এমভি আবদুলস্নাহর কাছে 'আটলান্টা অপারেশনের' যুদ্ধজাহাজ

জলদসু্যর হানায় ঝুঁকিতে আন্তর্জাতিক শিপিং ব্যবসা

এমভি আবদুলস্নাহর অদূরেই যুদ্ধ জাহাজটিকে অবস্থান করতে দেখা গেছে। এছাড়া একটি হেলিকপ্টারও কাছাকাছি চক্কর দিতে দেখা যাচ্ছে

প্রকাশ | ২৩ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম
এমভি আবদুলস্নাহর ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে ইইউর নেভাল ফোর্সের হেলিকপ্টার -সংগৃহীত
ভারত মহাসাগর থেকে চট্টগ্রামের কবির গ্রম্নপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এসআর শিপিং লাইনের জাহাজ এমভি আবদুলস্নাহ ও নাবিকদের জিম্মি করার ঘটনায় আতংকিত হয়ে পড়েছেন দেশের শিপিং ব্যবসায়ীরা। এ কারণে আন্তর্জাতিক শিপিং ব্যবসা চরম ঝুঁকিতে পড়েছে বলে মনে করছেন তারা। শুক্রবার এমন তথ্য জানিয়েছেন বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ। তিনি বলেন, সোমালীয় জলদসু্যদের দেখার পর সেদিন আশপাশের নৌযানের কাছে সহায়তা চেয়েছিলেন বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুলস্নাহর নাবিকরা। তবে যথাসময়ে কোনো সহযোগিতা পৌঁছায়নি। এক পর্যায়ে জাহাজটিতে জলদসু্যরা ওঠে পড়ে এবং সবাইকে জিম্মি করে ফেলে। তাদের ভাগ্যে কী ঘটতে চলেছে তাও এখন অনিশ্চিত। জাহাজটি এখন সোমালিয়ার উপকূলে রয়েছে। জলদসু্যরা ইতোমধ্যে জাহাজটির মালিকপক্ষ কবির গ্রম্নপের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও নাবিক ও জাহাজ ছাড়ার বিষয়ে কোনো কথা বলেনি এখনো। কবির গ্রম্নপের মিডিয়া এডভাইজার মিজানুল ইসলামও শুক্রবার বিকালে সর্বশেষ এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, আমরা অপেক্ষায় আছি জলদসু্যরা কখন দেনদরবার শুরু করবে। কারণ আমরা চেষ্টা করছি ঈদুল ফিতরের আগে নাবিক ও জাহাজ জলদসু্যদের থেকে যেন ফিরিয়ে আনতে পারি। এসআর শিপিংয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুল করিম বলেন, গত ১২ মার্চ সোমালিয়ান জলদসু্যদের হাতে ২৩ নাবিকসহ এমভি আবদুলস্নাহ জিম্মি হওয়ায় ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে দেশের শিপিং সেক্টর। বিশ্বব্যাপী আলোচনায় আসে এই শিল্প গ্রম্নপের নাম। এ গ্রম্নপের অন্য জাহাজের নাবিকদের ওপরও এর প্রভাব পড়েছে। তবে আমাদের অন্য জাহাজ যাতে ঝামেলা না হয় সেই চেষ্টার কোনো ত্রম্নটি রাখছি না। সূত্রমতে, কবির গ্রম্নপের এসআর শিপিং লিমিটেড ২০০৪ সাল থেকে জাহাজ পরিচালনা করে আসছে। সোমালিয়ান জলদসু্যদের হাতে জিম্মি থাকা এমভি আবদুলস্নাহসহ এ গ্রম্নপের এসআর শিপিংয়ের জাহাজ রয়েছে ২৩টি। জাহাজের সংখ্যায় বেসরকারি খাতে শীর্ষ অবস্থান করছে প্রতিষ্ঠানটি। জিম্মি হওয়ার ঘটনায় শুধু কবির গ্রম্নপ নয়, ঝুঁকির কথা বলছে সরকারি ৭টিসহ দেশীয় ১৪টি শিল্প গ্রম্নপের সবকটি শিপিং লাইন। এরমধ্যে আকিজ গ্রম্নপের এক কর্মকর্তা বলেন, ২০১১ সালে সমুদ্রগামী জাহাজ পরিচালনায় যুক্ত হয় গ্রম্নপটি। গ্রম্নপটির বহরে ১০টি জাহাজ রয়েছে। জাহাজগুলো পণ্য পরিবহণক্ষমতা ৫ লাখ ৬০ হাজার টন। সবচেয়ে বেশি পণ্য পরিবহণক্ষমতার বাল্ক জাহাজ এমভি আকিজ গেস্নারির পণ্য পরিবহণক্ষমতা প্রায় ৭৬ হাজার টন। যেগুলো আন্তর্জাতিক সমুদ্রপথে চলাচলে এখন ঝুঁকিতে পড়েছে। একইভাবে মেঘনা গ্রম্নপ অব ইন্ড্রাস্ট্রিজ (এমজিআই) গ্রম্নপের বহরে থাকা দু'টি তেল পরিবহণকারী জাহাজ ছাড়া সব কটির পণ্য পরিবহণক্ষমতা গড়ে ৬০ হাজার টন। এই খাতে গ্রম্নপটির বিনিয়োগ প্রায় ৪৫ কোটি ডলারে। এমভি আবদুলস্নাহ জিম্মির ঘটনায় এই গ্রম্নপের জাহাজগুলোতেও প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) আবু তাহের। অন্যদিকে, ১৯৭৮ সালে অ্যাটলাস শিপিং লাইনস লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সানাউলস্নাহ চৌধুরী বেসরকারি খাতে এমভি আল সালমা দিয়েই ব্যবসার যাত্রা শুরু করেন। বর্তমানে সমুদ্রগামী জাহাজ পরিচালনা শিল্প থেকে সরে আসে প্রতিষ্ঠানটি। তিনি বলেন, একটি জাহাজের কারণে অন্য জাহাজেও সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটবে, তা নয়। তবুও অন্য জাহাজে নাবিক যারা রয়েছেন, তাদের মনে শংকা সৃষ্টি হতে পারে। স্বজনরাও আতংকে থাকতে পারেন। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে এবং যেসব রুটে শংকা আছে সেখানে অতিরিক্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া দরকার। এদিকে, সরকারিভাবে পরিচালিত ৭টি জাহাজও ঝুঁকিতে থাকার কথা বলেছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি)। যেগুলো মাথা উঁচু করে এতদিন সমুদ্রপথে চলাচল করেছে। এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ, আমেরিকার বিভিন্ন দেশে, যে সময় যেদিকে ভাড়া পাওয়া যায় সেদিকে গেছে এই জাহাজগুলো। পণ্য পরিবহণের মাধ্যমে এসব জাহাজ সমুদ্রে লাল-সবুজের নেতৃত্ব দিচ্ছে। প্রায় ৫০ লাখ মেট্রিক টন পণ্য পরিবহণের সক্ষমতা রয়েছে এগুলোর। বিএসসির তথ্যমতে, সমুদ্রপথে বিএসসি) ৭টি জাহাজ রয়েছে। এছাড়া সোমালিয়ান জলদসু্যদের হাতে জিম্মি থাকা এমভি আবদুলস্নাহসহ কবির গ্রম্নপের এসআর শিপিংয়ের জাহাজ রয়েছে ২৩টি, মেঘনা গ্রম্নপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) জাহাজ আছে ২২টি, আকিজ গ্রম্নপের জাহাজের সংখ্যা ১০টি, বিএসএ গ্রম্নপের ৭টি, কর্ণফুলী লিমিটেডের জাহাজের সংখ্যা ৬টি, বসুন্ধরা গ্রম্নপের ৭টি, ওরিয়ন গ্রম্নপ ও এমজেএলের বহরে একটি করে জাহাজ রয়েছে। এছাড়া সমুদ্রগামী জাহাজ পরিচালনায় নামছে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে সানশাইন নেভিগেশন লিমিটেড, পিএনএন শিপিং লাইনস, পিএইচ নেভিগেশন, দরিয়া শিপিং লিমিটেড ও ডরিন শিপিং লাইনস। বাংলাদেশের পতাকাবাহী ৯৬টি জাহাজের মধ্যে ৭৫টি খোলা পণ্য পরিবহণকারী বাল্ক জাহাজ। তেল পরিবহণকারী ট্যাংকার ১০টি। এলপিজি পরিবহণকারী ট্যাংকার ৩টি এবং কনটেইনার পরিবহণকারী ৮টি জাহাজ রয়েছে। যেগুলো সোমালিয়ায় এসআর শিপিংয়ের একটি জাহাজ জিম্মি হওয়ায় নড়েচড়ে বসেছে দেশের শিপিং সেক্টর। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. মাহবুবুল আলম বলেন, সোমালিয়ান জলদসু্যদের হাতে আমাদের নাবিক ও জাহাজ জিম্মি থাকায় আমরা অবশ্যই আতংকিত। এর প্রভাব আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যেও পড়ছে। যদিও এটি বিশ্বব্যাপী একটি ইসু্য। জাহাজ চলাচলে আমাদের আরও সতর্ক অবস্থায় চলতে হবে। আমরা যেন ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হই, সে চিন্তা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, সোমালিয়ার আশপাশের জলপথগুলো জাহাজ চলাচলের ব্যস্ততম নৌরুটগুলোর অন্যতম বলে বিবেচিত হয়। প্রতিবছর আনুমানিক প্রায় ২০ হাজার নৌযান চলাচল করে সেসব পথে। আসবাব থেকে শুরু করে শস্য, জ্বালানি প্রায় সব ধরনের পণ্য পারাপার হয় এডেন উপসাগরের ওপর দিয়ে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) জেনারেল ম্যানেজার (যুগ্ম-সচিব) মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন বলেন, বেসরকারি খাতের জাহাজগুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। সেই হিসেবে সরকারি জাহাজগুলো অনেকটা নিরাপদ। ফলে সরকারি জাহাজগুলো এখনো স্বাভাবিকভাবে চলছে। যদিও সম্প্রতি এসআর শিপিংয়ের একটি জাহাজ সোমালিয়ায় জিম্মি হওয়ায় অন্য জাহাজে থাকা নাবিক ও স্বজনদের মনে ভয়ের সঞ্চার হয়েছে। তবুও এ ঘটনার পর অন্য জাহাজে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বিএসসি সূত্র জানায়, সমুদ্রপথে জলদসু্যদের সবচেয়ে বেশি দৌরাত্ম্য ছিল ২০০৮ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত। ইন্টারন্যাশনাল মারিটাইম বু্যরোর তথ্য বলছে, ২০১১ সালে সর্বোচ্চ পর্যায়ে ছিল জলদসু্যদের আক্রমণ। সে বছর সোমালীয় জলদসু্যরা ২৩৭টি আক্রমণ চালিয়েছিল। শত শত মানুষকে জিম্মি করেছিল। পর্যবেক্ষক সংস্থা ওশেন বিয়ন্ড পাইরেসি ওই বছর হিসাব করে দেখেছিল যে, জলদসু্যদের দৌরাত্ম্যের কারণে বিশ্ব অর্থনীতি থেকে প্রায় ৭০০ কোটি ডলার গায়েব হয়ে গেছে। এ ছাড়া মুক্তিপণের পেছনেও কয়েকশ' কোটি ডলার খরচ হয়েছে। বর্তমানে সে তুলনায় পরিস্থিতি অনেক ভালো। জলদসু্যরা অল্প টহল দেওয়া নৌরুটগুলোতে ছোট নৌযানকে লক্ষ্য করে আক্রমণ চালাচ্ছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের ধারণা, আগামীতে অবস্থা এ রকম হয়তো থাকবে না। এরই মধ্যে এডেন ও সোমালি অববাহিকায় অন্তত পাঁচটি জলদসু্যদের দল সক্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করেছে। রপ্তানিশিল্পের সঙ্গে জড়িত পাঁচ প্রতিনিধির বরাত দিয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদন বলছে, গত নভেম্বর থেকে ২০টিরও বেশি জাহাজ দখলে নেওয়ার চেষ্টা করেছে জলদসু্যরা। এর জেরে নৌরুটে সশস্ত্র রক্ষীর পেছনে ব্যয়, বিমা খরচ- সবই বেড়ে গেছে। বিমাকারীরাও বাড়তি অর্থ নেওয়া শুরু করেছেন। প্রিমিয়াম আরও ব্যয়বহুল হতে শুরু করেছে। এছাড়া সশস্ত্র রক্ষীদের খরচও বৃদ্ধি পেয়েছে। ফেব্রম্নয়ারি মাসে তিন দিনের জন্য রক্ষীদল ভাড়া করার খরচ আগের মাসের তুলনায় বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ। এ খাতে ৪ হাজার থেকে ১৫ হাজার ডলার গুনতে হচ্ছে জাহাজ মালিকদের। এসব সশস্ত্র দল হুতিদের ক্ষেপণাস্ত্র ও সশস্ত্র ড্রোনের বিরুদ্ধে ততটা কার্যকরীভাবে দাঁড়াতে না পারলেও জলদসু্যদের ঠেকাতে ভূমিকা রাখতে পারে। প্রতিবেদনের তথ্যমতে, আন্তর্জাতিক নৌবাহিনীর এতদিন ধারণা ছিল, জলদসু্যদের তারা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। তবে বাস্তবে তা হয়নি। অন্যদিকে, ইয়েমেন থেকে লোহিত সাগর ও আশপাশের নৌরুটে হুতি বিদ্রোহীরা হামলা চালাচ্ছে। ফলে সেদিকেও ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে আন্তর্জাতিক নৌবাহিনীকে। এতে করে নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার সুযোগ পাচ্ছে জলদসু্যরা। এদিকে কয়েকদিন আগে রুয়েন নামের একটি জাহাজকে জলদসু্যদের হাত থেকে উদ্ধার করেছে ভারতের নৌবাহিনী। সেটি ছিল মাল্টার পতাকাবাহী জাহাজ। ভারতের নৌবাহিনীর অভিযানে রুয়েনে ৩৫ জলদসু্যর সবাই আত্মসমর্পণ করেছে। ঘটনাটির ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্সের অপরাধ দমন শাখার উপ-পরিচালক সাইরাস মোডির মতে, ভারতের এ অভিযানের কারণে জলদসু্যরা কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগে একটু হলেও ভাববে। তবে একই পথে হাঁটা প্রশ্নে বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন। পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডক্টর হাছান মাহমুদ সম্প্রতি গণমাধ্যমকর্মীদের বলেছেন, এমভি আবদুলস্নাহর প্রশ্নে কোনো ধরনের সামরিক কর্মকান্ড না চালানোর পক্ষে সরকার। কারণ জাহাজটি সোমালীয় উপকূলে থাকায় পরিবেশ জলদসু্যদেরই অনুকূলে থাকবে বেশি। নাবিকদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে সরকার চেষ্টা চালাচ্ছে। এমভি আবদুলস্নাহর কাছে 'আটলান্টা অপারেশনের' যুদ্ধজাহাজ এদিকে, সোমালিয়া উপকূলে জলদসু্যদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুলস্নাহর কাছেই ইইউএনএভিএফওআর আটলান্টা অপারেশনের একটি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১২টার দিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনীর ওই সংস্থাটি তাদের এক্স হ্যান্ডেলে বিষয়টি জানিয়েছে। এক্স পোস্টে ইইউএনএভিএফওআর বলেছে, ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে দসু্যতার একাধিক ঘটনা ঘটেছে। তিনটি বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা হয়েছে। যার মধ্যে একটি এমভি আবদুলস্নাহ এখনো জলদসু্যদের নিয়ন্ত্রণে আছে। ওই এলাকায় আটলান্টা অপারেশনের যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন আছে। পোস্টে যুক্ত একটি সংক্ষিপ্ত ভিডিওতে এমভি আবদুলস্নাহর অদূরেই ইইউএনএভিএফওআর এর যুদ্ধজাহাজটিকে অবস্থান করতে দেখা গেছে। এছাড়া একটি হেলিকপ্টারও এমভি আবদুলস্নাহর কাছাকাছি চক্কর দিতে দেখা যাচ্ছে। পূর্ব আফ্রিকা উপকূলে জলদসু্যতা নির্মূলে কাজ করে যাওয়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেভাল ফোর্সও তাদের 'অপারেশন আটলান্টার' অংশ হিসেবে এমভি আবদুলস্নাহর ওপর নজর রাখছে বলে শুরু থেকেই জানিয়ে আসছে। বৃহস্পতিবার গভীর রাতের এক্স হ্যান্ডেলের পোস্টে সংযুক্ত তিনটি ছবির একটিতে ইইউএনএভিএফওআর- আটলান্টা অপারেশনের দুজন কমান্ডোকে এমভি আবদুলস্নাহর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। অন্য দুটি ছবির একটিতে এমভি আবদুলস্নাহর ওপর হেলিকপ্টার টহল দিতে এবং আরেক ছবিতে যুদ্ধ জাহাজটিকে দেখা যাচ্ছে। ইইউএনএভিএফওআর এর পোস্টে যুদ্ধজাহাজ মোতায়েনের কথা বলা হলেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে বলা হয়নি। এই পোস্টের সাথে সংযুক্ত একটি প্রতিবেদনে, ২০২৩ সালের ২৪ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ২১ মার্চ পর্যন্ত গত প্রায় চার মাসে এডেন উপসাগর ও সোমালি সমুদ্রসীমায় ২৪টি জলযানে দসু্যতা, ডাকাতি, ছিনতাই ও দখলচেষ্টার ঘটনার উলেস্নখ করা হয়। মোজাম্বিক থেকে ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে আরব আমিরাত যাওয়ার পথে গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগরের সোমালি জলদসু্যদের কবলে পড়ে এমভি আবদুলস্নাহ। জলদসু্যরা জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২৩ নাবিকের সবাইকে জিম্মি করে। নাবিকরা সবাই বাংলাদেশি। জলদসু্যদের সঙ্গে প্রথমবারের মতো কোনো তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে যোগাযোগ হওয়ার তথ্য গত বুধবার জানায় জাহাজটির মালিকপক্ষ। এর আগে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজটি এবং জিম্মি নাবিকদের জলদসু্যদের হাত থেকে মুক্ত করতে সোমালিয়ার পান্টল্যান্ড পুলিশ এবং আন্তর্জাতিক নৌবাহিনী অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে দেশটির পান্টল্যান্ড অঞ্চলের পুলিশের বরাতে সোমবার রয়টার্সে খবর এসেছে। কিন্তু নাবিকদের 'নিরাপত্তায়' এমভি আবদুলস্নাহ উদ্ধারে কোনো অভিযান চায় না জাহাজটির মালিক প্রতিষ্ঠান।