বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
স্বাগত মাহে রমজান

মৃতু্য যন্ত্রণা শুরুর আগেই তওবা

যাযাদি রিপোর্ট
  ২২ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
মৃতু্য যন্ত্রণা শুরুর আগেই তওবা

আজ থেকে শুরু হলো সিয়াম সাধনার মাস রমজানের মাগফিরাতের দশক। রমজানের প্রথম দশকে মুমিন বান্দাদের প্রতি আলস্নাহর বিশেষ রহমতের দরজা খুলে দেওয়া হয়। আর দ্বিতীয় দশকে তাদের জন্য রয়েছে মাগফিরাত। এ দশকে তারা অতীত জীবনের পাপ থেকে পবিত্র হয়ে যায়।

রমজান মাসে মুসলিম উম্মাহর জন্য সফলতার দ্বার উন্মুক্ত হয়ে থাকে। আলস্নাহর নৈকট্য লাভের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট সময় মাহে রমজানের মাগফিরাতের দশক। এ সময় আলস্নাহর পক্ষ থেকে ডেকে ডেকে বলা হয়- 'আছে কি কোনো ক্ষমাপ্রার্থী, যাকে আমি ক্ষমা করে দেব?'

সুতরাং এ মাসে বান্দাকে তওবা-ইস্তিগফারের মাধ্যমে নিজের জীবনকে পাপমুক্ত করার জন্য আলস্নাহর দরবারে করতে হবে কান্নাকাটি। অতীত জীবনের সব গোনাহর জন্য অনুশোচনা করে ভবিষ্যতে আর গোনাহ না করার প্রত্যয় নিয়ে আলস্নাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। যেসব গোনাহ ক্ষতিপূরণযোগ্য, সেগুলোর ক্ষতিপূরণ দিতে থাকা। নামাজ-রোজা কাজা হয়ে থাকলে হিসাব করে তা আদায় করা শুরু করতে হবে। আর অপরের কোনো হক বা টাকা-সম্পদ নিজের কাছে থাকলে তা হকদারকে বুঝিয়ে দিতে হবে। অন্যায়ভাবে কারও সম্মানহানি করলে, কাউকে কষ্ট দিলে তার কাছ থেকে যথাযথভাবে ক্ষমা গ্রহণ করাও জরুরি। তবে এ তাওবা করতে হবে মৃতু্যযন্ত্রণা শুরু হওয়ার আগেই। কারণ এ মুহূর্তে মানুষের ইমান আনা ও তাওবা করাতে কোনো লাভ নেই। (সূরা মুমিন : ১০০)।

ওলামায়ে আকরাম তাওবা করাকে ওয়াজিব বলে দাবি করেছেন। গোনাহ যদি আলস্নাহ এবং বান্দার

মধ্যকার বিষয় হয় এবং কোনো বান্দার সম্পৃক্ততা না থাকে, তবে তাওবা কবুল হওয়ার জন্য তিনটি শর্ত পালন করা আবশ্যক। প্রথম শর্ত- বান্দাকে গোনাহ থেকে বিরত থাকতে হবে। দ্বিতীয় শর্ত- বান্দাকে কৃত গোনাহের জন্য আলস্নাহর নিকট অনুতপ্ত হতে হবে। তৃতীয় শর্ত- পুনরায় গোনাহ না করার ব্যাপারে বান্দাকে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হতে হবে। এই তিনটি শর্তের মধ্যে যদি একটি শর্তও লংঘন হয় তাহলে তাওবা কখনো শুদ্ধ হবে না।

পক্ষান্তরে গোনাহের কাজটি যদি বান্দার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়, তবে সে ক্ষেত্রে উপরোলিস্নখিত তিনটি শর্তের সঙ্গে আরও একটি শর্ত যুক্ত হবে। এটি হচ্ছে- অপরাধী ব্যক্তি হকদার ব্যক্তির হক আদায় করতে হবে। অর্থাৎ কেউ যদি অন্যায়ভাবে ধন-মাল বা বিষয়-সম্পত্তি জোর-জবরদস্তির মাধ্যমে দখল করে নেয়, তবে তা ফেরত দিতে হবে। কারও প্রতি মিথ্যা অপবাদ দিলে অপরাধীকে নির্দিষ্ট হদ বা শাস্তি ভোগ করতে হবে, নতুবা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি থেকে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। এমনকি কারও অনুপস্থিতিতে গিবত-শেকায়াত করলে সে ব্যাপারেও ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে।

গোনাহ থেকে বাঁচার চেষ্টা করা যেমন মুমিনদের পরিচায়ক, তেমনি তাওবা করাও মুমিনদের অনন্য বৈশিষ্ট্য। তা সে সগিরা গুনাহ বা কবিরা গুনাহ যা-ই হোক। রাসূল সা: বলেন, 'কোনো বান্দা যদি সগিরা গুনাহ করে অনুতপ্ত না হয় এবং তাওবা না করে তবে তা আলস্নাহর কাছে কবিরা গুনাহ বলে বিবেচিত হয়। পক্ষান্তরে কেউ কবিরা গুনাহ করেও যদি অনুতপ্ত হয়ে তাওবা করে তবে তা আলস্নাহর কাছে সগিরা গুনাহ বলে গণ্য হয় এবং তিনি তা ক্ষমা করে দেন।' (তিরমিজি : ১৮৭১)।

গুনাহ করা যেমন বান্দার স্বভাব, তেমনি গুনাহ মাফ করাও আলস্নাহর স্বভাব এবং বিশেষ গুণ। আলস্নাহতায়ালা বলেন, 'যে তাকওয়ার নীতি অবলম্বন করে, তার গুনাহগুলো মিটিয়ে দেওয়া হবে এবং তার প্রতিদানকে বহুগুণে বৃদ্ধি করা হবে।' (সূরা তালাক : ৫)।

গুনাহ চার প্রকার। দুই প্রকার ক্ষমা করা হয়, বাকি দুই প্রকার ক্ষমা করা হয় না। প্রথমত, যে গুনাহ বান্দার অনিচ্ছায় হয়ে যায় তা ক্ষমা করা হয় এবং আজাব দেওয়া হয় না, নিয়ামতও বন্ধ করা হয় না। (সূরা আহজাব : ৫)। দ্বিতীয়ত, বান্দা কবিরা গুনাহ করার পর অনুতপ্ত হয়ে তাওবা করলে আলস্নাহ তা ক্ষমা করেন এবং তার পদমর্যাদা বৃদ্ধি করেন। (সূরা আলে ইমরান : ১৩৫)। তৃতীয়ত, বান্দা গুনাহ করার পর যদি অনুতপ্ত না হয় বা তাওবা না করে তাকে তুচ্ছ মনে করে, তবে তার গুনাহ তাওবা না করা পর্যন্ত ক্ষমা করা হয় না। চতুর্থত, যে ব্যক্তির কাছে পাপের কাজ পাপের বলে মনে হয় না এবং তা স্বাভাবিক মনে করে এ প্রকার গুনাহ ক্ষমা করা হয় না। এসব লোকই জাতির সবচেয়ে হতভাগ্য, যাদের আমল তাদের ধ্বংস করে দেয়। (ইবনে আবু দুনিয়া, আত-তাওবা : খ. ১,পৃ.৫৫)।

তবে কেউ যদি পরবর্তী সময়ে তার পাপের ব্যাপারে অনুতপ্ত হয় এবং খালেস তাওবা করে সংশ্লিষ্ট পাপ থেকে বিরত থাকে, তাহলে তাকে ক্ষমা করা হবে। কারণ আলস্নাহপাক নিরাশ হতে নিষেধ করেছেন। (সূরা জুমার : ৫৩)।

মুমিন ও মুনাফিকের গুনাহের মধ্যে পার্থক্য হলো মুমিন গুনাহকে পাহাড়সম বোঝা মনে করে আর মুনাফিক তাকে খুবই তুচ্ছ ও স্বাভাবিক মনে করে। (ইবনে আবু দুনিয়া, আত-তাওবা : খ. ১ পৃ. ৩৯)।

হাদিসে এসেছে, তওবার আলোয় কারও জীবন স্নাত হলে তিনি দিনদিন আলস্নাহর নৈকট্য লাভ ও পূর্ণতার দিকে যেতে থাকেন। তওবা করার পর যদি কোনো কারণে তা ভেঙে যায় তাহলে আবারও তওবা করা যায়। এভাবে কোনো বান্দার জীবনে হাজারবারও তওবার ঘটনা ঘটতে পারে। তবে তওবা করার সময় ভাঙার মনোভাব থাকা যাবে না এবং পূর্ণ সদিচ্ছা ও প্রত্যয় নিয়েই তওবা করতে হবে। রমজান আমাদের জীবনে যে শুদ্ধতার ও শুভ্রতার আবহ নিয়ে এসেছে, তাতে তওবা করে জীবনকে আলোকিত করার সুযোগ আমাদের গ্রহণ করা উচিত।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে