শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১

ফাঁস করা প্রশ্নে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের তালিকা হচ্ছে

গাফফার খান চৌধুরী
  ১২ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
ফাঁস করা প্রশ্নে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের তালিকা হচ্ছে

ফাঁস করা প্রশ্নপত্রে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের তালিকা তৈরি হচ্ছে। তাদের বিষয়ে তথ্য প্রমাণসহ প্রয়োজনীয় আলামত সংগ্রহের কাজ চলছে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে ওইসব শিক্ষার্থীর প্রথমে ছাত্রত্ব বাতিল করা হবে। এরপর তাদের বিরুদ্ধে নেওয়া হবে আইনগত পদক্ষেপ।

ইতোমধ্যেই ফাঁস করা প্রশ্নপত্রে ভর্তি হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৭ শিক্ষার্থীর ছাত্রত্ব বাতিল করা হয়েছে। আরও অনেকের বিরুদ্ধেই তদন্ত চলছে। অবৈধ সুবিধা নিয়ে ভর্তি হওয়া মেডিকেল শিক্ষার্থী ও পাস করে চিকিৎসক হওয়া প্রায় দুই হাজারের বেশি ডাক্তারের বিষয়ে চলছে গভীর তদন্ত। গ্রেপ্তারের পর প্রকাশ করা হয়েছে ১৩ চিকিৎসকের পরিচয়। তদন্তের স্বার্থে আরও ১৯ চিকিৎসকের পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থী ও পাস করে কর্মরতদের বিষয়ে তদন্ত চলছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সূত্র বলছে, প্রশ্নপত্র ফাঁস প্রশ্নে চিকিৎসক হয়েছেন অনেকেই। আবার অনেকেই বিভিন্ন সরকারি মেডিকেল কলেজে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন চিকিৎসক ইউনুসুজ্জামান খান তারিম, নাজিয়া মেহজারিন তৃষা, মুহতাসিন হাসান লামিয়া, কৃষ্ণা, শর্মিষ্ঠা, লুইস সৌরভ সরকার, কেএম বশিরুল হক, অনিমেষ কুমার কুন্ডু, জাকিয়া ফারইভা ইভানা, সাবরিনা নুসরাত রেজা টুসী, জাকারিয়া আশরাফ, মৈত্রী সাহা ও ময়েজ উদ্দিন আহমেদ প্রধান। এই ১৩ ডাক্তারের বাইরে আরও ১৯ চিকিৎসকের পরিচয় তদন্তের স্বার্থে প্রকাশ করা যাচ্ছে না।

সূত্রটি বলছে, ১৯ চিকিৎসকের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সাবেক আবাসিক চিকিৎসক গ্রেপ্তারকৃত অনিমেষ কুমার কুন্ডুর মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে বিভিন্ন সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছেন ৮ জন। তারা দেশের অন্যতম প্রধান চারটি সরকারি মেডিকেল কলেজে অধ্যয়নরত। বাকি ১১ জনের সবাই খুলনা মেডিকেল কলেজের। এদের মধ্যে ৩ জন পাস করে ডাক্তার হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় কর্মরত আছেন। তাদের বিষয়ে তদন্ত চলছে। বাকি ৮ জন অধ্যয়নরত। তাদের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে তদন্ত কার্যক্রম চলছে।

সিআইডি সূত্র বলছে, প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের অন্যতম মাস্টারমাইন্ড জসীম উদ্দিন ভূঁইয়া ওরফে মুন্নুর কাছে একটি ডায়েরি পাওয়া গেছে।

তাতে প্রায় অর্ধশত চিকিৎসকের নাম রয়েছে। যারা প্রশ্নপত্র ফাঁস করে ভর্তি হয়ে বিভিন্ন সরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করেছেন। আবার অনেকেই অধ্যয়নরত রয়েছেন। পাস করাদের অনেকেই সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।

সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার আজাদ রহমান যায়যায়দিনকে বলেন, আগে গ্রেপ্তার হওয়াদের তথ্য মতে চলতি বছরের ২৫ ফেব্রম্নয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ভুয়া প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গাজীপুর জেলার টঙ্গী পশ্চিম থানা এলাকা থেকে মাহদী হাসান খান ও আব্দুর রহমান সোহান নামের দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারদের বরাত দিয়ে এই কর্মকর্তা জানান, গ্রেপ্তাররা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া ফেসবুক আইডি খুলত। সেই আইডিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পাওয়া যাবে বলে বিজ্ঞাপন দিত। তাদের প্রলোভনে পড়ে অনেকেই কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খুইয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরেই চক্রটি প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো প্রতারণার সঙ্গে জড়িত।

বিষয়টি সম্পর্কে সিআইডির সাইবার বিভাগের অ্যাডিশনাল ডিআইজি মোহাম্মদ রেজাউল মাসুদ যায়যায়দিনকে বলেন, সারাদেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে চক্রগুলোর। এই অসাধু চক্রের কারণে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী সরকারি মেডিকেল ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তাই যেসব শিক্ষার্থী প্রশ্নপত্র ফাঁস করে ভর্তি হয়েছেন, সেইসব শিক্ষার্থীর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় করে তদন্ত চলছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ যেমন তদন্ত করছে, তেমনি সিআইডিও তদন্ত করছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান হচ্ছে। প্রয়োজনে কোনো কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চালানো হচ্ছে সম্মিলিত তদন্ত।

প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর এএসএম মাকসুদ কামাল বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হিসেবে পরিচিত। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ। তাই এই পবিত্র বিদ্যাপীঠে কেউ অসৎ উপায়ে ভর্তি হোক বা পড়ালেখার সুযোগ নিক, সেটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। অসৎ উপায়ে কেউ ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অতীতেও কঠোর অবস্থান নিয়েছে, ভবিষ্যতেও নিবে। ইতোমধ্যেই অনেককেই আইনের হাতে সোপর্দ করা হয়েছে। ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে।

সিআইডি সূত্রে আরও জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁসের সূত্রধরে মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি তদন্তে বেরিয়ে আসে। ফাঁস হওয়া প্রশ্নে চিকিৎসক হয়েছেন দুই হাজারের বেশি। চক্রের ১২ জন গ্রেপ্তার হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। গ্রেপ্তাররা ২০০১ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ১৬ বছরে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে কয়েক হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। মেডিকেলের বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের আড়ালে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনাগুলো ঘটেছে। প্রশ্নপত্র ফাঁস করে গ্রেপ্তাররা প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১৫০ জনকে সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি করিয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁস করে ভর্তি হওয়াদের মধ্যে ৩২ জন সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেছে। যাদের মধ্যে গ্রেপ্তারের পর ১৩ ডাক্তারের পরিচয় প্রকাশ করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে ১৯ ডাক্তারের পরিচয় প্রকাশ করতে রাজি হয়নি সিআইডি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে