ইসু্য না পেয়ে ভারত-বিরোধিতা শুরু করেছে বিএনপি :কাদের
প্রকাশ | ২৪ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
রাজনৈতিক কোনো ইসু্য না পেয়ে বিএনপি ভারত-বিরোধিতা শুরু করেছে বলে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, 'পাকিস্তান আমল থেকে যে অপপ্রচার শুনেছি, কোনো রাজনৈতিক ইসু্য যখন থাকে না, তখন একটাই ইসু্য আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নিয়ে আসে। আগে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে আনত আর এখন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনে। সেটা হচ্ছে ভারত-বিরোধিতার ইসু্য।'
শনিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ইফতারি ও ঈদসামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এ দিন দুই হাজার মানুষকে ইফতারি ও ঈদসামগ্রী দেওয়া হয়।
ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা বেনজীর আহমদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিন্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও
বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল বাতেন মিয়া প্রমুখ।
ওবায়দুল কাদের বলেন, 'বিএনপি ইফতার পার্টি করে আর আওয়ামী লীগ ইফতারসামগ্রী বিতরণ করে। তারা ইফতারি খাওয়ার পার্টি করে, আর আমরা ইফতারি দেওয়ার পার্টি করি। এটাই বিএনপি ও আওয়ামী লীগের পার্থক্য। আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের মধ্যে ইফতারি বিতরণের যে উদ্যোগ নিয়েছে, সেটা সারা ঢাকা শহরে ছড়িয়ে দিতে হবে।'
তিনি বলেন, 'বিএনপি ক্ষমতার দল, নিজেদের পকেট উন্নয়নের দল। তারা দীর্ঘদিন ক্ষমতায় নেই তো, লুটেপুটে হাওয়া ভবন করার সুযোগ নেই। হাওয়া ভবন ছাড়া বিএনপি টিকবে না। কারণ এই দল ক্ষমতাকেন্দ্রিক দল, মানুষের দল না। জনগণের দল আওয়ামী লীগ, ক্ষমতার দল বিএনপি। এটাই দুই দলের পার্থক্য।'
বিএনপির নেতাদের মধ্যে কথার মিল নেই দাবি করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, 'যখন কোনো সুযোগ থাকে না, তখন বিএনপি ভারত-বিরোধিতা শুরু করে।'
বাংলাদেশের ভোট বানচালের ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার সময় ভারত পাশে ছিল জানিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, 'বিএনপির সব নেতাই একে একে জেল থেকে বেরিয়ে গেছে। এখন তারা বিদেশ গিয়ে দেশের বিরুদ্ধে সবক দিচ্ছে।'
দেশের মানুষ ৪১ ভাগেরও বেশি ভোট দিয়ে শেখ হাসিনাকে জয়ী করেছে মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, 'যেটা অনেক উন্নত দেশও পারে না। তারপরও বলবে ইন্ডিয়া নিয়ে এসেছে। ইন্ডিয়া কোথায়? আমাদের দেশের মানুষ ভোট দিয়েছে। তারা আমাদের ভোট দেয়নি, তারা আমাদের ভোট বানচাল প্রতিহত করার জন্য আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে।'
দ্রব্যের মূল্য বেড়ে যাওয়া নিয়ে মানুষের মধ্যে প্রশ্ন আছে মন্তব্য করে সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী বলেন, 'এখন কিছু পণ্যের দাম কমে যাচ্ছে। পেঁয়াজ ৩০ টাকার মধ্যে নেমে এসেছে। দাম আরও কমবে ও সাধারণ মানুষের ক্রয়সীমার মধ্যে আসবে।'
বিএনপি দেশের অর্থনীতিকে অস্থিতিশীল করতে ভারতীয় পণ্য বর্জনের হাস্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, 'বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব হঠাৎ তার গায়ের শালটি ফেলে দিয়ে আগুনে পুড়িয়ে দিলেন।
এটা একটা হাস্যকর ঘটনা, ভারতের পণ্য বয়কট করতে হবে। সব সময় আমাদের পণ্য ভারতে যাচ্ছে, ভারতের পণ্য আমাদের দেশে আসছে। আজকের যুগে সবার সঙ্গে সবার বাণিজ্যের সম্পর্ক। এই বাণিজ্যিক সম্পর্ক নষ্ট করতে, আমাদের অর্থনীতিকে অচল করতে, অস্থিতিশীল করতে তাদের (বিএনপি) এই হাস্যকর পদক্ষেপ।'
ভারত বাংলাদেশের প্রকৃত-পরীক্ষিত বন্ধু মন্তব্য করে কামরুল ইসলাম আরও বলেন, 'আজ তাদের বিরুদ্ধে (ভারত) তাদের (বিএনপি) বিষোদগার করছে। আর মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের সেই পরাশক্তি আমেরিকার সঙ্গে তাদের বন্ধুত্ব, আমেরিকাই তাদের পছন্দের। তাই তারা (বিএনপি) হাস্যকর পদক্ষেপ নেয়, ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দেয়। বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল অর্থনীতির দিকে নিয়ে যাওয়াই তাদের মূল উদ্দেশ্য। তারা দেশের মঙ্গল, উন্নয়ন, অগ্রগতি চায় না। দেশকে পেছনের দিকে নিয়ে যেতে চায়।'
তিনি বলেন, 'ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে এখন আমরা স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি। আমরা ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি। মানুষের পাশে থেকে মানুষের জন্য, মানুষের মঙ্গলের জন্য, সাধারণ মানুষের দুঃখ মেটানোর জন্য প্রিয় নেত্রী কাজ করছেন। অপরদিকে যারা স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাস করে না, আমাদের ঐতিহাসিক দিনগুলো যারা স্মরণ করে না, যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধের বিরুদ্ধে, তারা আজকে দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যেতে চায়। দেশের মানুষকে তারা বার বার বিপৎগ্রস্ত করতে চায়। তারা উন্নয়ন-অগ্রগতি চায় না। তারা আমাদের স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নকে বানচাল করে দিতে চায়। তারা দেশের উন্নয়ন চায় না বলে, দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যেতে চায় বলে আজকে দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়।'
আওয়ামী লীগের এই নেতা আরও বলেন, 'আজকে রমজানের দিনে, মার্চ মাসে আমাদের শপথ নিতে হবে, এই অপশক্তিকে বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে বিতাড়িত করার। বাংলাদেশের রাজনীতিতে, বাংলাদেশের ক্ষমতায় থাকবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি- এই অবস্থা যতক্ষণ পর্যন্ত সৃষ্টি করতে না পারব, ততক্ষণ পর্যন্ত রাজনীতিতে স্বস্তি ফিরে আসবে না। আসুন অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলি।'
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে যে জায়গায় নিয়ে যাচ্ছেন এবং উনি চাচ্ছেন আমরা সবাই সম্মিলিতভাবে কাজ করে দেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত করতে। আমরা ঢাকার প্রতিটি উপজেলায় এই কাজগুলো করছি। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ওনার লক্ষ্যটা আমরা সফল করতে পারব। এজন্য আপনাদের সহযোগিতা দরকার।'