বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
পাট দিবসের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী

পাটের নতুন বাজার খুঁজতে হবে

যাযাদি রিপোর্ট
  ১৫ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় পাট দিবস উপলক্ষে পাটপণ্য মেলার উদ্বোধন শেষে বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন -ফোকাস বাংলা

পাটের নতুন বাজার খোঁজার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের সম্পদ খুবই সীমিত। কাজেই পাটকে কাজে লাগাতে হবে। এক সময় পাট রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা হতো। আমাদের দেশে সবচেয়ে উন্নত মানের পাট হয়। অর্থনীতিতে একে ব্যাপকভাবে কাজে লাগতে পারলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনও বাড়বে।

বৃহস্পতিবার জাতীয় পাট দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আনুষ্ঠানিকভাবে ছয়টি পাটকল ও 'বহুমুখী পাটপণ্য মেলা-২০২৪'-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে তিনি ঘোষণা দেন, সরকার কৃষি ও রপ্তানি পণ্য হিসেবে পাটের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ দেবে।

দেশের রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণে পাট ও পাটজাত পণ্য বেশি বেশি উৎপাদনে জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'পাট শিল্পকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, যা মোটেও শুভ ছিল না। এখন পাটকলগুলোকে আধুনিকায়ন করা হয়েছে। পাটের জন্ম রহস্য উদ্ভাবনের মাধ্যমে পাট ও পাট শিল্পের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে। পরিবেশবান্ধব পণ্য হিসেবে পাট ব্যবহারে সুযোগও বেড়েছে। পাট দিয়ে নতুন পণ্যের উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি নতুন বাজার খুঁজতে হবে।'

পাটের সবকিছুই কাজে লাগানো যায় মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, 'পাটগাছ ও এর আঁশ এবং পাতার বহুমুখী ব্যবহার হয় এখন। পাট ও চামড়ার সংমিশ্রণে বিভিন্ন পণ্য তৈরি হচ্ছে, সেগুলো বিদেশে রপ্তানিও করা হচ্ছে। আবার পাটশলা ব্যবহার করে আসবাবপত্র বানানোয় গাছের ওপর নির্ভরতা অনেক কমেছে। যদিও পাটের একসময় খারাপ সময় আসে, যখন কৃত্রিম তন্তু আবিষ্কার হয়। কিন্তু মানুষ এখন সচেতন। যেহেতু পাট

পরিবেশবান্ধব, তাই সেটিকে কীভাবে আরও উন্নত করা যায়, সেদিকে কাজ করা হচ্ছে।'

প্রধানমন্ত্রী পাটকে কৃষিজাত ও রপ্তানিমুখী পণ্যের স্বীকৃতি এবং প্রণোদনা দেওয়ার কথা জানিয়ে বলেন, '২০০৯ সালে আবার ক্ষমতায় আসার পর পাট নিয়ে গবেষণার ওপর জোর দেওয়া হয়, পাটের জন্ম রহস্য উন্মোচন হয়। পাট ও পাটজাত পণ্যের উৎপাদন বাড়ানোতে আমাদের বিরাট সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে এটি আবিষ্কারে। ফলে পাটের গুরুত্ব বেড়ে গেছে। কাজেই সেই সব দিকে লক্ষ্য রেখেই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।'

'রপ্তানিপণ্য বহুমুখীকরণে পাট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। পাট থেকে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে, সেই সুযোগটা কাজে লাগাতে হবে। একটা সময় পাটশিল্পকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, এটা আমাদের জন্য ছিল খুবই অশুভ সংকেত। পাটকলগুলো শেষ করে দেয়নি সরকার, সেগুলো বেসরকারীকরণে প্রাণ ফিরেছে এ শিল্পে। পুরনো মিলের পাশাপাশি নতুন যন্ত্রপাতি কিনে বহুমুখী পণ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে' বলে উলেস্নখ করেন তিনি।

পাটকলগুলো ইজারা নেওয়া প্রতিষ্ঠানকে বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, 'নতুন মেশিনারিজ কিনে আরও নতুন নতুন পণ্য উৎপাদন করতে হবে। যারা ইজারা নিয়েছেন পাটকল, তারা নজরদারিতে থাকবেন। সোনালি আঁশই সোনার বাংলা গড়তে সহায়তা করবে।'

পাটের ঐতিহ্য তুলে ধরে পাট দিবসের অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, 'পাটের শাড়ি ছাড়া একসময় দেশে বিয়েই হতো না। এখন তো সেসব হারিয়ে গেছে। আমি নিজেও এখন যে শাড়িটা পরে আছি, সেটিও পাটের তৈরি। পাটের তৈরি পণ্যের প্রচার প্রয়োজন। বর্তমানে মার্সিডিজ বেঞ্জ, বিএমডবিস্নউয়ের মতো গাড়ির ইন্টেরিয়রে লাইনার বানানো হয় পাট থেকে। অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখতে পারে এটি।'

তিনি বলেন, 'পাটজাত পণ্যের যত বেশি উৎপাদন বাড়াতে পারব, দেশীয় কাজে যেমন লাগবে, রপ্তানি ক্ষেত্রে বিরাট দুয়ার খুলে দেবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে পাটের নতুন নতুন বাজার খুঁজে বের করা, কোন দেশে কী ধরনের পণ্যের চাহিদা আছে সেটা দেখা, সেই ধরনের পণ্য উৎপাদন করার দিকে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'অনেক পাটকল অলাভজনক ছিল। সেগুলো বন্ধ করে দিয়ে শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা দিয়েছি। সম্পূর্ণ নগদ টাকা হাতে দেইনি। পারিবারিক সঞ্চয় করে দিয়েছিলাম। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে বৈজ্ঞানিকরা গবেষণা করে পাটের জন্ম রহস্য উদ্ভাবন করেছেন। আমি তাদের সুযোগ করে দিয়েছি। তাতে পাটের গুরুত্ব বেড়েছে।'

শেখ হাসিনা বলেন, '১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর বাংলাদেশ আর এগোতে পারেনি। আমাদের সম্পদ সীমিত। এটাকে কাজে লাগাতে জাতির পিতা উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এই পাটকে কাজে লাগাতে বঙ্গবন্ধুই প্রথম উদ্যোগ নিয়েছেন। পাট আমাদের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখতে পারে। পাটের সবকিছুই কাজে লাগে। কৃষক যে ক্ষেতে পাট চাষ করে, সেটায় আবার ধান চাষ করে। কারণ পাট পাতা পচে মাটির উর্বরতা বাড়ায়।'

প্রধানমন্ত্রী বলেন, '২০টি মিলের মধ্যে ছয়টি চালু করায় ১২ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। বাকি ১৪টি মিল চালু হলে আরও ২৮ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে।'

পাট দিবসের অনুষ্ঠানে ছয়টি পাটকলের উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। এগুলো হলো- চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার কেএফডি জুট মিলস লিমিটেড, নরসিংদীর ঘোড়াশালে বাংলাদেশ জুট মিলস, সিরাজগঞ্জের রায়পুরে জাতীয় জুট মিলস লিমিটেড, যশোর জুট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এবং যশোরের রাজঘাটে কার্পেটিং জুট মিলস লিমিটেড এবং খুলনার খালিশপুরে দৌলতপুর জুট মিলস লি.।

এছাড়া পাট খাতের উন্নয়নে অসামান্য অবদানের জন্য ১১ ক্যাটাগরিতে ১১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এবং ৯টি পাট সংশ্লিষ্ট সমিতির হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন। পরে তিনি পাটপণ্য মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন।

বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি গোলাম দস্তগীর গাজী এবং বাংলাদেশ জুটমিলস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মো. আবুল হোসেন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুর রউফ। জাতীয় পাট দিবস ২০২৪ উপলক্ষে একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে