পাঁচ দিনের ব্যবধানে পাবনার সুজানগর ও সাঁথিয়া উপজেলায় প্রতি মণ পেঁয়াজে ১৪শ' থেকে ১৫শ' টাকা কমেছে। কয়েকদিন আগেও এই উপজেলার বাজারগুলোতে প্রতি মণ পেঁয়াজ ৩ হাজার ৪শ' থেকে ৩ হাজার ৫শ' টাকায় বিক্রি হয়েছে। ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির খবরেই দাম পড়েছে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে ভারতীয় পেঁয়াজ দেশি বাজারে প্রবেশে দেশি বাজারে পেঁয়াজে দাম কমলে ক্রেতা পর্যায়ে স্বস্তি এলেও পেঁয়াজ চাষিদের মাথায় হাত উঠেছে। চাষিদের অভিযোগ, পেঁয়াজ যখন রোপণ করা হয় তখন পেঁয়াজের বাজার চড়া হলেও সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয় না। যখন চাষি পর্যায়ের পেঁয়াজ বাজারে আসবে ঠিক আগ মুহূর্তে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি করে বারবারই চাষিদের সর্বস্বান্ত করার খেলা শুরু হয়।
বাজারগুলোতে খোঁজ নিয়ে এবং স্থানীয় কৃষক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বারবার কিছু অসাধু ব্যবসায়ী রমজান মাসে বেশি দামে বিক্রির আশায় পেঁয়াজ মজুত করে আসছেন। সেই পেঁয়াজ এখন বাজারে এসেছে। আবার কৃষকেরাও নতুন পেঁয়াজ বাজারে বিক্রির জন্য তুলতে শুরু করেছেন। তাতে বাজারে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় এই দরপতন ঘটেছে।
তথ্যমতে, সুজানগর উপজেলা সদরে প্রতি রোববার ও বুধবার পাইকারি পেঁয়াজের হাট বসে। গত বুধবার এই হাটে প্রতি মণ পেঁয়াজ ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা বা ৩ হাজার ৪শ' টাকায় বিক্রি হয়। এরপর থেকেই পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। রোববার এই হাটে প্রতি মণ পেঁয়াজ ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়। দাম কমে যাওয়ায় বহু কৃষক পেঁয়াজ বিক্রি না করে বাড়িতে ফিরে গেছেন।
আতাইকুলা হাটেও একই চিত্র লক্ষ করা যায়। রোববার এ হাটে প্রতি মণ পেঁয়াজ দেড় হাজার থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দাম না পেয়ে অনেক কৃষক হতাশ হয়ে বিক্রির জন্য আনা পেঁয়াজ নিয়ে বাড়িতে ফিরে গেছেন
বলে বাজারের লোকজন দাবি করেছে।
সুজানগর হাটের পাইকার আবদুল আজিজ বিশ্বাস বলেন, রমজানের শুরুতে বাজারে পেঁয়াজের আমদানি কম ছিল। তাতে বেশি দামের আশায় অনেকে পেঁয়াজ মজুত করেছিলেন। রমজান শুরুর পর থেকেই মজুত পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করে। অন্যদিকে কৃষকরাও বেশি দামের আশায় অপরিপক্ব পেঁয়াজ হাটে তুলেছেন। তাতে দরপতন ঘটে।
পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ওই জেলায় দুই জাতের পেঁয়াজের আবাদ হয়। একটি মুড়িকাটা জাতের আগাম পেঁয়াজ, অপরটি হালি পেঁয়াজ। চলতি মৌসুমে ৯ হাজার ৭৬৫ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজের আবাদ হয়েছিল। উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮৮৮ মেট্রিক টন। এ পেঁয়াজ ইতোমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। অন্যদিকে হালি পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে ৫৩ হাজার ২৭৫ হেক্টর জমিতে। বর্তমানে এই পেঁয়াজ বাজারে আসছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন।
আবুল কালাম আজাদ, শামসুল আলম, সাইফুদ্দিন, আব্দুল করিম, রাজ্জাক শেখসহ একাধিক চাষির সঙ্গে আলাপকালে তারা বলছেন, কয়েকদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম যেভাবে কমতে শুরু করেছে, তাতে আবাদের টাকা তোলা দায় হয়ে যাবে। ঋণ করে, ধার-দেনা করে পেঁয়াজ চাষ করেছি। এখন দাম না পেলে খুবই খারাপ হয়ে যাবে।
এদিকে পেঁয়াজের দাম কমে যাওয়ার বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ জামাল উদ্দিন বলেন, হঠাৎ সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দাম কমে গেছে। তবে বর্তমানে যে দামে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে, তাতে কৃষকের লোকসান হবে না।