স্বাগত মাহে রমজান
অবৈধ টাকায় কেনা হালাল খাদ্যও হারাম
প্রকাশ | ১৮ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
ঈমানের গভীরতা এবং শরিয়ত পালনে অবিচলতা অর্জনের কার্যকর উপায় সিয়াম সাধনার মাস রমজানুল মোবারকের সপ্তম দিবস আজ। অতীত জীবনের পাপ থেকে মুক্তি পেতে রোজাদাররা কায়মনে ইবাদতে মশগুল। তারা ক্ষুধা-পিপাসা এবং ষষ্ঠ রিপুর সংযম সাধন করে চলছেন। সারাদিনের এ সংযম যেন শুধু উপবাসে পরিণত না হয়; যাতে রোজার পূর্ণ সওয়াব অর্জন করা যায় তার জন্য ঈমানদারগণ সচেষ্ট।
হাদিসে বলা হয়েছে, রোজার কাঙ্ক্ষিত ফলাফল লাভ করার অন্যতম শর্ত হলো, হালাল বস্তু দ্বারা আহার করা। পক্ষান্তরে হারাম বস্তু খেয়ে রোজা রাখলে এতে নফেসর পাশবিকতা অবদমিত হওয়ার পরিবর্তে তা আরও উত্তেজিত হয়ে উঠবে। উলেস্নখ্য, অবৈধ পন্থায় উপার্জিত অর্থে হালাল খাদ্য কেনা হলেও তা হারাম হয়ে যাবে।
আলস্নাহ বলেন, 'তোমাদের যে পবিত্র খাদ্যসমূহ প্রদান করা হয়েছে তা থেকে আহার কর এবং সৎকর্ম কর- সম্ভবত তোমরা সফল কাম হবে।' (সূরা বাকারা-১৭২)। এ আয়াতে মুত্তকী হওয়ার জন্য সৎকর্ম করতে বলা হয়েছে এবং তার পূর্বে পবিত্র বা হালাল খাদ্য গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।
হালাল খাদ্য হলো আলস্নাহর মনোনীত রিজিক। কোরআন মাজিদে আলস্নাহ একে রিজিকুলস্নাহ্ বা আলস্নাহর রিজক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। সুতরাং রোজাদারদের সতর্ক থাকতে হবে যাতে হারাম কোনো খাদ্য খেয়ে কেউ রোজা না রাখে। কারণ তাতে রোজার সওয়াব পাওয়ার কোনোই সুযোগ নেই। শুধু রোজাই নয়, সব ধরনের ইবাদত কবুলের পূর্বশত হালাল খাদ্য গ্রহণ।
হালাল উপার্জন করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করা যেমন মুমিনের ওপর ফরজ, তেমনি সব ধরনের হারাম থেকে বিরত থাকাও মুমিনের ওপর ফরজ। অথচ হারাম উপায়ে অর্থ উপার্জনের পথকেই অনেকে জীবন-জীবিকা নির্বাহের উত্তম পথ হিসেবে বেছে নিয়েছে। বৈধ-অবৈধ বিবেচনা না করে ক্ষুধার্ত কুকুরের মতো হারাম খাদ্য খেয়ে উদরপূর্তি করে খুবই স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন উপভোগে লিপ্ত। অথচ আলস্নাহ তায়ালা স্পষ্টভাবে বলেছেন, 'হে মানুষ! তোমরা খাও জমিনে যা কিছু বৈধ ও পবিত্র খাদ্যবস্তু রয়েছে তা থেকে। আর তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রম্ন।' (সুরা বাকারা : ১৬৮)
কিছু মানুষ হারাম সম্পদ উপার্জন করে, হারাম টাকায় কেনা হালাল খাদ্য খেয়ে উদরপূর্তি করে আলস্নাহর শুকরিয়া আদায়ের চেষ্টা করে। কিন্তু হারাম টাকা দিয়ে হালাল খাদ্য খেলেই কি সেটা হালাল হয়ে যায়? না, বরং সেটা হারাম থেকে যায়। আর হারাম খাদ্য খেয়ে হাজারবার আলস্নাহর শুকরিয়া আদায় করলেও তাঁর শুকরিয়া আলস্নাহর দরবারে কবুল হবে না। কেননা মহান আলস্নাহ তায়ালা হারাম নয়; বরং হালাল খাদ্য খেয়ে তাঁর শুকরিয়া আদায় করতে বলেছেন। হালাল বিষয়গুলো যেমন আলস্নাহ তায়ালা স্পষ্ট করেছেন, তেমনি হারাম বিষয়েও তিনি স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন। এসব বিষয় থেকে বেঁচে থাকা মুমিনের ঈমানি দায়িত্ব।
আরবি শব্দ 'হালাল' এর অর্থ বৈধ, সিদ্ধ, মুবাহ ইত্যাদি। ইসলামি পরিভাষায়, যে বিষয় বৈধ হওয়া সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত তা হালাল। আলস্নামা ইবনে আসকালানী বলেন, আলস্নাহ ও তাঁর রাসুল (সা.) যে সব বিষয়ের প্রতি অনুমোদন দিয়েছেন এবং শাস্তিমূলক পরিমান বর্ণনা করেনি তা হালাল। যেমন গরু, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি চতুষ্পদি জন্তুর গোশত ভক্ষন সম্পর্কে কোরআনে স্পষ্টভাবে নির্দেশনা রয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে 'তোমাদের জন্য চতুষ্পদ জন্তু হালাল করা হয়েছে; তবে হিংস্র চতুষ্পদি জন্তু হালাল নয়।'
অন্যদিকে শরিয়তের পরিভাষায় অবৈধ, নিষিদ্ধ যে সকল বস্তু কোরআন ও হাদিসে স্পষ্ট নির্দেশে অবশ্য পরিতেজ্য ও বর্জনীয় তা হারাম। যেমন- শুকুর, কুকুর, শিয়াল ইত্যাদি হিংস্র পশুর মাংস হারাম করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, তোমাদের উপর হারাম করা হয়েছে মৃত প্রাণী, রক্ত, শুকুরের মাংস যা আলস্নাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে জবাই করা হয়।
যাবতীয় পাপাচার থেকে মুক্ত থেকে পবিত্র জীবন অনুশীলন এবং জীবনে পরম প্রাপ্তি জান্নাত লাভের উদ্দেশ্যে হারাম খাদ্য বর্জন করতে হবে। কেননা হারাম খাদ্য গ্রহণ কবিরা গুনাহ।
হারাম খাদ্য যেমন মদ, গাঁজা ইত্যাদি মানুষের মস্তিষ্ক বিকৃত করে, তেমনি শরীরে নানা রোগব্যাধি সৃষ্টি করে। হারাম পানাহারের ফলে অন্তরে কুচিন্তা বাসা বাঁধে। সামাজিক শৃঙ্খলা বিনষ্ট হয়।
হাদিসে এসেছে, দুনিয়ার প্রতি মোহ কমাতে ক্ষুধা-পিপাসা সহ্য করার ইবাদত অত্যন্ত সহায়ক হয়। তবে চেতনা জাগ্রত থাকা প্রয়োজন যে, পৃথিবীতে যা কিছু আছে, সব কিছুর মালিক আলস্নাহতায়ালা। তার নির্দেশেই মানুষ এগুলো ভোগ করে। নিষেধ থাকলে তা থেকে বিরত থাকে। সুযোগ দিয়ে আলস্নাহতায়াল পরীক্ষা করেন। নাগালের মধ্যে পেয়েও মহান স্রষ্টার নিষেধের কারণে সংযমী থাকা তার ঈমান ও বাধ্যতার আলামত। রমজানের দীর্ঘ মাসব্যাপী পানাহার বর্জনের মাধ্যমে আলস্নাহর হুকুমের সামনে নিজেদের ইচ্ছা ও চাহিদাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রমাণ দেওয়া হয়। রমজানের বাইরেও তেমনি শরিয়ত নিষিদ্ধ বস্তু পরিহার করতে হয় এবং যে পদ্ধতি শরিয়তে অনুমোদিত নয় তা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হয়। ধনসম্পদ মানুষের দুনিয়াবি জীবনের অপরিহার্য অনুষঙ্গ হলেও তা লাভ করার উপায় ও পদ্ধতিতে যেন আলস্নাহর নির্দেশ ও রাসুলের নির্দেশনার ব্যতিক্রম না করা হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখাও মুমিন বান্দাদের একান্ত কর্তব্য।