বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ড. ইউনূসের সাজার রায় স্থগিতের আদেশ বাতিল

যাযাদি রিপোর্ট
  ১৯ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
ড. ইউনূসের সাজার রায় স্থগিতের আদেশ বাতিল

শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ গ্রামীণ টেলিকমের চার শীর্ষ কর্মকর্তার দোষী সাব্যস্তকরণ (কনভিকশন) ও সাজার রায় স্থগিত করে শ্রম আপিল ট্রাইবু্যনালের আদেশ বাতিল ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।

সোমবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম

তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।

ইউনূসের পক্ষে হাইকোর্টে শুনানি করেন আবদুলস্নাহ আল মামুন। কলকারখানা অধিদপ্তরের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান।

পরে খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, শ্রম আদালতের দেওয়া দন্ডের রায় ও আদেশ (জাজমেন্ট অ্যান্ড অর্ডার) স্থগিত করেছিল শ্রম আপিলের ট্রাইবু্যনাল। কিন্তু রায়ে সাজা ও দন্ড দুটি বিষয়। সাজা স্থগিত করা যায়, দন্ড স্থগিত করা যায় না। হাইকোর্ট দন্ড স্থগিতের অংশ বাতিল করে বাকি তিনটি বিষয় স্থগিত করেছেন।

তিনি আরও বলেন, 'রায়ে চারটি বিষয় আছে। এক- দন্ড স্থগিত হবে না, বহাল থাকবে। দুই- সাজাভোগ, তিন-জরিমানা এবং চার-কয়েকটি বিষয়ে নির্দেশনা এ তিনটি স্থগিত থাকবে।'

এদিকে, রায়ে আদালত বলেছেন, চারজনের বিরুদ্ধে দেওয়া কনভিকশন (দোষী সাব্যস্তকরণ) কার্যকর থাকবে আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত। চারজন (ড. ইউনূসসহ চারজন কর্মকর্তা) জামিন পেয়েছেন। তাই সাজা স্থগিত আছে। যতক্ষণ তারা জামিনে আছেন, সাজা স্থগিত থাকবে। শ্রম আদালতের দেওয়া জরিমানা স্থগিত থাকবে। রায়ে বাস্তবায়নযোগ্য নির্দেশনা আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত থাকবে। যত দ্রম্নত সম্ভব আপিল নিষ্পত্তি করবেন আপিল ট্রাইবু্যনাল। দেশের বাইরে গেলে তাদের (ইউনূসসহ চারজন কর্মকর্তা) সংশ্লিষ্ট আদালতকে জানাতে হবে।

শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের করা এই মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. ইউনূসসহ চারজনকে ছয় মাস করে বিনাশ্রম কারাদন্ড দেন ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালত। এ ছাড়া প্রত্যেককে ৩০ হাজার টাকা অর্থদন্ড দেওয়া হয়। গত ১ জানুয়ারি এই রায় দেওয়া হয়।

রায়ের বিরুদ্ধে গত ২৮ জানুয়ারি আপিল করেন ড. ইউনূসসহ চারজন। শ্রম আপিল ট্রাইবু্যনাল এই আপিল সেদিন শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। তৃতীয় শ্রম আদালতের দেওয়া রায় ৩ মার্চ পর্যন্ত স্থগিত করে চারজনকে জামিন দেন শ্রম আপিল ট্রাইবু্যনাল। অপর তিনজন হলেন গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুর জাহান বেগম ও মো. শাহজাহান।

এ অবস্থায় তৃতীয় শ্রম আদালতের রায় ও আদেশ স্থগিত করে শ্রম আপিল ট্রাইবু্যনালের আদেশের অংশবিশেষের বৈধতা নিয়ে গত ৪ ফেব্রম্নয়ারি হাইকোর্টে আবেদন (ক্রিমিনাল রিভিশন) করেন মামলার বাদী।

বাদী কলকারখানা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শকের করা এই আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ৫ ফেব্রম্নয়ারি হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। রুলে তৃতীয় শ্রম আদালতের ১ জানুয়ারি দেওয়া রায় ও আদেশের কার্যক্রম স্থগিত করে শ্রম আপিল ট্রাইবু্যনালের ২৮ জানুয়ারি দেওয়া আদেশ কেন বাতিল হবে না তা জানতে চাওয়া হয়। রুলের ওপর ৬ মার্চ শুনানি শুরু হয়। রুলের ওপর ১৪ মার্চ শুনানি শেষে আদালত ১৮ মার্চ রায়ের জন্য তারিখ ধার্য করেন। কয়েকটি দিক বিবেচনায় রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করে সোমবার রায় দেওয়া হয়।

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। ড. ইউনূসসহ চারজনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আবদুলস্নাহ আল মামুন। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী খাজা তানভীর আহমেদ।

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান বাদী হয়ে মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে এ মামলা করেন। মামলায় শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে নির্দিষ্ট লভ্যাংশ জমা না দেওয়া, শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী না করা, গণছুটি নগদায়ন না করার অভিযোগ আনা হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে