বড় আকাশে উড়ছে বিমান

২৬ মার্চ ঢাকা-রোম রুটে ফ্লাইট চালু হচ্ছে জুনে বিমানের টার্গেট মালদ্বীপ যাওয়ার সিঙ্গাপুর নিয়ে বড় পরিকল্পনা ডসেম্বরে ঢাকা-নিউইয়র্ক ফ্লাইট চালুর প্রস্তুতি

প্রকাশ | ১০ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

আলতাব হোসেন
দীর্ঘ ২০ বছর পর আবার বড় আকাশে উড়ছে বিমান। নতুন নতুন গন্তব্যে ডানা মেলছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। বিশ্বের পূর্ব থেকে পশ্চিম আর উত্তর থেকে দক্ষিণের লাভজনক রুটগুলোতে উড়তে শুরু করেছে বিমান। আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে ঢাকা-রোম-ঢাকা রুটে ফ্লাইট চালু হচ্ছে। এর আগে চালু হয়েছে কানাডার টরন্টো, জাপানের নারিতা, চীনের গুয়াংজু ও ভারতের দিলিস্ন-চেন্নাই রুটের ফ্লাইট। জুনে চালু হচ্ছে মালদ্বীপ। শিগগিরই কোড শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে চালু হবে ঢাকা-লসঅ্যাঞ্জেলস ফ্লাইট। পরের টার্গেট অস্ট্রেলিয়া। পাইপলাইনে রয়েছে কুনমিং ও ফিলিপাইন। আগামী ডিসেম্বরে ঢাকা-নিউইয়র্ক ফ্লাইট চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে বিমান। গত কয়েক বছরে এশিয়া ও ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশে বেড়েছে যাত্রীচাহিদা। এসব গন্তব্যে একের পর এক নতুন ফ্লাইট পরিচালনা করছে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী উড়োজাহাজ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। বিমানের বহরে এখন ১৬টি বোয়িং কোম্পানির ব্র্যান্ড নিউ অত্যাধুনিক উড়োজাহাজসহ মোট ২১টি এয়ারক্রাফট আছে। এছাড়া দুটি কার্গোসহ আরও ১০টি নতুন উড়োজাহাজ কেনার প্রক্রিয়া চলছে। এর মধ্যে বিশ্বের শীর্ষ দুই কোম্পানি বোয়িং ও এয়ারবাস প্রস্তাব দিচ্ছে উড়োজাহাজ বিক্রির। নতুন নতুন উড়োজাহাজ দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি, ইন্দোনেশিয়ার বালি, মালয়েশিয়ার মালে, ব্রম্ননাই ও ফিলিপাইনসহ লাভজনক রুটে ফ্লাইট চলাচলের পরিকল্পনা করছে বিমান কৃর্তপক্ষ। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বর্তমানে বিশ্বের ২২টি গন্তব্যে সপ্তাহে ১২৫টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। এরমধ্যে দেশের পশ্চিমে ৯টি দেশে ১৭টি রুটে এবং পূর্ব দিকে পাঁচটি দেশে পাঁচটি গন্তব্যে ফ্লাইট চলছে বিমানের। বিমানের ফ্লাইট সপ্তাহে ভারতের কলকাতায় ১৪টি, দিলিস্নতে সাতটি, চেন্নাইয়ে তিনটি, সৌদি আরবের দাম্মামে পাঁচটি, রিয়াদে ছয়টি, মদিনায় চারটি, জেদ্দায় সাতটি ফ্লাইট পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়া পশ্চিম দিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহয় পাঁচটি, দুবাইয়ে সাতটি, আবুধাবি সাতটি, কাতারের দোহায় চারটি, ওমানের মাস্কাটে সাতটি, কুয়েতে তিনটি, যুক্তরাজ্যের লন্ডনে চারটি, ম্যানচেস্টারে তিনটি ও কানাডার টরন্টোতে তিনটি ফ্লাইট যাচ্ছে বিমানের। ঢাকা-রোম-ঢাকা রুটে ফ্লাইট চালুর বিষয়ে বিমানের পরিচালক (বিপণন ও বিক্রয়) মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ইতালিতে বাংলাদেশি প্রবাসীরা বেশি থাকেন। এ রুটে বছরে ৩ লাখের বেশি যাত্রী রয়েছেন। আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে এই রুটের প্রবাসীদের সর্বোচ্চ সেবাদান নিশ্চিত করা। এই রুট লাভজনক বিবেচনায় ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে ফ্লাইট পরিচালনায় যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। উদ্বোধনী ফ্লাইটের টিকিট ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ছাড়ে বিক্রি হচ্ছে। টিকিট বিক্রিতে ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। বোয়িং-৭৮৭ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজের মাধ্যমে ঢাকা-রোম রুটে ফ্লাইট পরিচালিত হবে। ফ্লাইটটি হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে সরাসরি রোমের বিমানবন্দরে যাত্রী পরিবহণ করবে। দশ বছর পর এই রুটে বিমান সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইট পরিচালনা করবে। এর আগে ১৯৮১ সালের ২ এপ্রিল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের রোম ফ্লাইট চালু হয় এবং ২০১৫ সালের ৬ এপ্রিল যাত্রী সংকটে বন্ধ হয়ে যায়। বিমানের একটি সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-রোম রুটে সব ধরনের ট্যাক্সসহ ইকোনমি ক্লাসে একমুখী টিকিটের সর্বনিম্ন দাম ৬৪ হাজার ৩৫৫ টাকা থেকে শুরু হয়েছে। রাউন্ড ট্রিপ টিকিট শুরুতে বিক্রি হচ্ছে ১ লাখ ৪ হাজার ৫৬৮ টাকা। ট্যাক্সসহ বিজনেস ক্লাসে একমুখী টিকিট সর্বনিম্ন বিক্রি চলছে ১ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। ২ লাখ ৫৮ হাজার টাকা রাউন্ড ট্রিপ বিজনেস ক্লাস টিকিটের দাম ধরা হয়েছে। আর রোম থেকে ঢাকা রুটে ইকোনমি ক্লাসে একমুখী টিকিট সর্বনিম্ন ৪৮ হাজার টাকা এবং রাউন্ড ট্রিপ টিকিট ৮৯ হাজার ৮৫২ টাকা বিক্রি চলছে। বিজনেস ক্লাসের ক্ষেত্রে একমুখী ও রাউন্ড ট্রিপ ভাড়া হচ্ছে যথাক্রমে ১ লাখ ২২ হাজার ও ২ লাখ ২২ হাজার টাকা। তবে মুদ্রা বিনিময় হার, সময় ও চাহিদা বিবেচনায় ভাড়ার পরিমাণ কমবেশি হতে পারে। বিমানের পরের টার্গেট মালদ্বীপ। বিমানের একটি সূত্র জানিয়েছে, রোম ফ্লাইট চালুর পরই মালদ্বীপ ফ্লাইট চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। পর্যটননির্ভর এ রুটটি বেশ জনপ্রিয় ও বাণিজ্যিক সম্ভাবনাময়। বিমানও আগামী জুনের আগেই টার্গেট নিয়েছে মালদ্বীপ যাওয়ার। গত ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ঢাকা-নিউইয়র্ক রুটে ৭৯টি ফ্লাইট পরিচালনা করেছিল বিমান। তখন যাত্রী সংকটে লোকসানের কারণে এ রুটে ফ্লাইট বন্ধ করা হয়। চলতি বছরের ডিসেম্বরে আবার ঢাকা-নিউইয়র্ক রুটে ফ্লাইট চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে বিমান। ফ্লাইট পরিচালনায় যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব ট্রান্সপোর্টেশনে (ডিওটি) আবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ফ্লাইট চালুর বিষয়ে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করেছিল বেবিচক। হযরত শাহজালাল ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের রানওয়ের ক্যাটাগরি, নিরাপত্তা বা সুযোগ-সুবিধা, এটি নিয়ে সিভিল এভিয়েশন ফেডারেল এভিয়েশন অথরিটির সঙ্গে কাজ করছে। তারা গত ডিসেম্বরে ইন্সপেকশন করেছে। বাংলাদেশ থেকে দীর্ঘতম আকাশপথ ঢাকা-নিউইয়র্ক রুট। এই রুটের দূরত্ব প্রায় ১২ হাজার ৬৭২ কিলোমিটার। এ জন্য আবেদনে ফ্লাইট পরিকল্পনার অংশ হিসেবে লসঅ্যাঞ্জেলেস, ওয়াশিংটন ডিসি, বোস্টন, হোস্টন, ডালাস ও নিউ জার্সিতে ফ্লাইট পরিচালনায় আগ্রহের কথা জানানো হয়েছে। এসব রুটে ফ্লাইট পরিচালনায় সম্ভাব্য যাত্রাবিরতির জন্য ১০টি বিমানবন্দরের নাম প্রস্তাব করেছে বিমান। সেগুলো হলো সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবি, ইতালির রোম, বেলজিয়ামের ব্রাসেলস, যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার, বার্মিংহাম, তুরস্কের ইস্তাম্বুল ও ইজমির, ভারতের নয়াদিলিস্ন এবং নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডাম। এসব বিমানবন্দর থেকে বিমান জেট ফুয়েল নেবে। সেখানে কোনো যাত্রী ওঠা-নামা করবে না। সব ঠিক থাকলে উড়াল দিতে প্রস্তুত রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইন্স বিমান। এ বিষয়ে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালে যাত্রী পরিবহণ শুরু হলে সব মানদন্ড পূরণ হবে। তখন নিজস্ব দুটি বোয়িং ৭৮৭-৯ উড়োজাহাজ দিয়ে ঢাকা-নিউইয়র্ক রুটে সপ্তাহে পাঁচটি ফ্লাইট চালু করতে পারবে বিমান। এর মধ্যে গত ১১ ডিসেম্বর বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান মো. মফিদুর রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। ঢাকা-নিউইয়র্ক রুটে ফ্লাইট চালুর বিষয়ে পিটার হাস সহযোগিতার আশ্বাস দেন। বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও শফিউল আজিম বলেন, বর্তমান বিশ্বে যাত্রীচাহিদা বিবেচনায় একের পর এক নতুন গন্তব্যে ডানা মেলছে বিমান। ঢাকা থেকে সরাসরি রোমে ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে ২৬ মার্চ। কোনো ট্রানজিট ছাড়াই প্রায় ৯ ঘণ্টায় রোম পৌঁছাবে ফ্লাইটটি। এরপর মালদ্বীপ। কোরিয়ায় ফ্লাইট চালু করার সম্ভাবনা রয়েছে। এরপর সিঙ্গাপুর নিয়ে আমাদের বড় পরিকল্পনা আছে। ব্যবসা, বাণিজ্য বিনিয়োগ, অফিসিয়াল সামিটের জন্য সিঙ্গাপুর একটা হাব। আমরা ঢাকাকে হাব করে পূর্ব ও পশ্চিমের সংযোগ সৃষ্টি করতে উদ্যোগ নিয়েছি। আন্তর্জাতিক রুটে উড়তে বিমান বহরে আরো ১০টি নতুন উড়োজাহাজ কেনার প্রক্রিয়া চলছে। এর মধ্যে বিশ্বের শীর্ষ দুই কোম্পানি বোয়িং ও এয়ারবাস উড়োজাহাজ বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটনমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, বিমান নতুন নতুন লাভজনক রুটে চলাচল শুরু করেছে। ব্যবসার পলিসি হচ্ছে, নতুন রুট যত বেশি চালু হবে, যত বেশি ফ্লাইট ফ্রিকোয়েন্সি বাড়বে, এতে লাভজনক হবে ব্যবসা। প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকতে হলে নতুন নতুন উড়োজাহাজ লাগবেই। তবে কার কাছ থেকে কি কেনা হবে সেটা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। বিমানের জন্য যেটা লাভজনক সেটাই করা হবে।