের সম্পর্কে বলেছেন, যারা আলস্নাহতাআলাকে স্মরণ করে দাঁড়িয়ে, বসে ও শায়িত অবস্থায় এবং চিন্তা-ভাবনা করে আসমান যমিন সৃষ্টির বিষয়ে। হে আমাদের প্রতিপালক! এসব তুমি অনর্থক সৃষ্টি করনি। (সূরা আলে ইমরান : ১৯৯)
মুনাফিকদের বিষয়ে কুরআনে বলা হয়েছে, যখন তারা নামাযে দাঁড়ায় তখন তারা শিথিলভাবে লোক দেখানোর জন্য দাঁড়ায় এবং তারা আলস্নাহকে অল্পই স্মরণ করে। (সূরা নিসা : ১৪২)
উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুলস্নাহ সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম সর্বাবস্থায় আলস্নাহর যিকির করতেন। (সহিহ মুসলিম ১/২৮২; সুনানে আবু দাউদ, পৃষ্ঠা ৪)
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুলস্নাহ সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেছেন, আলস্নাহতাআলা বলেন, আমি বান্দার সাথে ঐরূপ ব্যবহার করি যেরূপ সে আমার প্রতি ধারণা রাখে। সে যখন আমাকে স্মরণ করে আমি তার সাথে থাকি। সে যদি আমাকে অন্তরে স্মরণ করে আমিও তাকে অন্তরে স্মরণ করি। সে যদি কোনো মজলিসে আমার কথা আলোচনা করে তবে আমি তার চেয়ে উওম মজলিসে তার আলোচনা করি। (সহিহ বুখারি ২/৭৪০৫; সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৬৭৫)
হযরত আবু মুসা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুলস্নাহ সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেছেন, যে তার প্রতিপালককে স্মরণ করে আর যে করে না তাদের দৃষ্টান্ত হল জীবিত ও মৃতের মতো। অর্থাৎ যে আলস্নাহকে স্মরণ করে সে জীবিত। আর যে স্মরণ করে না সে মৃত। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৪০৭; মুসলিম, হাদিস : ৭৭৯)
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুলস্নাহ সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম মক্কার পথে জুমদান পাহাড়ের পাদদেশ দিয়ে চলছিলেন, তখন তিনি বললেন, তোমরা চলতে থাক এই যে জুমদান পাহাড়। মুফাররিদরা অগ্রগামী হয়েছে। সাহাবিরা বললেন, হে আলস্নাহর রাসূল! মুফাররিদরা কারা? তিনি বললেন, ওইসব নারী ও পুরুষ, যারা আলস্নাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৬৭৬)