রোজাদারকে ইফতার করালে হাশরের দিন কাওছারের পানি

স্বাগত মাহে রমজান

প্রকাশ | ২০ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
উম্মতে মোহাম্মদীর প্রতি আলস্নাহতায়ালার বিশেষ রহমত নাজিলের মাস রমজানুল মোবারকের আজ নবম দিবস। আর মাত্র এক দিন পরই রহমতের দশক শেষ হয়ে যাবে। তাই ঈমানদার মুসলমানরা বেশি বেশি ইবাদত করে আলস্নাহর নৈকট্য লাভের প্রার্থনা করছেন। হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে পানি পান করাবে, আলস্নাহতাআলা তাকে হাউজে কাওছার থেকে এমন পানি পান করাবেন, যার পর জান্নাতে প্রবেশ করা পর্যন্ত আর পিপাসা লাগবে না।' (বায়হাকী, ইবনে খুজাইমা) সাহাবায়ে কিরাম আরজ করলেন, হে রাসুলুলস্নাহ! আমাদের প্রত্যেকেই এমন সামর্থ্য রাখে না যে, রোজাদারকে ইফতার করাতে পারে। নবী করিম (সা.) বললেন, এই সওয়াব তো আলস্নাহ তাআলা একটি খেজুর খাওয়ালে অথবা এক ঢোক পানি পান করালে অথবা এক চুমুক দুধ পান করালেও দান করবেন। পবিত্র কোরআন ও হাদিস শরিফ থেকে জানা যায়, কিয়ামতের ময়দানে বেহেশত থেকে প্রবাহিত দুটো পানির ধারা এনে একটা বিশাল হাউজে জমা করা হবে। এ হাউজটার নাম হলো 'হাউজে কাওছার'। ওই হাউজের নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা মহান আলস্নাহ তাআলা হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর হাতে দান করবেন। যারা পৃথিবীতে ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম মাহে রমজানের রোজা পালন করবেন, রাসুলুলস্নাহ (সা.) তাদের ওই হাউজ থেকে পানি পান করাবেন। হ পৃষ্ঠা ২ কলাম ৫ এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আলস্নাহ তাআলা ইরশাদ করেন, 'আমি অবশ্যই আপনাকে [হযরত মুহাম্মদ (সা.)] কাওছার দান করেছি।' (সূরা আল-কাওছার, আয়াত-১) দয়াময় আলস্নাহর অপূর্ব করুণাধারা হাউজে কাওছার। বুখারি শরিফের হাদিসে পাওয়া যায়, নবী করিম (সা.) সেদিন হাউজে কাওছারের পাশে অবস্থান করবেন। হাশরের ময়দানে প্রচন্ড উত্তাপে তৃষ্ণার্ত মানুষ শুধু পানি পানি বলে আর্তচিৎকার করবে। তখন নবী করিম (সা.) তাঁর অনুসারীদের পানি পান করাবেন। সাহাল বিন সাদ (রা.) বলেন, আমি নবী করিম (সা.) কে বলতে শুনেছি যে, (যখন আমি হাউজে কাউছারের পানি পান করাব তখন) অবশ্যই আমার কাছে এমন কিছু লোক আসবে, যাদের আমি চিনি এবং তারাও আমাকে চিনতে পারবে। অতঃপর তাদের ও আমার মধ্যে আড়াল করে দেওয়া হবে। তখন আমি (ফেরেস্তাদের) বলব-এরাতো আমার উম্মত! তখন আমাকে বলা হবে-আপনি জানেন না যে, তারা আপনার পর কি সব নতুন নতুন কাজের আবিস্কার করেছে। অতঃপর আমি বলল-যারা আমার পর আমার দ্বীনের পরিবর্তন সাধন করেছে, তারা দূর হোক, তারা দূর হোক।'-[বুখারি শরিফ, হাদিস নম্বর-৬৬৪৩] রাসুলুলস্নাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো বিদআতিকে সাহায্য করে, আলস্নাহ্‌? তাকে লানত করেন।'-[মুসলিম] রাসুলুলস্নাহ (সা.) বলেছেন, শুনে রাখো! হাউজে কাউছারের কাছে তোমাদের সঙ্গে আমার দেখা হবে। তোমাদের সংখ্যার আধিক্য নিয়ে আমি গর্ব করব। সেই দিন তোমরা আমার চেহারা মলিন করে দিও না। জেনে রাখো! আমি সেদিন অনেক মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করার চেষ্টা চালাব। কিন্তু তাদের অনেককে আমার থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়া হবে। রাসুলুলাহ (সা.) বলেছেন, 'আমি তোমাদের আমার এবং আমার পরবর্তী সঠিক পথপ্রাপ্ত খলিফাদের অনুসরণের ব্যাপারে তাগিদ দিচ্ছি; তোমরা একে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে থাকো। [দ্বীনের মধ্যে] নব উদ্ভাবিত বিষয় সম্পর্কে সাবধান হও, কেননা, প্রতিটি নবোদ্ভাবিত বিষয়ই বিদআত এবং প্রতিটি বিদাতই হচ্ছে পথভ্রষ্টতা।'-[আহমাদ, তিরমিযী] হাদিসে কুদসিতে বর্ণিত আছে, 'আলস্নাহ তাআলা কিয়ামতের দিন বলবেন : হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ ছিলাম, তুমি আমার সেবা করোনি। সে বলবে : হে প্রভু, আপনি তো জগৎসমূহের প্রতিপালক! কীভাবে আপনার সেবা করব? আলস্নাহ বলবেন : আমার অমুক বান্দা অসুস্থ ছিল, তুমি তার সেবা করোনি। তুমি কি জানতে না, তার সেবা করলে তুমি আমাকে তার কাছে পেতে? রোজা রেখে আর্তমানবতার প্রতি সাহায্য-সহানুভূতি ও দয়া-মায়া প্রদর্শন করলে আলস্নাহ তাআলা অত্যন্ত খুশি হন এবং রোজাদারের ইহকালীন ও পরকালীন জীবনে সফলতা আসে। এ সম্পর্কে নবী করিম (সা.) পুরস্কারের কথা ঘোষণা করেছেন, 'এক মুসলমান অন্য ক্ষুধার্ত অবস্থায় খাদ্য দান করলে আলস্নাহ তাকে জান্নাতের সুস্বাদু ফল দান করবেন। কোনো মুসলমানকে তৃষ্ণার্ত অবস্থায় পানি পান করালে আলস্নাহ তাকে জান্নাতের সিলমোহরকৃত পাত্র থেকে পবিত্র পানি পান করাবেন।' (আবু দাউদ) পবিত্র কোরআনে উলেস্নখ করা হয়েছে, আলস্নাহ তার মুমিন বান্দাদের জন্য পরকালে যে বন্দোবস্ত রেখেছেন, এসব নিয়ামত কোনো দিন কেউ চোখ দেখেনি। কোনো দিন কোনো মানুষ কল্পনাও করতে পারেনি।