মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

রাজাকারের তালিকা কতদূর?

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৫ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
রাজাকারের তালিকা কতদূর?

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এক বছর আগে বলেছিলেন, একাত্তরের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া রাজাকারদের তালিকা আসবে ২০২৪ সালের মার্চে; বছরঘুরে সেই মার্চে এসে মন্ত্রী জানালেন, রাজাকারের কোনো তালিকা তার মন্ত্রণালয় এখনো করে উঠতে পারেনি।

তিনি বলেন, (রাজাকারের তালিকা) করার জন্য আগের সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান সাহেবের নেতৃত্বে একটা ক্যাবিনেট কমিটি করে দেওয়া হয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, আমি যতটুকু জানি, অদ্যাবধি আমাদের কাছে উনারা তালিকা হ্যান্ডওভার করেননি, হস্তান্তর করেননি কোনো লিখিত তালিকা। সেজন্য তালিকার বিষয়ে সর্বশেষ অবস্থা বলতে পারছি না। মন্ত্রী বলেন, 'আমি মনে

করি, শাজাহান খানের কাছ থেকে এ বিষয়ে আপনারা শুনলে ভালো হয়।'

রোববার দুপুরে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে শহীদ বুদ্ধিজীবীর চতুর্থ পর্বের তালিকা প্রকাশ করে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন মোজাম্মেল হক।

গত বছর রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপেস্নক্স উদ্বোধনের পর মোজ্জামেল হক বলেছিলেন, 'যারা ঘোষণা দিয়ে সাংগঠনিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছেন, তাদের তালিকা প্রকাশের জন্য ইতোমধ্যে নীতিমালা তৈরি হয়েছে এবং আমাদের এই কাজ চলমান আছে। আগামী বছরের মার্চ মাসে পুরো তালিকা প্রকাশ করা সম্ভব হবে।'

মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের কাছে নতুন তালিকার প্রণয়ণের সমস্যার কথাও তুলে ধরেন মন্ত্রী।

তিনি বলেন, 'একাত্তর সালের তালিকা একটা রক্ষিত আছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। নতুন তালিকা বানানো অর্থ এটা ফেব্রিকেটেড হতে পারে। তালিকা যদি আমি তৈরি করি, আমি আপনাকে অপছন্দ করি আপনার নাম ঢুকিয়ে দিতে পারি।

'আবার উনাকে পছন্দ করি উনি একজন রাজাকার দ্য গ্রেট ছিল; তো উনি আমার ভগ্নিপতি, আপনি বাদ এরকম সমস্যা তো হতে পারে।'

২০১৯ সালের বিজয় দিবসের আগের দিন সংবাদ সম্মেলন করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী ১০ হাজার ৭৮৯ জন 'স্বাধীনতা বিরোধীর' তালিকা প্রকাশ করেন। ওই তালিকায় গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের নাম আসায় ক্ষোভ আর সমালোচনার প্রেক্ষাপটে সংশোধনের জন্য ওই তালিকা স্থগিত করা হয়।

পরে রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীসহ স্বাধীনতা বিরোধীদের তালিকা তৈরির সুযোগ রেখে ২০২২ সালের ২৯ আগস্ট 'জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন' সংসদে পাস হয়।

ওই তালিকা প্রকাশের প্রসঙ্গ টেনে মন্ত্রী বলেন, 'ইয়েস আই ডিড ইট। বাট আমাদের অ্যাপোলজি করে প্রত্যাহার করতে হয়েছে। আপনি ডকুমেন্ট দেখেন। সেই ডকুমেন্ট আমাদের তৈরি না, একাত্তর সালের ডিসি স্বাক্ষর করা সাইন, এসডিও স্বাক্ষরিত সাইন। একাত্তর সালে হোম মিনিস্ট্রির কাছে যে কাগজ আছে সেগুলো আমাদের কাছে আছে।'

এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, 'ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ে অভিযোগ পেলে আমরা সেটা চারবার খতিয়ে দেখি। আপনাকে যদি দায়িত্ব দেওয়া হয়, আপনি কি করবেন? কারও না কারও উপরে আপনাকে ডিপেন্ড করতে হয়। বগুড়ায় কে ছিল বা গাজীপুরে কে ছিল? আপনার পক্ষে জানা সম্ভব?'

মোজাম্মেল হকের ভাষ্য, 'দেখুন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমার থানায় আমার সঙ্গে যারা যুদ্ধ করছে অথবা আমি যাদের অধীন যুদ্ধ করেছি অথবা আমার অধীন যারা যুদ্ধ করেছে এদের আমি চিনি। আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কমিটি করে দিয়েছি। সেখানে অনেক বাদ-প্রতিবাদ হয়েছে, আপনারাও লিখেছেন। আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ আসার পর সেগুলো যাচাই-বাছাই করেছি। আমি যা পেয়েছি, যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তারা যে রিপোর্ট দিয়েছেন সেটা আমি একসেপ্ট করে দিয়েছি, এটুকু আমি বলতে পারি।'

মন্ত্রী বলেন, 'ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার বিষয়ে এখনো আমরা কাছে অভিযোগ পেলে যেটা যাচাই করি। তাই আমাদের আন্তরিকতা, চেষ্টা ও সদিচ্ছার কোনো অভাব নেই।'

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর ২১ বছর ক্ষমতায় থাকা বিভিন্ন সরকারের সময় মুক্তিযুদ্ধের অনেক দালিলিক প্রমাণ 'নষ্ট করা হয়েছে' বলে মন্তব্য করেন মন্ত্রী।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে