শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১

ভারত থেকে পেঁয়াজ না আসায় অস্থির বাজার

ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম
  ১৩ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের একটি গুদামে পেঁয়াজের স্তূপ -ফাইল ছবি

ভারত থেকে পেঁয়াজ না আসায় ফের অস্থির হয়ে উঠেছে চট্টগ্রামের পাইকারি ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জ। তৃতীয় দফায় পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা। বেড়েছে খুচরায়ও। ফলে পেঁয়াজ কিনতে নাকানি-চুবানি খাচ্ছেন ভোক্তারা।

ভোক্তারা জানান, চট্টগ্রামের সবকটি খুচরা বাজারে ১১ মার্চ থেকে ভারতীয় পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ১৫ টাকা বেড়ে বিক্রয় হচ্ছে ১৪০ টাকায়। দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায়।

ফের পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণ সম্পর্কে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগরীর বহদ্দারহাটের হাটহাজারী স্টোরের বিক্রেতা জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। তাই খুচরায়ও পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।

তিনি জানান, খাতুনগঞ্জে প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ পাইকারিতে ১১ টাকা বেড়ে ১২৫ টাকায় বিক্রয় হচ্ছে। আর মেহেরপুরী পেঁয়াজ ৫ টাকা বেড়ে বিক্রয় হচ্ছে ৯৫ টাকায়। এছাড়া হালি পেঁয়াজও একই হারে বেড়ে বিক্রয় হচ্ছে ৯১ টাকা কেজিতে। ফলে খুচরায়ও পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।

খাতুনগঞ্জে হামিদুলস্নাহ মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, ভারত সরকার ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ রপ্তানির খবরে গত ১৯ ফেব্রম্নয়ারি খাতুনগঞ্জে প্রথম দফা পেঁয়াজের দাম কমে যায়। কিন্তু পেঁয়াজ না আসায় ২১ ফেব্রম্নয়ারি থেকে ফের চড়া হয় পণ্যটির দাম।

এরপর গত ৩ মার্চ দ্বিতীয় দফায় আবারও পেঁয়াজ আমদানির খবরে দাম কমিয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এক সপ্তাহ অপেক্ষার পর ভারতীয় পেঁয়াজ না আসায় সোমবার (১১ মার্চ) আবারও পণ্যটির দাম বেড়ে গেছে।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, চট্টগ্রামের বৃহত্তর ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জে প্রতিদিন ২০ থেকে ৪০টি ট্রাকে করে চোরাই পথে ভারতীয় পেঁয়াজ আসছে। নিষেধাজ্ঞা জারির পর থেকে বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে চোরাইপথে ভারতীয় পেঁয়াজ আসা শুরু হয়। যেগুলো বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এগুলোও যদি না আসত পেঁয়াজের কেজি আরও কয়েকগুণ বেশি দাম হতো।

ব্যবসায়ীরা জানান, গত বছরের ৮ ডিসেম্বর এক আদেশে চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেয় ভারত। এরপর দিনাজপুরের হিলি, সোনামসজিদসহ বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে বর্তমানে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু সিলেট, ফেনী, কুমিলস্না সীমান্ত দিয়ে চোরাই পথে ভারত থেকে পেঁয়াজ আসা শুরু হয়। ভারতীয় চোরাকারবারিরা এই পেঁয়াজ পাচারের সাথে জড়িত।

চাক্তাইয়ে আফরা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, 'সরকার ভারত থেকে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি করার কথা বলেছে। তাই আমরা লোকসান আতঙ্কে পেঁয়াজের দরও কমিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু ভারত থেকে সে পেঁয়াজ এখনো আসেনি। ফলে এ সুযোগে কৃষক পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এ কারণে পাইকারি ও খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দর আবার বেড়ে গেছে। এখানে আমাদের তো কিছু করার নেই। ভারত থেকে পেঁয়াজ এলে কিন্তু পণ্যটির দাম কমে যেত।'

পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, ভারত থেকে পেঁয়াজ আসবে এমন খবরে গত সপ্তাহে ভারতীয় ও দেশি পেঁয়াজের দাম কমিয়ে বিক্রি করা হয়েছিল। কিন্তু পেঁয়াজ আমদানি হয়নি। তার ওপর রোজা উপলক্ষে পেঁয়াজের চাহিদা বেশি। কৃষকরাও বাড়তি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন। তাই দামটা বাড়তি।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ রপ্তানির বিষয়টি গত ১ মার্চ অনুমোদন দেয় ভারত সরকার। দেশটি পাঁচজন পাঞ্জাবি রপ্তানিকারকের মাধ্যমে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানির সিদ্ধান্তও চূড়ান্ত করেছিল। রপ্তানিকারকপ্রতি ১০ হাজার টন পেঁয়াজ পাঠানোর কথা। গত ৭ মার্চের মধ্যে পেঁয়াজগুলো বাংলাদেশের বেনাপোল, ভোমরা, হিলিসহ বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করার কথা ছিল।

কিন্তু ভারতের মহারাষ্ট্র প্রদেশের কৃষকরা ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ রপ্তানির বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে রিট করেন। এরপর ৪ মার্চ পাঞ্জাবি রপ্তানিকারকের মাধ্যমে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানির বিষয়টি বাতিল করে দেন ওই দেশের আদালত। ফলে বাংলাদেশে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির বিষয়ে বর্তমানে এক ধরনের ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।

দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানিকারক মো. মোবারক হোসেন বলেন, 'রোজা তো শুরু হয়ে গেল। এ সময়ে পেঁয়াজগুলো আসলে ভালো হতো। পেঁয়াজের বাজারটা কমে আসত। এদিকে ভারত থেকে পেঁয়াজ না আসায় আমাদের কৃষকরা পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। গত সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজ মণপ্রতি ২ হাজার ৪০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। এখন সে পেঁয়াজ মণপ্রতি ৮০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ৩০০ টাকায়।'

কনজু্যমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, পেঁয়াজ আমদানির খবর পেলে দাম কমবে। আবার পেঁয়াজ আমদানি না হলে দাম বাড়িয়ে দেবে। এটা তো ব্যবসা না। এটা তো এক ধরনের জুয়া খেলা।

তিনি বলেন, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী রোজা উপলক্ষে ভারত থেকে পেঁয়াজ, চিনি আনার ঘোষণা দিলেও সেটা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। কথার সঙ্গে কাজের মিল না থাকলে তো সমস্যা। কাজেই সরকারকে দেখতে হবে, কেন ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি করছে না। সমস্যা কোথায়? সমাধানের পথ বের না করলে বাজার অস্থিতিশীল তো হবেই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে