আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) প্রধানরা পদে থেকে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করতে পারবেন। কেবল তাই নয়, পদ ছাড়ার এক বছর সময় অতিবাহিত হতে হবে। তবে কোনো ফেরারি আসামি পারবেন না ভোটে দাঁড়াতে।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) স্থানীয় এই সরকারের নির্বাচনে প্রার্থিতার এমন একগুচ্ছ যোগ্যতা-অযোগ্যতা নির্ধারণ করে দিয়েছে। ইতোমধ্যে সেগুলো সম্ভাব্য প্রার্থীদের অবহিত করতে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের এক নির্দেশনাও পাঠিয়েছেন সংস্থাটির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার উপ-সচিব মো. আতিয়ার রহমান।
চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানের যোগ্যতা ও অযোগ্যতা :
(১) কোনো ব্যক্তি চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য হবেন, যদি (ক) তিনি বাংলাদেশের নাগরিক হন।
(খ) তার বয়স পঁচিশ বছর পূর্ণ হয়।
(গ) তিনি সংশ্লিষ্ট উপজেলার ভোটার
তালিকাভুক্ত হন।
(২) কোনো ব্যক্তি চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার এবং থাকার যোগ্য হবেন না, যদি তিনি (ক) বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করেন বা হারান।
(খ) কোনো উপযুক্ত আদালত কর্তৃক অপ্রকৃতিস্থ বলিয়া ঘোষিত হন।
(গ) দেউলিয়া ঘোষিত হন এবং দেউলিয়া ঘোষিত হওয়ার পর দায় হতে অব্যাহতি লাভ না করে থাকেন।
(ঘ) কোনো নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অনূ্যন দুই বছর কারাদন্ডে দন্ডিত হন এবং তার মুক্তি লাভের পর পাঁচ বছর অতিবাহিত না হয়ে থাকে।
(ঙ) প্রজাতন্ত্রের বা পরিষদের অন্য কোনো স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কোনো লাভজনক পদে সার্বক্ষণিক অধিষ্ঠিত থাকেন।
(চ) তিনি জাতীয় সংসদে সদস্য বা অন্য কোনো স্থানীয় কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বা সদস্য হন বা থাকেন।
(ছ) কোনো বিদেশি রাষ্ট্র হতে অনুদান বা তহবিল গ্রহণ করে এরূপ বেসরকারি সংস্থার প্রধান নির্বাহী পদ হতে পদত্যাগ বা অবসরগ্রহণ বা পদচু্যতির পর এক বছর অতিবাহিত না হয়ে থাকেন।
(জ) কোনো সমবায় সমিতি ও সরকারের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি ব্যতীত সংশ্লিষ্ট উপজেলা এলাকায় সরকারকে পণ্য সরবরাহ করার জন্য বা সরকার কর্তৃক গৃহীত কোনো চুক্তির বাস্তবায়ন বা সেবা কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য, তার নিজ নামে বা তার ট্রাস্টি হিসেবে কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের নামে বা তার সুবিধার্থে বা তার উপলক্ষে বা কোনো হিন্দু যৌথ পরিবারের সদস্য হিসেবে তার কোনো অংশ বা স্বার্থ আছে- এ রূপ চুক্তিতে আবদ্ধ হয়ে থাকেন।
(ঝ) তার পরিবারের কোনো সদস্য সংশ্লিষ্ট উপজেলার কার্য সম্পাদনে বা মালামাল সরবরাহের জন্য ঠিকাদার নিযুক্ত হন বা ইহার জন্য নিযুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অংশীদার হন বা উপজেলার কোনো বিষয়ে তার কোনো প্রকার আর্থিক স্বার্থ থাকে।
(ঞ) মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার তারিখে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে গৃহীত কোনো ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ অবস্থায় অনাদায়ী রাখেন। তবে শর্ত থাকে যে, কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে গৃহীত নিজস্ব বসবাসের নিমিত্ত গৃহ-নির্মাণ অথবা ক্ষুদ্র কৃষিঋণ এর আওতাভুক্ত হবে না।
(ট) এমন কোনো কোম্পানির পরিচালক বা ফার্মের অংশীদার হন, যার কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে গৃহীত কোনো ঋণ বা এর কোনো কিস্তি, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার তারিখে পরিশোধে খেলাপি হয়েছেন।
(ঠ) পরিষদের কাছ হতে কোনো ঋণ গ্রহণ করেন ও তাহা অনাদায়ী থাকে।
(ড) সরকার কর্তৃক নিয়োগকৃত নিরীক্ষকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নির্ধারিত দায়কৃত অর্থ পরিষদকে পরিশোধ না করে থাকেন।
(ঢ) কোনো সরকারি বা আধা-সরকারি দপ্তর, কোনো সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, সমবায় সমিতি বা প্রতিরক্ষা কর্ম বিভাগের চাকরি হতে নৈতিক স্খলন, দুর্নীতি, অসদাচরণ ইত্যাদি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে চাকরিচু্যত, অপসারিত বা বাধ্যতামূলক অবসরপ্রাপ্ত হয়েছেন এবং তার এ রূপ চাকরিচু্যতি, অপসারণ বা বাধ্যতামূলক অবসরের পর পাঁচ বছর অতিক্রান্ত না হয়ে থাকে।
(ণ) উপজেলা পরিষদের তহবিল তছরুফের কারণে দন্ডপ্রাপ্ত হন।
(ত) বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে যে কোনো সময় দন্ডবিধির ধারা ১৮৯, ১৯২, ২১৩, ৩৩২,৩৩৩ ও ৩৫৩ এর অধীন দোষী সাব্যস্ত হইয়া সাজাপ্রাপ্ত হন।
(থ) জাতীয় বা আন্তর্জাতিক আদালত বা ট্রাইবু্যনাল কর্তৃক যুদ্ধাপরাধী হিসেবে দোষী সাব্যস্ত হন।
(দ) কোনো আদালত কর্তৃক ফেরারি আসামি হিসেবে ঘোষিত হন।
আগামী ৮ মে দেশের ১৫২টি উপজেলায় প্রথম ধাপের নির্বাচন হবে। তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমার শেষ সময় ১৫ এপ্রিল, বাছাই ১৭ এপ্রিল। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল ১৮-২০ এপ্রিল। আপিল নিষ্পত্তি ২১ এপ্রিল, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ এপ্রিল। প্রতীক বরাদ্দ ২৩ এপ্রিল, আর ভোটগ্রহণ হবে ৮ মে।
নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের নিয়োগ করা হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দায়ের করা আপিল আবেদন নিষ্পত্তি করবেন আপিল কর্তৃপক্ষ হিসেবে জেলা প্রশাসক।
মোট চার ধাপে অনুষ্ঠেয় ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পরে তিন ধাপের ভোট ২৩ ও ২৯ মে এবং ৫ জুন অনুষ্ঠিত হবে। দেশে মোট উপজেলার সংখ্যা ৪৯৫টি।