সিলেট-তামাবিল মহাসড়কে গরু বোঝাই পিকআপ ভ্যানের সঙ্গে যাত্রীবাহী লেগুনার মুখোমুখি সংঘর্ষে শিশুসহ ছয়জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের সবাই একই পরিবারের। নিহতরা পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে সোমবার সকালে পারিবারিক বৌভাত অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। তাদের বহরে ছিল আরও ৫টি লেগুনা। স্থানীয়রা বলছেন, বৌভাত অনুষ্ঠানে যাওয়ায় কাল হলো তাদের জন্য! এ সময় আহত হয়েছেন আরও সাতজন। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া একইদিন সকালে পিরোজপুরে দুটি মোটর সাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৩ জন ও ফরিদপুরের ভাঙ্গায় বাসচাপায় নিহত হয়েছেন এক মোটর সাইকেল চালক। এর আগে রোববার বিকালে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গায় ট্রাক চাপায় নিহত হয়েছেন একজন আনসার সদস্য। এ নিয়ে রোববার বিকাল থেকে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত চার জেলার সড়কে ঝরেছে ১১ প্রাণ।
জৈন্তাপুর (সিলেট) প্রতিনিধি জানান, সোমবার দুপুর পৌনে ১টার দিকে সিলেট-তামাবিল সড়কের দরবস্ত পলস্নী বিদু্যৎ সমিতির সামনে পিকআপ-লেগুনার মুখোমুখি সংঘর্ষে শিশুসহ ছয়জন নিহত হন। নিহতরা হলেন- উপজেলার চিকনাগুল ইউনিয়নের পশ্চিম ঠাকুরের মাটি গ্রামের সন্তোষ পাত্রের স্ত্রী মঙ্গলী পাত্র (৫০), সন্তোষ পাত্রের পুত্রবধূ সুচিতা পাত্র (৩০), সুচিতা পাত্রের শিশু মেয়ে বিজলী (৬ মাস), নন্দ পাত্রের স্ত্রী সাবিত্রি পাত্র (৩২), সুবেন্দ্র পাত্রের মেয়ে ঋতু পাত্র (৬) ও নৃপেন্দ্র পাত্রের স্ত্রী শ্যামলা পাত্র (৫৫)। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও সাতজন। তারা বৌভাত অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সিলেটের দিকে আসা একটি গরু বোঝাই পিকআপ ভ্যানের সঙ্গে জাফলংমুখী একটি লেগুনার মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলে শিশুসহ চারজন নিহত হন। পরে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর আরও দুইজনের মৃতু্য হয়।
এ ঘটনায় আরও সাতজন গুরুতর আহত হন।
জৈন্তাপুর মডেল থানার ওসি তাজুল ইসলাম বলেন, 'জৈন্তাপুর উপজেলার দরবস্ত পলস্নী বিদু্যতের সামনে পিকআপ-লেগুনার মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় শিশুসহ ছয়জন নিহত হয়েছেন। আহতদের এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পিকআপ-লেগুনা পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। তবে পিকআপ চালক পলাতক।'
স্টাফ রিপোর্টার, পিরোজপুর জানান, সোমবার সকালে সদর উপজেলার মলিস্নকবাড়ি সংলগ্ন স্ট্যান্ড এলাকায় দুটি মোটর সাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৩ জন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন- ইন্দুরকানী উপজেলা উমেদপুর এলাকার মালেক আকনের ছেলে মো. হাসিব আকন, সদর উপজেলার শংকরপাশা ইউনিয়নের বাদুরা গ্রামের সাবের উদ্দিন হাওলাদারের ছেলে মো. নুরুল ইসলাম হাওলাদার ও ঝালকাঠী জেলার কাঁঠালিয়া এলাকার নূর মোহাম্মদের ছেলে মাসুম বিলস্নাহ। দুর্ঘটনায় আহত সদর উপজেলার শংকরপাশা ইউনিয়নের বাদুরা গ্রামের আরিফকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পিরোজপুর থেকে একটি মোটর সাইকেল পাড়েরহাটের দিকে যাচ্ছিল। অন্যটি ইন্দুরকানী থেকে পিরোজপুরে যাচ্ছিল। মলিস্নকবাড়ি এলাকায় এলে একজন পথচারীকে সাইড দিতে গিয়ে দুটি মোটর সাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। স্থানীয়রা ৪ জনকে উদ্ধার করে পিরোজপুর জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক দুইজনকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে আরও একজনের মৃতু্য হয়।
পিরোজপুর জেলা হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাক্তার স্বাগত হালদার বলেন, 'দুইজনকে মৃত অবস্থায় ও গুরুতর আহত অবস্থায় দুইজনকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত নুরুল ইসলাম ও আরিফকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হলে পথিমধ্যে নুরুল ইসলাম মারা যান।'
পিরোজপুর সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আসিকুজ্জমান জানান, ঘটনার পরপরই সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি জানান, সকাল ৭টার দিকে বাসচাপায় নয়ন হোসেন (২৭) নামক এক মোটর সাইকেল চালক নিহত হয়েছেন। ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের হামিরদী ইউনিয়নের মুনসুরাবাদ বাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দুর্ঘটনাটি ঘটে। নিহত নয়ন হোসেন নড়াইল জেলার কালিয়া থানার খররিয়া গ্রামের মো. মনোয়ার হোসেনের ছেলে।
ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, 'ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জগামী বিআরটিসি পরিবহণের একটি বাস (ঢাকা মেট্রো-ব-১৫-৫৬৭০) মুনসুরাবাদ এলাকায় নড়াইল থেকে ঢাকাগামী রেজিস্ট্রেশনবিহীন মোটর সাইকেলকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই মোটর সাইকেল আরোহীর মৃতু্য হয়।'
স্টাফ রিপোর্টার, টাঙ্গাইল জানান, রোববার বিকালে বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়কে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গায় ট্রাকের ধাক্কায় মো. সেলিম হোসেন নামে এক আনসার সদস্য নিহত হয়েছেন। তিনি গোপালপুর উপজেলা সদরের জব্বার খলিফার ছেলে।
বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) পলাশ জানান, রোববার বিকালে গোপালপুর থেকে মোটর সাইকেল নিয়ে সেলিম হোসেন টাঙ্গাইল যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে এলেঙ্গায় পৌঁছালে পেছন থেকে একটি ট্রাক মোটর সাইকেলটিকে ধাক্কা দিলে তিনি পড়ে গিয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। দুর্ঘটনার পরপরই স্থানীয় লোকজন ট্রাকটি আটক করলেও চালক পালিয়ে যান।