রিশাদ ঝড়ে সিরিজ জিতল বাংলাদেশ

প্রকাশ | ১৯ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
চট্টগ্রামে সোমবার শ্রীলংকার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের পর ট্রফি নিয়ে উচ্ছ্বাস বাংলাদেশ দলের -ওয়েবসাইট
ঘরের মাঠে শ্রীলংকার বিপক্ষে টি২০ সিরিজ খুইয়েছিল বাংলাদেশ। তবে নিজেদের প্রিয় ফরম্যাট ওয়ানডে সিরিজ ঘরে তুলেছে টাইগাররা। সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে শ্রীলংকাকে চার উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এতে লংকানদের বিপক্ষে ব্যাক টু ব্যাক ওয়ানডে সিরিজ জিতল টাইগাররা। ঘরের মাঠে ওয়ানডে ফরম্যাটে বিগত কয়েক বছর ধরেই অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশ। সেই ধারা বজায় থাকল শ্রীলংকার বিপক্ষেও। তিন ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে লংকানদের হারিয়ে সিরিজ জিতেছে টাইগাররা। বাংলাদেশের বোলিং ইনিংসের শেষ দিকে ফিল্ডিংয়ের সময় চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন সৌম্য সরকার। তার 'কনকাশন' বদলি হিসেবে নেমে তানজিদ হাসান খেলেন ৯ চার ও ৪ ছক্কায় ৮১ বলে ৮৪ রানের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। শেষ দিকে ১৮ বলে ৪৮ রানের অপরাজিত বিধ্বংসী ইনিংস খেলে জয় ত্বরান্বিত করেন রিশাদ হোসেন। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ২৩৫ রানে গুটিয়ে যায় শ্রীলংকা। জবাবে ছয় উইকেট হারিয়েই লক্ষ্যে পৌঁছায় বাংলাদেশ। বাকি ছিল আরও ৫৮ বল। বাংলাদেশের হয়ে ইনিংস উদ্বোধনে নামেন এনামুল হক বিজয় ও তানজিদ হাসান তামিম। লক্ষ্য তাড়ায় বিজয় রয়ে সয়ে খেললেও আগ্রাসী ব্যাটিং করতে থাকেন তামিম। এরই মাঝে ম্যাচের নবম ওভারে এ জুটি ভাঙেন লাহিরু কুমারা। লংকান পেসারকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে এক্সট্রা কভারে ফার্নান্দোর তালুবন্দি হন বিজয় (১২)। তার বিদায়ে ভেঙে যায় ৫০ রানের উদ্বোধনী জুটি। উইকেটে থিতু হওয়ার আগেই সাজঘরে \হফেরেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত (১)। অল্প সময়ের ব্যবধানে দুই উইকেট হারিয়ে খানিকটা চাপে পড়ে বাংলাদেশ। পরে উইকেটে এসে তামিমের সঙ্গে জুটি গড়েন তাওহিদ হৃদয়। দু'জনের জুটিতে আসে ৪৯ রান। এ সময় আবার আক্রমণে এসে উইকেট নেন কুমারা। তার বলে মাদুশানের তালুবন্দি হন হৃদয়। আউট হওয়ার আগে ২২ করেন হৃদয়। মাহমুদউলস্নাহ রিয়াদ ক্রিজে নেমে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। কুমারার চতুর্থ শিকারে পরিণত হওয়ার আগে করেছেন ১ রান। একপ্রান্তে সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মাঝে দলকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন তামিম। তবে সেঞ্চুরির কাছে গিয়ে আউট হন তামিমও। ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার বলে লং অনে চারিথ আসালঙ্কার তালুবন্দি হন কনকাশন সাব হিসেবে খেলতে নামা এ ওপেনার। ৮১ বলে ৮৪ রান করেন তিনি। মিরাজ আউট হওয়ার আগে ২৫ রান করেন। একপ্রান্ত আগলে রেখে অপরাজিত ৩৭ রান করেন মুশফিকুর রহিম। তবে লংকানদের নাস্তানাবুদ করেন রিশাদ হোসেন। মাত্র ১৮ বলে ৪৮ রানের অপরাজিত এক বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন তিনি। তার ব্যাটেই টাইগারদের জয় ত্বরান্বিত হয়। তাতে ম্যাচসেরা নির্বাচিত হন রিশাদ হোসেন। সিরিজসেরা হয়েছেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। এর আগে টস জিতে আগে ব্যাট করে শ্রীলংকা। দলটির হয়ে যথারীতি ইনিংস উদ্বোধনে নামেন আভিস্কা ফার্নান্দো ও পাথুম নিশাঙ্কা। তবে ব্যাট হাতে ব্যর্থ হয়েছেন তারা দু'জনই। লংকানদের দুই ওপেনারকে সাজঘরের পথ দেখান তাসকিন আহমেদ। পরে সাদিরা সামারাবিক্রমার সঙ্গে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন লংকান দলপতি কুশল মেন্ডিস। কিন্তু সাদিরার কারণে (১৪) সেটি সম্ভব হয়নি। তবে চারিথ আসালঙ্কার সঙ্গে ৩৩ রানে জুটি গড়েন শ্রীলংকা অধিনায়ক। তবে রিশাদের ঘূর্ণিতে মেন্ডিস বিদায় নিলে ভেঙে যায় তাদের জুটি। অপরপ্রান্তে হাল ধরে দলীয় রানের চাকা সচল রাখেন আসালঙ্কা। তবে ভয়ংকর হয়ে ওঠা এ ব্যাটারের উইকেট শিকার করেন মুস্তাফিজ। আউট হওয়ার আগে ৩৭ করেন আসালঙ্কা। এরপর আসা-যাওয়ার মধ্যে ছিলেন লংকান ব্যাটাররা। তবে শেষ পর্যন্ত দলের হাল ধরেন জেনিথ লিয়ানাগে। দলীয় রানের চাকা ঘোরানোর সঙ্গে সঙ্গে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন তিনি। এ সময় তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন মহেশ থিকশানা। এই জুটিতে ভর করে শ্রীলংকার ইনিংস থামে ২৩৫ রানে। বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট শিকার করেন তাসকিন আহমেদ। এছাড়াও দু'টি করে উইকেট নেন মুস্তাফিজুর রহমান ও মেহেদী হাসান মিরাজ। সংক্ষিপ্ত স্কোর : শ্রীলংকা : ৫০ ওভারে ২৩৫ (নিসাঙ্কা ১, আভিশকা ৪, মেন্ডিস ২৯, সামারাউইক্রামা ১৪, আসালাঙ্কা ৩৭, লিয়ানাগে ১০১*, ওয়েলালাগে ১, হাসারাঙ্গা ১১, থিকশানা ১৫, মাদুশান ৩, কুমারা ১; শরিফুল ০/৫৫, তাসকিন ৩/৪২, মুস্তাফিজ ২/৩৯, সৌম্য ১/১০, মিরাজ ২/৩৮, রিশাদ ১/৫১)। বাংলাদেশ : ৪০.২ ওভারে ২৩৭/৬ (এনামুল ১২, তানজিদ ৮৪, শান্ত ১, হৃদয় ২২, মাহমুদউলস্নাহ ১, মুশফিক ৩৭*, মিরাজ ২৫, রিশাদ ৪৮*; থিকশানা ০/৩৫, মাদুশান ০/৫২, কুমারা ৪/৪৮, হাসারাঙ্গা ২/৬৪, ওয়েলালাগে ০/৩০, আসালাঙ্কা ০/৮)। ফল: বাংলাদেশ ৪ উইকেটে জয়ী। সিরিজ : ৩ ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ২-১ ব্যবধানে জয়ী। ম্যাচসেরা : রিশাদ হোসেন। সিরিজসেরা :নাজমুল হোসেন শান্ত।