শীত শেষে ধীরে ধীরে তাপ ছড়াচ্ছে প্রকৃতি। প্রতিদিনই বাড়ছে গরম। গ্রীষ্মের আগেই প্রখরতা দেখাচ্ছে বসন্তের মধ্যভাগ। ভ্যাপসা গরমের মধ্যেই স্বস্তির বার্তা নিয়ে এলো বৃষ্টি। মঙ্গলবার দুপুরের পর ও সন্ধ্যার আগে ঢাকায় দুই দফায় ঝড়ো হাওয়াসহ তুমুল বৃষ্টি হয়েছে রাজধানীতে। এদিন সকালে গরমে তেঁতে ওঠা রাজধানীতে এই বৃষ্টি নগরবাসীর জন্য অনেকটাই স্বস্তি এনে দিয়েছে। কমেছে তাপমাত্রা। তবে হঠাৎ মুষলধারার বৃষ্টিতে নিউমার্কেট এলাকায় হাঁটুপানি জমে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েন এখানে আসা ক্রেতা, ব্যবসায়ী এবং রাস্তায় চলাচলকারী নগরবাসী। অন্যদিকে বিকালে বৃষ্টির মধ্যে 'কারিগরি জটিলতা'য় আধা ঘণ্টা বন্ধ রাখা হয় রাজধানীবাসীর যাতায়াতের অন্যতম বাহন হয়ে ওঠা মেট্রোরেল। এ সময় স্টেশনে স্টেশনে অপক্ষেমাণ যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি হয়েছে। ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টির কারণে কমে এসেছে তাপমাত্রা। মঙ্গলবার সকাল থেকে আকাশ ছিল মেঘলা। তবে তাপমাত্রা ছিল বেশি। গুমোট গরমে তপ্ত ছিল রাজধানী। এরপর বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আকাশের মেঘের
ঘনঘটা বাড়তে শুরু করে। বেলা আড়াইটা নাগাদ রাজধানীর আকাশ কালো হয়ে আসে। পৌনে তিনটার ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে শুরু হয় বৃষ্টি। মুষলধারে বৃষ্টিতে ভিজে যায় ঢাকার রাস্তাঘাট। এ সময় অফিসে থেকে বের হয়ে ভোগান্তিতেও পড়েন অনেকেই।
মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটায় শুরু হওয়া বৃষ্টি বিরামহীনভাবে চলে বিকেল সাড়ে ৩টা নাগাদ। ঘণ্টাব্যাপী এ বৃষ্টিতে নগরীর অনেকে প্রধান সড়কসহ অলিগলিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হতে দেখা গেছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েন পথচারীরা।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও আশপাশের এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, খুলনা বিভাগের অনেক জায়গায়, রাজশাহী, ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম এবং সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
তাপ প্রবাহের বিষয়ে বলা হয়েছে, রাঙামাটি ও নীলফামারী জেলাসহ সীতাকুন্ড অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু তাপ প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা কমতে পারে। সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।
বুধবারের পূর্বাভাসে বলা হয়, রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। এছাড়া আগামী দুই দিন বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
নিউমার্কেটে হাঁটুপানি, ভোগান্তি
মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৩টায় নিউমার্কেট এলাকায় দেখা যায়, বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে সড়কের একাংশ। অনেকেই বাধ্য হয়ে হাঁটু পর্যন্ত কাপড় উঁচিয়ে রাস্তা পার হচ্ছেন। এছাড়া কেনাকাটা করতে আসা অনেকে ক্রেতাই বৃষ্টিতে ভিজেছেন। তারা ভেজা কাপড়েই বাকি কেনাকাটা সেরেছেন।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে নিউমার্কেটে কাপড় কিনতে আসা দিলরুবা আক্তার বলেন, 'ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছিলাম। বৃষ্টিতে ভিজে গেছি। কোথাও দাঁড়ানোর জায়গা ছিল না। এখন ভেজা কাপড়েই বাসায় ফিরতে হবে।'
নিউমার্কেট এলাকায় রিকশাচালক সুজন মিয়া বলেন, 'বৃষ্টিতে ভিজে গেছি। এখন ভেজা কাপড়েই রিকশা চালাতে হচ্ছে। গরিব মানুষ, রিকশা চালিয়ে খাই, কী আর করমু। আমাগো আর রোদ-বৃষ্টি!'
রমজানে দুপুর থেকেই ইফতারির পসরা সাজিয়ে বসেন নিউমার্কেটের অনেক বিক্রেতা। তারা সাধারণত রাস্তার পাশে ফুটপাতে এসব খাবারের দোকান দিয়ে থাকেন। দুপুরের হঠাৎ বৃষ্টিতে বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে তাদের। ইফতারি বিক্রেতা জামাল বলেন, 'এ এলাকায় দুপুর থেকেই ইফতারি বিক্রি শুরু হয়। আমরা খাবার সাজিয়ে বসেছিলাম, এর মধ্যেই বৃষ্টি। পলিথিন দিয়ে ঢেকে কোনোমতে খাবারগুলো ভালো রাখছি।'
আধা ঘণ্টা মেট্রোরেল বন্ধ
এদিকে ঝুম বৃষ্টির মধ্যে 'কারিগরি জটিলতায়' আধা ঘণ্টা বন্ধ রাখা হয় মেট্রোরেল। এ সময় স্টেশনে স্টেশনে যাত্রীদের ভিড় উপচেপড়ে। ইফতারের আগে ভোগান্তিতে পড়েন মানুষ। বিকাল পৌনে পাঁচটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, ট্রেনের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষার পরর্ যাপিড ও এমআরটি পাসধারীদের বের হওয়ার জন্য মেশিন 'জিরো ব্যালেন্স' করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি যারা সিঙ্গেল ট্রিপের জন্য টিকিট কেটেছিলেন তাদের টাকা ফেরত দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনের কাস্টমার সার্ভিস অফিসার শরিফ সরদার বলেন, 'বৃষ্টি হয়েছে, টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে ট্রেন কিছুক্ষণ বন্ধ আছে।'
পরে বিকাল ৫টা ২০ মিনিটে ট্রেন চলাচল আবার স্বাভাবিক হয়।