বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
স্বাগত মাহে রমজান

মুত্তাকি হওয়া ছাড়া জান্নাত লাভ অসম্ভব

যাযাদি রিপোর্ট
  ২১ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
মুত্তাকি হওয়া ছাড়া জান্নাত লাভ অসম্ভব

সিয়াম সাধনার মাস রমজানুল মোবারকের রহমতের দশকের আজ শেষ দিন। আগামীকাল থেকে শুরু হবে মাগফিরাত বা ক্ষমার দশক। আলস্নাহ রাব্বুল আলামীন সবসময় বান্দার প্রতি করুণাসিক্ত। কিন্তু রহমতের দশ দিনে আলস্নাহ তার রোজাদার বান্দাদের প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেন। আর সবসময় তিনি বান্দার গুনাহ মাফ করলেও মাগফিরাতের দশকে তার ক্ষমা অবারিতভাবে দুনিয়াবাসীর প্রতি বর্ষিত হয়।

হাদিসে এসেছে, আমাদের শ্রষ্টা মহান আলস্নাহ আলামীন যত বিধি-বিধান আমাদের দান করেছেন, তা সবই আমাদের সার্বিক কল্যাণের জন্য। যদিও অনেক সময় আমাদের অতি সামান্য জ্ঞানের দ্বারা তা সম্যক উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হই। যেমন মাহে রমজানে সিয়াম পালন করা ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভের অন্যতম।

এ প্রসঙ্গে আলস্নাহ নির্দেশ প্রদান করেছেন, 'তোমাদের মধ্যে যারা এ মাস পাবে, তারা যেন এ মাসে সিয়াম পালন করে। (সুরা বাকারা : ১৮৫) কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয়, শুধু কাফির নয়, অসংখ্য মুসলমানের হৃদয়েও রয়েছে এ সিয়ামের লক্ষ্য উদ্দেশ্য নিয়ে সংশয়। সে কারণেই দেখা যায়, অসংখ্য মুসলমান কোনো শরিয়তি ওজর ছাড়াই দ্বিধাহীনচিত্তে সিয়াম ত্যাগ করছে। মুষ্টিমেয় যারা এ সিয়াম বা রোজা পালন করেন, তাদের অনেকেই আবার জানেন না, কেন এ সিয়াম পালন করছি, কী মহতি লক্ষ্য উদ্দেশ্যে আলস্নাহ তায়ালা আমাদের ওপর এ সিয়ামকে ফরজ করেছেন। সে কারণেই দেখা যায়, অনেক রোজাদার জীবনে শুধু এক-দুইবার কি তিনবার

নয়, অসংখ্যবার এ মহিমান্বিত সিয়াম পালনের সৌভাগ্য তার হয়েছে। কিন্তু সামান্যও পরিলক্ষিত হয়নি তার জীবনে ইতিবাচক কোনো পরিবর্তন আর খুঁজে পাওয়া যায়নি সিয়ামের কোনো নিদর্শন। সিয়াম সাধনার আগেও তার জীবনাচরণ যেমন ছিল, দীর্ঘদিন সিয়াম সাধনার পরেও ঠিক তেমনি রয়ে গেছেন।

ইরশাদ হচ্ছে 'হে ইমানদারগণ! তোমাদের জন্য সিয়াম পালন ফরজ করে দেওয়া হলো যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপরও ফরজ করা হয়েছিল। যাতে তোমরা মুত্তাকি বা প্রকৃত খোদাভীতির গুণাবলি অর্জনে সক্ষম হও। (সুরা বাকারা : ১৮৩)

এ আয়াতের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে যে মুত্তাকি হওয়ার জন্যই আলস্নাহ পাক সিয়াম সাধনাকে আমাদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় করেছেন।

মুমিন জীবনে মুত্তাকি হওয়ার প্রয়োজনীয়তা কতটুকু? এ প্রশ্নের জবাব অসংখ্য আয়াত ও হাদিস সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। কোরআনের একাধিক আয়াতে আছে 'মুত্তাকি হওয়া ছাড়া জান্নাতে প্রবেশ অসম্ভব। কেননা জান্নাত তৈরি করা হয়েছে মুত্তাকিদের জন্য।' যেমন আলস্নাহর ঘোষণা 'তোমরা তীব্রগতিতে অগ্রসর হও স্বীয় প্রতিপালকের ক্ষমার দিকে এবং সেই জান্নাতের দিকে যার বিস্তৃতি আসমান ও জমিনের ন্যায়, যা নির্মিত হয়েছে মুত্তাকিদের জন্য। (আলে-ইমরান : ১৩৩) সুতরাং আমি যদি সত্যিই জান্নাত প্রাপ্তির প্রকৃত পথযাত্রী হতে চাই, তবে অবশ্যই আমাকে মুত্তাকি হতে হবে। আর জান্নাত প্রাপ্তির জন্য মুত্তাকি হওয়ার শর্ত এ কারণে যে মুত্তাকি হওয়া ছাড়া একজন মানুষ প্রকৃত মানুষ হতে পারে না। এ গুণ অর্জনের মাধ্যমেই একজন মানুষ তার যাবতীয় লোভ-লালসা ও চাওয়া-পাওয়া এবং প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, সব ধরনের অন্যায় বর্জনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে পারে। কোনো প্রলোভনেই সে প্রলুব্ধ হয় না। কেননা তার অন্তঃকরণে এমনই এক মহাপরাক্রমশালীর ভয় সদা বিরাজমান থাকে। একজন মুত্তাকির মনে সব সময় ভয় জাগ্রত থাকে, আমি যে কোনো অন্যায় কাজে পৃথিবীর সব শক্তিকে আড়াল করে লিপ্ত হতে পারি, কেউ আমাকে হয়তো দেখবে না অথবা আমার এত শক্তি রয়েছে যে কেউ দেখলেও আমাকে কিছু করতে পারবে না। কিন্তু আমি কোনো অবস্থাতেই মহামহিয়ান আলস্নাহর কুদরতি চোখকে আড়াল করতে পারব না, যত গোপনেই হোক না কেন। আর তিনিই হচ্ছেন সব শক্তির আধার। দুনিয়াতেও যখন ইচ্ছা যেকোনো শাস্তি প্রদানে তিনি সক্ষম। তা ছাড়া এ নশ্বর পৃথিবী ছেড়ে যখন আমি স্থায়ী আখিরাতে পাড়ি জমাব, তখন এ দুনিয়ার যাবতীয় কর্মকান্ডে হিসাব পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তাঁর কাছে আমাকে দিতেই হবে।'

একজন মুত্তাকির এ চিরন্তন বাস্তবতার অনুভূতি তখন তার জীবনের যাবতীয় অন্যায় কর্মকান্ডের প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। আর এটাই হচ্ছে মুত্তাকির বৈশিষ্ট্য।

আর একজন মুসলমানের মুত্তাকি হওয়ার বাস্তব প্রশিক্ষণ কর্মশালা হচ্ছে সিয়াম পালন। কেননা একজন রোজাদার মহান আলস্নাহর নির্দেশনা মতে সুবহে সাদিকের আগেই স্ত্রী সম্ভোগ ও যাবতীয় পানাহার বন্ধ করে অপেক্ষায় থাকে কখন সূর্যাস্ত যাবে, তখনই পানাহার করব। এর আগে তার প্রবৃত্তি যতই প্রলুব্ধ হোক, পিপাসা তাকে যতই কাতর করুক, ক্ষুধার যন্ত্রণা যতই অনুভব করুক সবই নীরবে সহ্য করে অপেক্ষায় থাকেন ইফতারের। একজন মুত্তাকির তাকওয়ার অনুভূতিই তাকে বিরত রাখে শত কষ্টের মধ্যেও পানাহার পরিত্যাগে।

পবিত্র সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আরও অনেক উত্তম গুণাবলি অর্জিত হয়। যেমন আত্মিক পবিত্রতা, চিন্তার বিশুদ্ধতা, নৈতিক পরিচ্ছন্নতা, চারিত্রিক উন্নয়ন, রুহানি তৃপ্তি, ধৈর্য, মিতব্যয়ী, আলস্নাহপ্রেমে নতুন উদ্যম, ভোগের বিপরীতে ত্যাগের অনুপ্রেরণা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে