বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

১২ জলদসু্যর নিয়ন্ত্রণে এমভি আব্দুলস্নাহ, নাবিকরা নিরাপদে

যাযাদি ডেস্ক
  ১৬ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
১২ জলদসু্যর নিয়ন্ত্রণে এমভি আব্দুলস্নাহ, নাবিকরা নিরাপদে

সোমালিয়ার জলদসু্যর হাতে জিম্মি হওয়া বাংলাদেশি জাহাজ 'এমভি আব্দুলস্নাহ' বর্তমানে দেশটির মোগাদিসু থেকে ৬০০ নটিক্যাল মাইল পূর্বে নোঙর করে আছে। জাহাজে ১২ জন জলদসু্যর উপস্থিতি নিশ্চিত করেছে সাগরের এই অঞ্চলে 'অপারেশন আটলান্টা' নামে কার্যক্রম পরিচালনা করা ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেভাল ফোর্স (ইইউএনএভিএফওআর)। সংস্থাটি স্যাটেলাইটের চিত্র বিশ্লেষণ করে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, জাহাজের ক্রুরা অক্ষত ও নিরাপদে আছেন। তবে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে জাহাজটি নিয়ে উৎকণ্ঠা বাড়ছে, অন্যদিকে একে একে বিস্ফোরক তথ্য সামনে আসতে শুরু করেছে। শুক্রবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, আগের ছিনতাই করা জাহাজ দিয়ে বাংলাদেশি জাহাজে হামলার তথ্যটি সঠিক হলে এটি দসু্যদের আগের সেই কৌশলে ফিরে আসাকে চিহ্নিত করবে। এটি জানান দেবে যে আগের মতো আবারও তারা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ছিনতাই করা জাহাজ দিয়েই দসু্যরা এমভি আব্দুলস্নাহ জিম্মি করে।

এদিকে ব্রিটিশ সামুদ্রিক নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান 'অ্যামব্রে' এক প্রতিবেদনে বলেছে, 'সন্দেহ করা হচ্ছে আরও বাণিজ্যিক জাহাজে হামলার জন্য এটিকে মাদারশিপ ভেসেল হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে।

আগে ছিনতাই হওয়া 'রুয়েন' নামের জাহাজটিকে সোমালিয়ার ইয়েল থেকে ১৬০ ন্যটিক্যাল মাইল দক্ষিণ-পূর্বের দিকে যাত্রা করতে দেখা গেছে।' এ এলাকায় চলাচলকারী অন্যান্য জাহাজকে বাড়তি সতর্কতা বজায় রাখতেও নির্দেশনা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

রয়টার্স জানায়, আন্তর্জাতিক নৌবাহিনী ২০১৭ সাল থেকে এডেন উপসাগর ও ভারত মহাসাগরে ব্যাপক মহড়া শুরু করে। এরপর থেকে এ পথে সোমালি জলদসু্যদের তৎপরতা অনেকাংশ কমে যায়। এরপর রুয়েন ছিল প্রথম সফল অভিযান।

অ্যামব্রে'র মতে, সেই ঘটনার কয়েক মাস পার হলেও এখনো ক্রুদের মুক্তিপণ পরিশোধ করা হয়নি। সংবাদমাধ্যম বলছে, এ ঘটনায় একজনকে চিকিৎসার জন্য ছেড়ে দিলেও বাকি ১৭ ক্রু এখনো জিম্মি রয়েছেন।

ইইউএনএভিএফওআর পরিকল্পনা ও সমন্বয় কেন্দ্র এবং হর্ন অব আফ্রিকা মেরিটাইম সিকিউরিটি সেন্টারের তথ্যানুসারে, গত নভেম্বর থেকে সোমালি ব্যাসিন ও এডেন উপসাগরে জলদসু্যরা অন্তত ২০টি জাহাজে হামলা চালিয়েছে। সোমালিয়ার জলদসু্যরা গত ডিসেম্বরে মাল্টার পতাকাবাহী কার্গো জাহাজ রুয়েন ছিনতাই করে। বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আব্দুলস্নাহর নিয়ন্ত্রণ নিতে তারা এ জাহাজটিকে ব্যবহার করে থাকতে পারে। দু'দিন আগে জাহাজটি ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে।

সোমলিয়ার জলদসু্যরা আন্তর্জাতিক সমুদ্রপথে ২০১৮ সালের আগ পর্যন্ত বড় আতঙ্কের কারণ ছিল। তবে গত বছরের শেষ পর্যন্ত বেশ শান্ত ছিল। এরপর আবার তারা সরব হতে শুরু করেছে। তবে 'জলদসু্যদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশের বাণিজ্যিক জাহাজ আব্দুলস্নাহর ওপর অপারেশন আটলান্টা নজর রাখছে' বলে উলেস্নখ করেছে তারা।

ইইউ নেভির বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, পর্যবেক্ষণে জাহাজটিতে ১২ জন দসু্যর উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া গেছে। যদিও আক্রমণের সময় দলটিতে ২০ জন ছিলেন। তারা সোমালি উপকূলে জলদসু্যদের সম্ভাব্য তিনটি ঘাটির সন্ধান পেয়েছে। তারা মনে করছেন, এই ঘাঁটিগুলো থেকেই ছিনতাই পরিচালনা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি এখনো অপরিবর্তিত আছে।

জিম্মির ঘটনায় বাংলাদেশ ও সোমালি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখার কথা জানিয়ে অপারেশন আটলান্টার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জাহাজটিতে জিম্মি এক বাংলাদেশি নাবিক জানিয়েছেন, নৌবাহিনীর দু'টি জাহাজ জিম্মিদের উদ্ধার করতে এলেও শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি।

নাম প্রকাশ না করা ওই নাবিক ইইউ নেভিকে বলেন, 'কারণ তারা তখন আমাদের জিম্মি করে রাখে, মাথায় বড় বড় অস্ত্র তাক করে। দুটি বড় বড় ফ্রিগেট আসছিল। সব ইকুইপমেন্ট নিয়ে। কিন্তু তারা (জলদসু্যরা) এসবে ভয় পায় না। কারণ তারা আমাদের জিম্মি করে রাখে। আমাদের মাথায় বন্দুক ধরে রাখে। আমাদের তারা রেস্ট্রিকটেড করে রাখে। তবে এখন পর্যন্ত আঘাত করেনি। সবাই একটা রুমে ঘুমাচ্ছি। একটা ওয়াশরুম ব্যবহার করছি।'

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, জাহাজটি উদ্ধারে তৎপরতা চালাচ্ছেন তারা।

জিম্মি জাহাজ সরিয়ে নিয়েছে দসু্যরা :মালিকপক্ষ

এদিকে শুক্রবার বিকাল ৩টায় মালিকপক্ষ সাংবাদিকদের জানান, সোমালিয়ার উপকূলে নেওয়ার এক দিনের মাথায় ২৩ নাবিকসহ জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজটিকে কাছাকাছি আরেক এলাকায় সরিয়ে নিয়েছে দসু্যরা। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টার দিকে প্রথমে সোমালিয়ার গ্যারাকাদ উপকূল থেকে ২০ নটিক্যাল মাইল দূরে জিম্মি জাহাজটি নোঙর করেছিল দসু্যরা। এরপর সন্ধ্যার দিকে উপকূল থেকে সাত নটিক্যাল মাইল দূরে নোঙর করে রাখে। শুক্রবার জাহাজটি আবারও নোঙর তুলে কাছাকাছি আরেক এলাকায় নিয়ে যায়। ধারণা করা হচ্ছে, দসু্যরা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে জাহাজের অবস্থান পরিবর্তন করছে।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে এমভি আব্দুলস্নাহ নামের জাহাজটির মালিকপক্ষ কবির গ্রম্নপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, 'আমরা নিশ্চিত হয়েছি, জাহাজটি সোমালিয়া উপকূলের অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে। তবে নাবিকেরা সুস্থ আছে।'

অন্যদিকে সোমালিয়ার উপকূলে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ ও ২৩ নাবিককে মুক্ত করতে দসু্যরা এখনো কোনো দাবি জানায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, দসু্যরা মুক্তিপণের দাবি জানাতে কিছুটা সময় নিচ্ছে।

মিজানুল ইসলাম বলেন, 'দসু্যরা এখনো যোগাযোগ করেনি। তবে আমরা বসে নেই। আলোচনার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারী সংগঠনগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ হচ্ছে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে