নির্বাচন কমিশন (ইসি) চার ধাপে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার প্রথম ধাপে ১৫২ উপজেলায় ভোট হবে আগামী ৮ মে।
জামানতের টাকা বাড়িয়ে এবং স্বতন্ত্রদের প্রার্থিতা সহজ করে বিধি সংশোধনের পর বৃহস্পতিবার কমিশন সভায় উপজেলা নির্বাচনের তফসিল চূড়ান্ত করা হয়।
৮ মে প্রথম ধাপের পর দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপ ২৩ ও ২৯ মে এবং শেষ ধাপের ভোট ৫ জুন হবে। এসব উপজেলায় চেয়ারম্যান, সাধারণ ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত ভাইস চেয়ারম্যান পদে হবে সাধারণ নির্বাচন।
কমিশন সভা শেষে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানান, ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী প্রথম ধাপে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ১৭ এপ্রিল, প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ এপ্রিল। ভোট হবে ৮ মে।
প্রথম ধাপের ১৫২ উপজেলার মধ্যে ২২ উপজেলায় ভোট হবে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে; বাকিগুলোতে ব্যালট পেপারে ভোটগ্রহণ হবে। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা এ ভোট চলবে।
উপজেলার ভোটে রিটার্নিং কর্মকর্তা হবেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এবং জ্যেষ্ঠ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা হবেন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা।
এর আগে ৪ মে, ১১ মে, ১৮ মে ও ২৫ মে চার ধাপে এ ভোটের আয়োজন করার পরিকল্পনা করেছিল নির্বাচন কমিশন। সেই পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনার কারণ ব্যাখ্যা করে অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, 'ঈদের ছুটি চিন্তা করে সবার সঙ্গে সমন্বয় করে ধাপগুলো কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে।'
নিয়ম বদল : এদিকে আইনে দলীয় প্রতীকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে ভোট করার সুযোগ থাকলেও স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বা মনোনয়ন না দেওয়ার কথা আগেই জানিয়ে রেখেছে ক্ষমতাসীন
\হআওয়ামী লীগ। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ নেতাদের নির্বাচন করতে হবে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে।
নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে নির্বাচন পরিচালনা বিধি ও আচরণবিধি সংশোধন করে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হওয়ার পথ সহজ করেছে। এতদিন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্রপ্রার্থী থেকে ২৫০ ভোটারের সমর্থনসূচক স্বাক্ষরের যে তালিকা মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হতো, এবার তা দিতে হবে না।
সেই সঙ্গে সাদা-কালোর সঙ্গে রঙিন পোস্টারও ছাপাতে পারবেন প্রার্থীরা। ভোটের প্রচারের সময়ও পাচ্ছেন বেশি। তবে জামানতের পরিমাণ বেড়েছে এবার।
চেয়ারম্যান পদে জামানতের পরিমাণ ১০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ লাখ টাকা করা হয়েছে। ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামানত ৫ হাজার টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৭৫ হাজার টাকা।
অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, 'প্রতীক বরাদ্দের পর প্রচার হবে। তবে তার আগে অনলাইনে এবং পাঁচজন মিলে প্রচার করতে পারবে।'
দেশে এখন ৪৯৫টি উপজেলা রয়েছে। চার ধাপে নির্বাচন উপযোগী ৪৮৫টির ভোট হবে, পরে মেয়াদোত্তীর্ণ হলে বাকিগুলোয় ভোট হবে।
১৯৮৫ সালে উপজেলা পরিষদ চালু হওয়ার পর ১৯৯০ ও ২০০৯ সালে একদিনেই ভোট হয়েছিল। ২০১৪ সালে চতুর্থ উপজেলা নির্বাচন ছয়টি ধাপে ও ২০১৯ সালে পাঁচ ধাপে পঞ্চম উপজেলা পরিষদের ভোট হয়।
প্রথম চারটি উপজেলা নির্বাচন নির্দলীয়ভাবে হলেও আইন সংশোধন হওয়ায় ২০১৭ সালের মার্চে মেয়াদোত্তীর্ণ তিনটি উপজেলায় দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হয়েছিল। পরে ২০১৯ সালে দলীয় প্রতীকে পূর্ণাঙ্গ নির্বাচন হয়।
দশম সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিলেও বিএনপি পরে নির্দলীয় উপজেলা ভোটে অংশ নিয়েছিল। গেল ১০ বছর ধরে উপজেলা ভোটে দলীয় প্রার্থী দেয়নি দলটি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বর্জন করার পর এবার স্থানীয় নির্বাচনেও অংশ না নেওয়ার দলীয় সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে রেখেছে তারা।
প্রথম ধাপের ১৫২ উপজেলা
রংপুর বিভাগের পঞ্চগড় জেলার সদর, তেঁতুলিয়া ও আটোয়ারী; ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী ও হরিপুর, নীলফামারী জেলার ডোমার ও ডিমলা; দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট, হাকিমপুর ও বিরামপুর; লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম ও হাতীবান্ধা; রংপুর জেলার কাউনিয়া ও পীরগাছা; কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী, চর রাজিবপুর ও চিলমারী; গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা ও ফুলছড়ি।
রাজশাহী বিভাগের জয়পুরহাট জেলার ক্ষেতলাল, কালাই ও আক্কেলপুর; বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও গাবতলী; চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোল, গোমস্তাপুর ও ভোলাহাট; নওগাঁ জেলার ধামইরহাট, পত্নীতলা, মহাদেবপুর ও বদলগাছী; রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী ও তানোর; নাটোর জেলার সদর, নলডাঙ্গা ও সিংড়া; সিরাজগঞ্জ জেলার সদর (ইভিএম), কাজিপুর (ইভিএম) ও বেলকুচি (ইভিএম); পাবনা জেলার সাঁথিয়া (ইভিএম), সুজানগর (ইভিএম) ও বেড়া (ইভিএম)।
খুলনা বিভাগের মেহেরপুর জেলার সদর ও মুজিবনগর; কুষ্টিয়া জেলার খোকসা, সদর ও কুমারখালী; চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর ও দামুড়হুদা, ঝিনাইদহ জেলার সদর ও কালীগঞ্জ; যশোর জেলার মনিরামপুর (ইভিএম) ও কেশবপুর (ইভিএম); মাগুরা জেলার সদর ও শ্রীপুর; নড়াইল জেলার কালিয়া; বাগেরহাট জেলার সদর, রামপাল ও কচুয়া; সাতক্ষীরা জেলার কালীগঞ্জ ও শ্যামনগর।
বরিশাল বিভাগের বরিশাল জেলা সদর ও বাকেরগঞ্জ; পিরোজপুর জেলা সদর (ইভিএম), নাজিরপুর (ইভিএম) ও ইন্দুরকানী (ইভিএম)।
ঢাকা বিভাগের ঢাকা জেলার দোহার, নবাবগঞ্জ ও কেরানীগঞ্জ; গোপালগঞ্জ জেলার সদর, কোটালীপাড়া ও টুঙ্গিপাড়া; নারায়ণগঞ্জ জেলার সদর ও বন্দর; গাজীপুর জেলার সদর, কালীগঞ্জ ও কাপাসিয়া; রাজবাড়ী জেলার কালুখালী ও পাংশা; মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর (ইভিএম) ও হরিরামপুর (ইভিএম); ফরিদপুর জেলার চরভদ্রাসন, মধুখালী ও সদর; মাদারীপুর জেলার সদর, শিবচর ও রাজৈর, শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া (ইভিএম) ও ভেদরগঞ্জ (ইভিএম); নরসিংহী জেলার সদর ও পলাশ, টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ী, মধুপুর ও গোপালপুর; মুন্সীগঞ্জ জেলার সদর ও গজারিয়া; কিশোরগঞ্জ জেলার সদর, হোসেনপুর ও পাকুন্দিয়া।
ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া ও ফুলপুর; জামালপুর জেলার সদর (ইভিএম) ও সরিষাবাড়ী (ইভিএম); শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী, নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর ও কলমাকান্দা।
সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই ও শালস্না; সিলেট জেলার সদর, বিশ্বনাথ, গোলাপগঞ্জ ও দক্ষিণ সুরমা; মৌলভীবাজার জেলার জুড়ি, কুলাউড়া ও বড়লেখা; হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ ও বানিাচং।
চট্টগ্রাম বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর ও সরাইল, কুমিলস্না জেলার মনোহরগঞ্জ, লাকসাম, লাঙ্গলকোট ও মেঘনা; চাঁদপুর জেলার মতলব-উত্তর (ইভিএম) ও মতলব দক্ষিণ (ইভিএম); ফেনী জেলার পরশুরাম ও ফুলগাজী; নোয়াখালী জেলার সুবর্ণচর ও হাতিয়া; লক্ষ্ণীপুর জেলার রামগতি ও কমলনগর, চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই, সীতাকুন্ডু ও সন্দ্বীপ; কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া (ইভিএম), সদর (ইভিএম) ও মহেশখালী (ইভিএম); খাগড়াছড়ি জেলার মনিকছড়ি, লক্ষ্ণীছড়ি, রামগড় ও মাটিরাঙ্গা; রাঙ্গামাটি জেলার সদর, কাউখালী, জুরাছড়ি ও বরকল; বান্দরবান জেলার সদর, রোয়াংছড়ি, থানছি ও আলীকদম।
দলগুলোকে হিসাব জমা
দেওয়ার তাগাদা ইসির
এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব দাখিলের জন্য তাগাদা দিয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনে ৯০ দিনের মধ্যে হিসাব দাখিলের বাধ্যবাধকতা তার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে বৃহস্পতিবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে এ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।
সংবাদ বিজ্ঞাপিত বলা হয়, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর ৪৪গগগ(১) ও (৫) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচন সমাপ্ত হওয়ার ৯০ (নব্বই) দিনের মধ্যে অর্থাৎ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ব্যয় বিবরণী নির্বাচন কমিশনে দাখিল করার বিধান রয়েছে। নির্বাচন কমিশন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ব্যয় বিবরণী দাখিলের জন্য নির্দেশনা প্রদান করেছেন।
উলেস্নখ্য, গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।