শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১

জাপার রওশনপন্থিদের নতুন কমিটি ঘোষণা

যাযাদি রিপোর্ট
  ১০ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত জাতীয় পার্টির সম্মেলনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন রওশন এরশাদ। এতে মহাসচিব নির্বাচিত হয়েছেন কাজী মামুনুর রশীদ। কাজী ফিরোজ রশিদকে নির্বাহী চেয়ারম্যান, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান এবং সাহিদুর রহমান টেপা, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, আল মাহগির শাদ এরশাদ, গোলাম সারোয়ার মিলন ও সুনীল শুভ রায়কে কো-চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষক শ্রমিক জনতা পার্টির সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, জাপার একাংশের মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান এম এ মতিন, বিএলডিপি চেয়ারম্যান এম নাজিম উদ্দীন আল আজাদ, চীনের সহকারী রাষ্ট্রদূত ফেং জিজিয়া প্রমুখ -যাযাদি

জাতীয় পার্টির (একাংশ) জাতীয় সম্মেলনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন রওশন এরশাদ। এতে মহাসচিব হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন কাজী মামুনুর রশীদ।

শনিবার দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠান জাতীয় সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জাপার কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ। পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে রওশন এরশাদের নাম ঘোষণা করলে উপস্থিত কাউন্সিলর ও ডেলিগেটরা দুই হাত তুলে তা সমর্থন জানান। পরে দলের অপর প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গীর দলের অন্যান্য সিনিয়র নেতাদের নাম ঘোষণা করেন।

কাজী ফিরোজ রশিদকে নির্বাহী চেয়ারম্যান, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান এবং সাহিদুর রহমান টেপা, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, আল মাহগির শাদ এরশাদ, গোলাম সারোয়ার মিলন ও সুনীল শুভ রায়কে কো-চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

মহাসচিব হিসেবে কাজী মামুনুর রশীদের নাম ঘোষণা করেন গোলাম সারোয়ার মিলন। এতে উপস্থিত সবাই তা সমর্থন করেন।

এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে জি এম কাদের

নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি প্রথমবারের মতো ভাঙনের মুখে পড়ল। সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রতিষ্ঠিত দলটি এ নিয়ে অন্তত ছয়বার বিভক্ত হলো। রওশন এরশাদ জি এম কাদের অংশের চিফ প্যাট্রনের দায়িত্বে ছিলেন।

জাতীয় সঙ্গীত ও জাতীয় এবং দলীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দুপুর ১২টায় আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মেলনের কার্যক্রম শুরু হয়। শুরুতে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন জিয়াউল হক মৃধা। এতে সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন কাজী মামুনুর রশীদ।

সম্মেলনে কাজী ফিরোজ রশিদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, সাহিদুর রহমান টেপা, গোলাম সারোয়ার মিলন, সুনীল শুভ রায়, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, ক্বারি হাবিবুলস্নাহ বেলালী, ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গীর, জাফর ইকবাল সিদ্দিকী, শাদ এরশাদ, নুরুল ইসলাম নুরু, রফিকুল হক হাফিজ, এম এ গোফরান, ইয়াহিয়া চৌধুরী, শেখ আলমগীর হোসেন, নিগার সুলতানা রানী, এম এ কুদ্দুস খান, জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, শফিকুল ইসলাম শফিক, আমানত হোসেন, ফখরুল আহসান শাহাজাদাসহ অনেকেই উপস্থিত রয়েছেন।

তবে জি এম কাদেরপন্থি সাহিদুর রহমান টেপা ছাড়া আর কাউকে দেখা যায়নি সম্মেলনে। অন্যান্য নেতারা এরই মধ্যে জি এম কাদের বিরোধী হিসেবেই পরিচিত ছিলেন।

রওশন এরশাদের উপস্থিতিতে কাউন্সিলে সভাপতিত্ব করছেন কাজী ফিরোজ রশীদ। অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়েছেন কৃষক শ্রমিক জনতা পার্টির সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, জাপার একাংশের মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান এম এ মতিন, বিএলডিপি চেয়ারম্যান এম নাজিম উদ্দীন আল আজাদ, চিনের সহকারী রাষ্ট্রদূত ফেং জিজিয়া প্রমুখ।

সম্মেলনে রওশন এরশাদ বলেন, পলিস্নবন্ধু এরশাদের হাতে গড়া প্রাণপ্রিয় সংগঠন জাতীয় পার্টি। এই পার্টির এমন সুন্দর ঐতিহাসিক সম্মেলনের আয়োজন করতে পেরে সত্যিই তিনি অভিভূত। আনন্দে তার হৃদয় কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। সম্মেলন আয়োজন করায় তিনি পার্টির সব স্তরের নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।

তিনি বলেন, এরশাদ এ দেশে নতুন ধারার ইতিবাচক রাজনীতির প্রবর্তন করেছিলেন। সেই রাজনীতি হারিয়ে যেতে বসেছিল। দশম জাতীয় সম্মেলনের মধ্যদিয়ে এরশাদের নীতি-আদর্শ এবং উন্নয়ন-সমৃদ্ধি ও সংস্কারের রাজনীতি পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। জনগণের মনে আবার জাতীয় পার্টি বিশ্বাস স্থাপন ও প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে। সেটি সম্ভব হয়েছে একমাত্র জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে।

রওশন এরশাদ বলেন, জাতীয় পার্টি অনেক প্রতিকূল পরিবেশ পরিস্থিতি মোকাবিলা করে এখনো টিকে আছে। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের পর খানিকটা ঘুরে দাঁড়ায় দলটি। এরপর দলীয় প্রতীক লাঙ্গল দলের আয়ত্তে রাখতে আদালতে পর্যন্ত দাঁড়াতে হয়েছে। আদালতের সুবিচারে জাতীয় পার্টি লাঙ্গল প্রতীক বরাদ্দ পায়। সেই প্রতীকই এখনো দলটিরই আছে। এমনকি আগামীতেও থাকবে।

কাউন্সিলর ও ডেলিগেটদের উদ্দেশ্যে রওশন এরশাদ বলেন, পলস্নীবন্ধু এরশাদের জাতীয় পার্টিতে কোনো বিভেদ নেই। জাতীয় পার্টি এখনো এক ও ঐক্যবদ্ধ আছে। এমনকি ভবিষ্যতেও থাকবে। অতীতে দল ছেড়ে যাওয়ারা কেউ পলস্নীবন্ধু এরশাদের নীতি আদর্শ নিয়ে যায়নি। এমনকি তারা পলস্নীবন্ধুর ছবিও সঙ্গে নেয়নি। তাই জাতীয় পার্টি কখনো ভেঙেছে, তা মনে করার কোনো কারণ নেই।

তিনি সব নেতাকর্মীদের বিভেদ ভুলে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশের রাজনীতিতে সুষ্ঠুধারা বজায় রাখতে জাতীয় পার্টির কোনো বিকল্প নেই। দেশবাসী একটি শক্তিশালী ও সুসংগঠিত জাতীয় পার্টি দেখতে চায়। তাই ভেদাভেদ ভুলে সবাইকে একত্রিত হয়ে জাতীয় পার্টির পাতাকা তলে আসা উচিত। দলটির নেতাকর্মী ও সমর্থকরের একত্রিত হয়ে দেশবাসীর প্রত্যাশা পূরণ করতে হবে জাতীয় পার্টিকে।

অনুষ্ঠানে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে এরশাদ পুত্র রাহগির আল মাহি সাদ এরশাদ বলেন, তার পিতার মৃতু্যর পর দল থেকে পলস্নীবন্ধুর নাম নিশানা প্রায় মুছে ফেলা হয়েছিল। কিন্তু আগত নেতাকর্মীদের দেখে মনে হচ্ছে, পলস্নীবন্ধু এরশাদকে মুছে ফেলার শক্তি কারও নেই। নেতাকর্মীদের নিয়ে তিনি এগিয়ে যাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। প্রিয় সংগঠনকে তিনি আরও সুসংগঠিত করে এগিয়ে যাওয়ারও অঙ্গীকারের কথা জানান।

তিনি আরও বলেন, 'রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে শিশু বয়সেই মায়ের হাত ধরে আমাকে পর্যন্ত জেলে যেতে হয়েছে। আজ আবারও রাজনীতির জন্য মায়ের হাত ধরে আপনাদের (নেতাকর্মীদের) সামনে এসেছি। তিনি নেতাকর্মীদের তাকে সন্তানের মতো গ্রহণ করার আকুল আবেদন জানিয়ে বলেন, আপনারা আমাকে আপনাদের সন্তান হিসেবে গ্রহণ করবেন। আমি দৃঢ়ভাবে অঙ্গীকার করছি, আমার পিতার দেখানো পথে আমি সবসময় আপনাদের সঙ্গে নিয়ে দেশ ও জনগণের সেবা করব।

এদিকে সম্মেলন ঘিরে সকাল থেকেই নিরাপত্তাজনিত কারণে পুরো এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল। মঞ্চসহ আপশাশের এলাকায় ছিল বাড়তি গোয়েন্দা নজরদারিও। প্রতিটি রাস্তার মোড়ে মোড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল। সম্মেলনে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি কম হওয়ায় কোনো ধরনের বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হয়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। নেতাকর্মীরা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের ভেতরের অবস্থান করতে পেরেছেন। কাউকে রাস্তায় অবস্থান করতে হয়নি। ফলে রাস্তা বন্ধ হয়নি। এলাকাটির প্রতিটি রাস্তায় যানবাহন ও জনমানুষের চলাচল ছিল একেবারেই স্বাভাবিক।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে