শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১

মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ চট্টগ্রাম নগরবাসী

সনজীব নাথ, চট্টগ্রাম
  ১১ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ চট্টগ্রাম নগরবাসী

বন্দর নগরী চট্টগ্রামে বেড়েছে মশার উপদ্রব। দিনে-রাতে সমান তালে মশার দলবদ্ধ আক্রমণ। বাসা, মার্কেট, গণপরিবহণেও মশা থেকে নিস্তার মিলছে না। এমনকি দিনেও মশার কামড়ে অতিষ্ঠ নগরবাসী।

এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও নানাভাবে ক্ষোভ ঝারছেন অতিষ্ঠ মানুষ। তাদের একজন চট্টগ্রাম মহানগরীর চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার বাসিন্দা ও ছাত্রলীগ নেতা ইকবাল হোসেন।

রোববার দুপুরে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট পোস্টে তিনি লিখেন, চট্টগ্রামে আর যাই হোক মশার মতো বাম্পার ফলন আর কিছুই হয়নি। মশার যন্ত্রণায় দিন-দুপুরেও নগরীর সড়ক ও অলিগলির কোথাও দাঁড়ানো যাচ্ছে না। গেরিলা বাহিনীর মতো ঝাঁকে ঝাঁকে আক্রমণ চালাচ্ছে মশার দল।

চর-থাপ্পড়েও নিস্তার মিলছে না মশার কামড় থেকে। রক্তের নেশায় একেকটি মশা হয়ে উঠেছে দুর্ধর্ষ গেরিলা। মশার পেটে এত ক্ষিধে, আর মানুষের অবস্থা কী, একবার ভাবুন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে খাবার কিনে খাওয়ার জো নেই, সেখানে ৫০০-৬০০ টাকায় মসকু্যইটো কিলার বা ৮০-১০০ টাকায় মশার কয়েল কেনার সাধ্য কয়জনের আছে।

একদিকে পেটের যন্ত্রণা, অন্যদিকে মশার কামড়ের যন্ত্রণা। কিন্তু শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাড়ি ও অফিসকক্ষে মহা আরামে আছেন মশক নিয়ন্ত্রণ সংস্থা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্টরা। আর সকাল-সন্ধ্যায় মশার কামড়ে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গুসহ নানা চর্ম রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন নগরীর মানুষ।

ভুক্তভোগীদের ভাষ্য, চট্টগ্রাম মহানগরীর ৪১ ওয়ার্ডের সবকটিতে দিনে-রাতে

সমানতালে চলছে মশার উৎপাত। মশার কাছে অসহায় হয়ে উঠেছে নগরীর ৭০ লাখ বাসিন্দা। বিশেষ করে খাল ও নালা-নর্দমার আশপাশে থাকা মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে মশা। মশার উপদ্রব থেকে বাঁচতে দিনের বেলায়ও মশারির ভেতর আশ্রয় নিচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

নগরীর মুরাদপুর মোড়ের চায়ের দোকানি শাহ আলম জানান, প্রতি রাতে তার দোকানে ৪-৫টি কয়েল জ্বালাতে হয়। বাসায় লাগে ২টা কয়েল। সব মিলিয়ে প্রতি রাতে তার মশার কয়েলের পেছনে ৮০ টাকা খরচ হয়। এভাবে মশা থেকে বাঁচতে অনেকে কয়েল ও স্প্রের দিকে ঝুঁকছেন। এতে আর্থিক ক্ষতির সঙ্গে বাড়ছে স্বাস্থ্যের ঝুঁকিও।

নগরীর চান্দগাঁও আবাসিক এলাকায় থাকেন আব্দুল হান্নান চৌধুরী। একটি বেসরকারি হাসপাতালের ঊর্ধ্বতন এই কর্মকর্তা বলেন, এতো মশা জীবনে দেখিনি। দিনে-রাতে ২৪ ঘণ্টা দরজা-জানালা বন্ধ রেখেও কাজ হচ্ছে না। মশার যন্ত্রণায় পরিবারের সবাই অতিষ্ঠ। এমন অভিজাত এলাকায় যদি এই অবস্থা হয় তাহলে সাধারণ জায়গাগুলোতে কী অবস্থা?

তিনি বলেন, নগরীর চান্দগাঁও এলাকায় মশার বাম্পার ফলন হচ্ছে খাল ও নর্দমার কারণে। ট্যানারি বর্জ্যের কারণে এই খাল ও নালা-নর্দমার পানি কালচে রং ধারণ করেছে। যেখানে মশার প্রজনন ঘটছে দ্রম্নতগতিতে। ট্যানারি বর্জ্য নিক্ষেপ বন্ধ এবং খাল, নালা-নর্দমাগুলো পরিষ্কার করলে মশার উৎপাত অনেকটা কমে যেত।

শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কেন্টিনে নাশতা করতে যান ফাহিম রায়হান ও তার বন্ধুরা। কিন্তু মশার উৎপাতে টেবিলে বসা দায় হয় তাদের। মশা তাড়াতে জ্বালাতে হয় কয়েল। শুধু কেন্টিনে নয়, বাসাতেও মশার মরণ যন্ত্রণা।

নগরীর বহদ্দারহাটের খাজা রোডের বাসিন্দা ফাহিম রায়হান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বছরজুড়েই মশা নিয়ে আতঙ্ক আর যন্ত্রণায় থাকতে হয় এলকাবাসীদের। আগে অন্তত মাসে এক-দুইবার ওষুধ ছিটাত সিটি করপোরেশন। কিন্তু এখন তাও দেখা যাচ্ছে না।

ফাহিম রায়হানের বক্তব্যের সূত্র ধরে নগরের বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিটি করপোরেশনের মশা মারার কার্যক্রম আগের তুলনায় ঝিমিয়ে পড়েছে। নালা-নর্দমা আর ভবনের আশপাশে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে একেবারে কম। এতে মশার উৎপাত বেড়ে চলছে।

নগরীর দক্ষিণ পাহাড়তলী, চান্দগাঁও, মোহরা, বহদ্দারহাট, শুলকবহর, মুরাদপুর হামজারবাগ, নন্দনকানন, লাভ লেন, জামালখান, কাজীর দেউড়ি, হালিশহর, পতেঙ্গা, কাতালগঞ্জ, কাপাসগোলা, উত্তরকাট্টলী, ফরিদারপাড়া, বাকলিয়া, কে বি আমানআলী সড়ক, চকবাজার এলাকায় মশার উপদ্রব বেড়ে গেছে। একই অবস্থা নগরীর অন্যান্য এলাকায়ও।

মূলত ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে আসায় মশা নিধনের ব্যাপারে সিটি করপোরেশন গা ছাড়া ভাব চলে এসেছে। এতে বেড়ে গেছে মশার উপদ্রব। সংঘবদ্ধ আক্রমণ দেখেই বোঝা যায় চট্টগ্রাম মহানগরীতে মশার বাম্পার ফলন হয়েছে।

কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, দেশে মোটামুটিভাবে ১২৩ প্রজাতির মশা আছে। এর মধ্যে ১৬ প্রজাতির মশা বেশি দেখা যায়। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বছরজুড়ে যে কয়েক প্রজাতির মশা থাকে এর মধ্যে কিউলেক্সই ৯৫ শতাংশের বেশি। তীব্র শীতের মধ্যেও কিউলেক্স মশা বৃদ্ধির যে হার তাতে শীত কমলে তা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা কীটতত্ত্ববিদদের।

সূত্র মতে, দেশে কিউলেক্স মশার প্রভাব দেখা দেয় অক্টোবর থেকে। অবশ্য শীতের তীব্রতা বাড়লে মশার কামড়ের মাত্রা কমে। তবে ফেব্রম্নয়ারি থেকেই কিউলেক্সের দাপট বাড়ে। এপ্রিলে কালবৈশাখীর কারণে অনেক স্থানে এ মশা কমে আসে। কিউলেক্স মশার কামড়ে ফাইলেরিয়া বা গোদরোগ ও জাপানি এনসেফালাইটিস হয়।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ দুটি রোগ বাংলাদেশে প্রকট নয়। কিউলেক্সের বড় সমস্যা এরা সংখ্যায় বিপুল ও ব্যক্তির জন্য উৎপাতকারী। অবশ্য এই মশার কামড়ে অনেকের অ্যালার্জিজনিত অসুখ হয় বলে জানান চিকিৎসকরা।

সিটি করপোরেশনের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, মশকনিধন কার্যক্রম চললেও কিছুটা গতি কমেছে। পর্যাপ্ত ওষুধ ও জনবল সংকটের কারণে এই কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এতে এডিস মশার প্রজনন না বাড়লেও কিউলেক্স মশার হার বেড়ে গেছে।

সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, উড়ন্ত বা পূর্ণ বয়স্ক মশা এবং লার্ভা নিধনের জন্য তিন ধরনের ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে। এর মধ্যে দুই ধরনের ওষুধ ব্যবহার করা হয় লার্ভা মারার জন্য। লার্ভি সাইড (লার্ভা মারার ওষুধ) পর্যাপ্ত থাকলেও অ্যাডাল্টিসাইড ওষুধের সংকট রয়েছে।

সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মীরা জানান, নগরের ৪১টি ওয়ার্ডে নিয়মিত ওষুধ ছিটানোর জন্য মাসে পাঁচ থেকে ছয় হাজার লিটার অ্যাডাল্টিসাইড ওষুধের প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে আছে আর্ধেকেরও কম। প্রয়োজনের তুলনায় ওষুধ কম থাকায় ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে কম। তাই ওয়ার্ডগুলোতে ওষুধ ছিটানোও হচ্ছে কম।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে সিটি করপোরেশনের মশক ও ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা শরফুল ইসলাম বলেন, মশার লার্ভা মারার জন্য পর্যাপ্ত ওষুধ রয়েছে। অ্যাডাল্টিসাইডের কিছুটা সংকট আছে। তবে ২০ হাজার লিটার অ্যাডাল্টিসাইড কেনার প্রক্রিয়া চলছে। আর এখন যাতে মশার প্রজনন ক্ষেত্র নষ্ট করার জন্য নালা-নর্দমা ও খালগুলো পরিষ্কার করা হচ্ছে। তাছাড়া মশক নিধন কার্যক্রমে গতি আনতে ৬০টি ফগার মেশিন ও ১০০টি স্প্রে মেশিন কেনা হয়েছে। এ ছাড়া ২০ হাজার লিটার অ্যাডাল্টিসাইড এবং ৩ হাজার লিটার লার্ভিসাইড কেনা হয়েছে।

সূত্র মতে, প্রতি বছর মশকনিধন বাবদ চসিকের বড় অঙ্কের টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাখা হয় ৫ কোটি টাকা। স্প্রেম্যান আছে ১৫০ জন, উন্নতমানের ১৬৫টি ফগার মেশিন ও ৪২০টি সাধারণ স্প্রে মেশিন আছে।

ওষুধেও মরছে না মশা :

কীটনাশকের কম কার্যকারিতা ও প্রয়োগে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ না করা এবং প্রয়োগকারীদের কিছু অদক্ষতার কারণে মশা নিয়ন্ত্রণে সফলতা পাচ্ছে না চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)।

চসিক মশক নিধনের জন্য কার্যকর ওষুধ নিশ্চিতকরণে সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর অনুরোধে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ছয়জন শিক্ষকের একটি বিশেষজ্ঞ দল গঠন করা হয়। বিশেষজ্ঞ দল গত বছর ৫ জুলাই কার্যক্রম শুরুর পর তাদের গবেষণা প্রতিবেদন জমা দেয়।

গবেষণায় দেখা যায়, সিটি করপোরেশনের বর্তমানে ব্যবহৃত দুটি কীটনাশকের মধ্যে লার্ভিসাইডের কার্যকারিতা ১৬ শতাংশ আর অ্যাডাল্টিসাইডের কার্যকারিতা ফগিংয়ের ক্ষেত্রে ১৯ শতাংশ এবং স্প্রে করলে এর কার্যকারিতা ৩৪ শতাংশ।

গবেষক দলের সদস্য চবির মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. এইচ এম আবদুলস্নাহ আল মাসুদ বলেন, চসিক থেকে মশকনিধনের জন্য কার্যকর ওষুধ নিশ্চিতে আমাদের পাঁচটি কীটনাশকের নমুনা দেওয়া হয়। এর মধ্যে বর্তমানে তারা দুটি ব্যবহার করছে এবং বাকি তিনটি পরীক্ষার জন্য আনা হয়েছে তবে ব্যবহৃত হচ্ছে না।

তিনি বলেন, 'আমরা গবেষণায় প্রমাণ পেয়েছি চসিকের ব্যবহৃত দুটি কীটনাশকের মধ্যে লার্ভিসাইড প্রয়োগের দুই ঘণ্টা পর ১৬ শতাংশ মশার লার্ভা মারা যায়। অন্যদিকে অ্যাডাল্টিসাইড প্রয়োগের দুই ঘণ্টা পর ফগিংয়ের ক্ষেত্রে ১৯ শতাংশ এবং স্প্রে করলে ৩৪ শতাংশ কার্যকারিতা পাওয়া যায়।'

'নতুন তিনটির মধ্যে আমরা একটির স্প্রের ক্ষেত্রে শতভাগ কার্যকারিতা পেয়েছি। তবে এতে কেরোসিন মিশিয়ে ব্যবহার করতে হবে। কেরোসিনেরও নিজস্ব কিছু কার্যকারিতা আছে। শুধু কেরোসিন ব্যবহার করলেই কিছু লার্ভা মারা যায়। তবে এটি ফগিং করলে মাত্র ১৪ শতাংশ কার্যকর।'

তিনি আরও বলেন, 'আমরা সিটি করপোরেশনের ৯৯টি জায়গা পরিদর্শন করে ৫১টি জায়গা থেকে লার্ভা সংগ্রহ করেছি। এর মধ্যে ৩৩টি জায়গায় এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। তার মধ্যে ১৫টিতে প্রায় শতভাগই এডিসের লার্ভা পাওয়া গেছে। অন্যদিকে ৩৯টি জায়গায় অ্যানোফিলিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে।'

আবদুলস্নাহ আল মাসুদ বলেন, ফগিং করার একটি নিয়ম আছে। সাধারণত সন্ধ্যার সময় যখন মশা খাবারের খোঁজে বের হয় তখন ফগিং করতে হবে। কিন্তু দেখা যায় দুপুরে, বিকালেও ফগিং করা হয়। যথাযথ প্রক্রিয়ায় ফগিং না করায় মশা মরে না।

গবেষক দলের সদস্য সচিব ও চবির উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক রাসেল বলেন, চসিক যে দুটি কীটনাশক ব্যবহার করছে সে দুটি প্রস্তুতকারী কোম্পানির সুপারিশকৃত মাত্রার চেয়ে ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে দিলে লার্ভা মরার হার ৭৪ শতাংশ পর্যন্ত দেখা গেছে। তবে মাত্রা বাড়িয়ে ব্যবহার করলে মানুষের ক্যানসার, হাঁপানি, চর্মরোগসহ নানা রোগ হতে পারে। তাছাড়া পরিবেশের জন্যও অনেক বেশি ক্ষতি হবে।

তিনি আরও বলেন, 'আমরা জালের ভেতরে মশা রেখে ফগিং ও স্প্রে করেও তা মরেনি। অন্যদিকে সিটি করপোরেশনের ফগিংয়ের সময় মশা উড়তে থাকে। কাজেই সেই সময়ে মশা আসলে মারা যায় কিনা সেটি নিয়ে এক ধরনের প্রশ্ন থেকেই যায়।'

যারা দীর্ঘদিন ধরে ফগিং করেন তারাও আমাদের জানিয়েছে ফগিংয়ে আসলে খুব বেশি মশা মরে না। তাছাড়া দীর্ঘদিন একই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করায় মশাগুলো কীটনাশক প্রতিরোধী হয়ে যেতে পারে। এর জন্য কীটনাশক এবং মশার জিনগত বৈশিষ্ট্য নিয়ে গবেষণা দরকার।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গবেষক দলের এক সদস্য বলেন, 'যারা মাঠপর্যায়ে কাজ করেন তাদের দক্ষতার অভাব আছে। কীভাবে কীটনাশক মেশাতে হবে, কোথায় কোথায় তা প্রয়োগ করতে হবে, অনুপাত কী হবে ইত্যাদি বিষয়ে অনেকে জানেন না। এর ফলে অনেক সময় মশা মরে না।'

এই বিষয়ে জানতে চসিকে মেয়র ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী ও প্যানেল মেয়র আবদুস সবুর লিটনের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও সাড়া মেলেনি। তবে প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা শেখ শফিকুল মান্নান সিদ্দিকী বলেন, 'আমরা যে দুটি কীটনাশকের ব্যবহার করছি সে দুটি ঠিক আছে। গবেষক দল যে ফলাফলের কথা বলছে সেটি অন্য কীটনাশকের।'

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এখন তো শুষ্ক মৌসুম। নালা-নর্দমা শুকিয়ে আছে। অল্প পানিতে মশার বংশ বিস্তার বেশি হয়। তাছাড়া অনেক খালের প্রবেশদ্বার আটকে নালা তৈরি ও সংস্কার হচ্ছে। যার কারণে এবার মশার প্রজনন একটু বেশি হচ্ছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রকল্পের কাজ শেষ হলে মশার উপদ্রব অনেক লাঘব হবে।

তবে সিটি করপোরেশনের মশকনিধন কার্যক্রম নিয়ে সমালোচনা করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক বলেন, ডেঙ্গু বাড়লে হলে চসিক তৎপর হয় না হয় তৎপরতা থাকে না, তা তো হতে পারে না। প্রকোপ বাড়লে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম জাতীয় কর্মসূচি পালন করে। এরপর আবার সব থমকে যায়। এভাবে মশক নিধন হবে না। এখন থেকে যদি পরিকল্পিত ও বৈজ্ঞানিকভাবে মশা মারার কার্যক্রম হাতে না নেয় তাহলে গত বছরের তুলনায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। কিন্তু সিটি করপোরেশনের সে রকম তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।

সূত্র জানায়, গত বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ১০৭ জন। আক্রান্ত হয়েছিলেন ১৪ হাজার ৮২ জন। মূলত যারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন তাদের এই তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। অনেকেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হলেও বাসায় চিকিৎসা নেন। আর চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ইতোমধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৯২ জন এবং মারা গেছেন ২ জন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে