মাহে রমজানুল মোবারকের মাগফিরাত দশকের আজ দ্বিতীয় দিবস। রাসূল করিম সালস্নালস্নাহ আলাইহি ওয়া সালস্নাম রমজানকে সংযমের পাশাপাশি সংশোধনের মাস বলে উলেস্নখ করেছেন। যে ব্যক্তি এ সময় নিজের জীবনের ভুলভ্রান্তি শুধরে নিয়ে পাপাচারমুক্ত হতে পারবেন প্রকৃত অর্থেই তিনি সৌভাগ্যবান। হতভাগা ওই ব্যক্তি, যিনি সুযোগ পেয়েও রহমতের এ মাসে নিজেকে বিপথ থেকে ফিরে আসতে পারেননি। বিশেষ করে অবৈধ উপার্জনকারী ওই ব্যক্তি যিনি সংযম ও সংশোধনের এ মাসে হালাল রুজির সন্ধান করতে পারেননি। বরং হারাম উপার্জনের দিকে ঝুঁকেছেন।
রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, 'হালাল রুজি সন্ধান করা ফরজের পর একটি ফরজ।' (তিরমিজি) তিনি আরও ইরশাদ করেন, 'আলস্নাহতায়ালা পবিত্র। তিনি পবিত্র ছাড়া অন্য কিছু কবুল করেন না।' (বুখারি)
কোরআন-হাদিসে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ইসলামে অবশ্যই উপার্জনের গুরুত্ব অনেক। তবে তা হালাল উপায়ে হতে হবে। এ সম্পর্কে আল কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে- 'হে মানব জাতি! পৃথিবীতে যা কিছু বৈধ ও পবিত্র খাদ্যদ্রব্য' তা হতে তোমরা আহার করো এবং শয়তানের পথ অনুসরণ করো না। নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রম্ন।' (সুরা বাকারা-১৬৮) হারাম মাল দ্বারা আহার করার ব্যাপারে রাসূল (সা.) কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তিনি অন্য একটি হাদিসে বলেন, যে দেহ হারাম মাল দ্বারা লালিতপালিত তা কখনো জান্নাতে যাবে না। জাহান্নামই হবে তার একমাত্র ঠিকানা। (বুখারি)
ওপরে বর্ণিত বক্তব্য ও কোরআন-হাদিসের দলিল থেকে স্পষ্ট প্রমাণ হয়, ইসলামে উপার্জনের গুরুত্ব কতটুকুএবং হালাল উপার্জনের প্রয়োজনীয়তা কতখানি।
আল কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে- 'নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে এবং আলস্নাহর অনুগ্রহ রিজিক সন্ধান করবে।' (সূরা জুম'আ-১০) অন্য আয়াতে আলস্নাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- 'তোমরা জীবনোপকরণ কামনা করো আলস্নাহর নিকট এবং তাঁরই ইবাদত করো আর তাঁরই প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো। (সুরা আনকাবুত-১৭)
মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর ফারুক (রা.) বলেন, তোমরা কেউ জীবিকা অন্বেষণ ছেড়ে দিয়ে অলসভাবে বসে থেকো না, কেননা জীবিকা সন্ধান করার দায়িত্ব তোমার। নিশ্চয় যারা অলসভাবে বসে থাকে আর বলে জীবিকা তো মহান আলস্নাহ তায়ালার হাতে; তারা বুঝে না প্রভুর হিকমত। তারা হলো অজ্ঞ, আলস্নাহ মহান, সর্বজ্ঞ।
এদিকে মহান আলস্নাহ মানব জাতিকে হালাল উপার্জনের জন্যে নির্দেশ দিয়েই ক্ষান্ত হননি; বরং যাবতীয় বৈধ ও অবৈধ পন্থাও বাতলে দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, ইসলাম বৈধ উপার্জনকে অত্যাবশ্যক (ফরজ) কাজ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
উপার্জনের ক্ষেত্রে ইসলাম যেসব পন্থাকে হালাল করেছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে বৈধ ব্যবসা বাণিজ্য। ইসলাম এ ব্যাপারে সবিশেষ উৎসাহ ও গুরুত্ব প্রদান করেছে। যেন মুসলিম উম্মাহ পৃথিবীর বুকে একটি শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধি ও স্বয়ং-সম্পূর্ণতা অর্জন করতে পারে। মহান আলস্নাহ বলেন, 'তিনি (আলস্নাহ) ব্যবসাকে হালাল করেছেন এবং সুদকে করেছেন হারাম।' [৩]
উপরোক্ত আয়াতের মর্ম উপলব্দিতে প্রতীয়মান হয়, সুদভিত্তিক লেনদেনের মাধ্যমে যারা পৃথিবীতে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করছে তাদের মোকাবিলায় মহান আলস্নাহ ব্যবসা-বাণিজ্যকে বৈধ বলে ঘোষণা দিয়েছেন। অতএব অবৈধ পন্থা হতে বাঁচার এবং প্রাচুর্য ও সমৃদ্ধি লাভের এটি অনেক বড় অবলম্বন। তবে ব্যবসা-বাণিজ্য সততা, বিশ্বস্ততা, ন্যায়পরায়ণতা, ধোঁকামুক্ত, কল্যাণমুখী মানসিকতাসম্পন্ন হতে হবে। এ ধরনের ব্যবসায়ীকে তিনি নবীগণ, ছিদ্দিক ও শহীদদের সমমর্যাদাপূর্ণ বলে উলেস্নখ করেছেন। রাসূলুলস্নাহ সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেন, 'সৎ ও ন্যায়পরায়ণ ব্যবসায়ী (পরকালে) নবী, সিদ্দিকীন ও আলস্নাহর পথে জীবন বিসর্জনকারী শহীদদের সঙ্গী হবে। [৫]
এদিকে ইসলাম উপার্জনের ক্ষেত্রে গ্রহণীয় উপায় ও মাধ্যমটি বৈধ পন্থায় হওয়ার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। কেননা যাবতীয় অবৈধ উপায় ও পন্থায় অর্থসম্পদ উপার্জন করতে ইসলাম নিষেধ রয়েছে। পবিত্র কোরআনের একাধিক আয়াতের মাধ্যমে এ বিষয়ে মুমিনগণকে সতর্ক করা হয়েছে। মহান আলস্নাহ বলেন, 'হে মুমিনগণ! তোমরা একে অপরের সম্পত্তি অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। কিন্তু তোমাদের পরস্পর রাজি হয়ে ব্যবসা করা বৈধ; এবং একে অপরকে হত্যা করিও না; নিশ্চয়ই আলস্নাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু। আর যে কেউ সীমালংঘন করে অন্যায়ভাবে তা করবে, তাকে আমি অগ্নিতে দগ্ধ করব, আর এটা করা আলস্নাহর পক্ষে সহজ।'[২]
কোরআন করিমের অপর এক আয়াতে মহান আলস্নাহ বলেন, 'তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অপরের সম্পদ অবৈধ পন্থায় গ্রাস করো না এবং মানুষের ধন-সম্পত্তির কিয়দাংশ জেনে শুনে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে তা বিচারকগণের নিকট পেশ করো না।[৩]'
উপরোক্ত আয়াতদ্বয় দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রতিভাত হয় যে, উপার্জনের পদ্ধতি ও পন্থা অবশ্যই বৈধ হতে হবে। অন্যথায় কঠোর শাস্তির ঘোষণা রয়েছে। আর এ ধরনের উপায় জুলমের নামান্তর। যার পরিণতি খুবই ভয়াবহ।