জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকার আত্মহননের ঘটনাকে 'টেকনিক্যাল মার্ডার' হিসেবে আখ্যা দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিপীড়ন ও অপমৃতু্য ঠেকাতে পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছেন। বুধবার জবির ক্যাফেটেরিয়ায় দুপুর দেড়টায় 'নিপীড়নের বিরুদ্ধে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়'-এর ব্যানারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা এ দাবি জানান।
এদিকে অবন্তিকার আত্মহননের ঘটনায় অভিযুক্ত তার সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকীর দুইদিন এবং অন্য অভিযুক্ত সাবেক সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামের একদিনের রিমান্ড শেষে আদালতের নির্দেশ কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বুধবার কুমিলস্নার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দ্বীন ইসলামের জামিনের আবেদন করেন তার আইনজীবীরা। আদালতে তার জামিন নামঞ্জুর হয়।
বুধবার দুপুরে জবির ক্যাফেটেরিয়ায় সংবাদ সম্মেলনে দাবিগুলো উত্থাপনকালে ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের শিক্ষার্থী শাহ্ সাকিব সোহবান বলেন, '২০২২ সালের ৮ মে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী অংকন বিশ্বাসের রহস্যজনক মৃতু্যর বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেন আইনগত ব্যবস্থা নেয়। এ ছাড়া নিপীড়নের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে সেজন্য সুস্পষ্ট রোডম্যাপ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আমাদের কাছে দিতে হবে।'
শিক্ষার্থীদের পাঁচ দফা দাবি হলো- ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার 'টেকনিক্যাল মার্ডার'-এর সব প্রমাণ আমলে নিতে হবে। এ ছাড়া দ্রম্নততম সময়ে বিচারবিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় আইন ও রাষ্ট্রীয় আইনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে; দ্রম্নততম সময়ে সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্ত যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেল কার্যকর
করতে হবে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভয়মুক্ত গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করতে হবে; অংকন বিশ্বাসসহ আগে দায়েরকৃত সব অভিযোগের দ্রম্নত তদন্ত ও সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে হবে; আগের প্রক্টরিয়াল বডির বিরুদ্ধে গ্রহণযোগ্য তদন্ত করতে হবে। এ ছাড়া দোষীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে এবং ফাইরুজ অবন্তিকা ও অংকন বিশ্বাসের স্মৃতিতে ক্যাম্পাসে দুটি স্থায়ী ফলক নির্মাণ করতে হবে।
জামিন নামঞ্জুর : সাবেক সহকারী
প্রক্টর ও আম্মান কারাগারে
অবন্তিকার 'আত্মহত্যা'র ঘটনায় গ্রেপ্তার তার সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকীকে দুই দিনের রিমান্ড শেষে বুধবার আদালতের নির্দেশ কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অন্যদিকে, অভিযুক্ত সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে একদিনের রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করা হলে তার আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করেন। তবে কুমিলস্নার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু বকর সিদ্দিক তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
বুধবার দুপুর ১টায় কালো মাইক্রোবাসে করে পুলিশের প্রায় ১০ সদস্যের একটি দলের নিরাপত্তা বলয়ে আম্মান সিদ্দিকীকে আদালতে আনা হয়। এ সময় তার মুখে মাস্ক পরা ছিল।
আইনজীবী রফিকুল ইসলাম হিরা বলেন, 'আদালত আম্মান সিদ্দিকীকে কারাগারে প্রেরণ করেছে। এ ছাড়া তদন্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন রিমান্ডে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। আগামী রোববারের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।'
রোববার রাতে জবি শিক্ষার্থী আম্মান সিদ্দিকী ও সাবেক সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে গ্রেপ্তারের পর কুমিলস্না কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে কুমিলস্নার কোতোয়ালি মডেল থানায় অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম বাদী হয়ে মামলা করেন। পরে পুলিশ আম্মান সিদ্দিকীর পাঁচ দিন এবং সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামের দুই দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করে। মামলার আসামি সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকীকে দুই দিন এবং সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামের একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সৈয়দ নুরুর রহমান জানান, অবন্তিকার 'আত্মহত্যা'র ঘটনায় গ্রেপ্তার বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে এক?দি?নের রিমান্ড শে?ষে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। বুধবার দ্বীন ইসলামের জামিন আবেদন করেন তার আইনজীবীরা। কুমিলস্নার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু বকর সিদ্দিক তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন।
প্রসঙ্গত, ১৫ মার্চ শুক্রবার গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী ফাইরুজ অবন্তিকা। এর আগে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে তার সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকী ও সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে দায়ী করেন তিনি। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. জাকির হোসেনকে আহ্বায়ক করে ৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।