'একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না'- হলেও সড়কে মৃতু্যর মিছিল কিছুতেই থামছে না। প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো সড়কে দুর্ঘটনায় ঝরছে তাজা প্রাণ। পঙ্গুত্ববরণ করছেন অনেকে। আবার একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে পথে বসছে অনেক পরিবার। গত এক দিনে দেশের সাত জেলায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় আবারও ঝরল ১৬ প্রাণ। আহত হয়েছেন অন্তত ৬৫ জন। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব দুর্ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে পিরোজপুরে একটি যাত্রীবাহী বাস ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও একটি মোটর সাইকেলকে চাপা দিলে ৭ জন, ফরিদপুরের ভাঙ্গায় বাস উল্টে ৩ জন, সিলেটে পর্যটকবাহী বাস ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে এক শিশু, সুনামগঞ্জে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় আরোহী, নীলফামারীর সৈয়দপুরে গাড়ির ধাক্কায় একজন, জয়পুরহাটে দ্রম্নতগামী ট্রাকের চাপায় দুইজন ও ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে মহাসড়কে গাছ পড়ে মোটর সাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো ৬৫ জন।
স্টাফ রিপোর্টার, পিরোজপুর থেকে জানান, দ্রম্নতগামী একটি বাস ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও একটি মোটর সাইকেলকে চাপা দিলে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ৭ জন নিহত হয়েছেন। শুক্রবার দুপুরে সদর উপজেলার শংকরপাশা ইউনিয়নের পাড়েরহাট সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে। নিহতরা অটোরিকশা ও মোটর সাইকেল আরোহী।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পিরোজপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে একটি বাস চন্ডিপুরের দিকে যাচ্ছিল। ওই সময় বাসটি ঝাউতলা নামক স্থানে একই দিকে যাওয়া একটি যাত্রী বোঝাই ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। তখন সেখানে থাকা আরও একটি মোটর সাইকেলে ধাক্কা লাগলে হতাহতের ওই ঘটনা ঘটে।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন অফিসার মো. রেজোয়ান জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে বাসটি ব্রেক ফেল করে একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও একটি মোটর সাইকেলকে চাপা দিয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে আমরা ৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করি। এছাড়া আরও কয়েকজনকে উদ্ধার করে জেলা হাসপাতালে পাঠালে সেখানে ৪ জন মারা যায় বলে জানা গেছে। নিহতদের মধ্যে স্বপন, নাইম, হেমায়েত, খাইরুলের নাম জানা গেছে। বাকি ৩ জনের নাম-পরিচয় এখনো জানা যায়নি।
পিরোজপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশিকুজ্জামান বলেন, 'দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৭ জন নিহত হয়েছেন। বিস্তারিত পরে জানানো যাবে।'
ভাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি জানান, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি বাস উল্টে ৩ জন নিহত হয়েছেন। এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২৫ জন। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সোয়া ২টার দিকে উপজেলার চুমুরদী ইউনিয়নের বাবলাতলা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে একজনের পরিচয় জানা গেছে। তার নাম শফিকুল ইসলাম ওরফে সুরুজ (৪৫)। তিনি পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার প্রাণদুরিয়া গ্রামের ইদ্রিস মিয়ার ছেলে। নিহত বাকি দুজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের প্রথমে ভাঙ্গা এবং পরে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা তরুণ কুমার পাল বলেন, 'রাতে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে আনা হলে দুজনকে মৃত ঘোষণা করা হয়।'
ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক রতন কুমার সাহা বলেন, 'ভাঙ্গার সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ১৪ জনকে এ হাসপাতালে আনা হয়। এর মধ্যে একজন মারা গেছেন। এছাড়া গুরুতর আহত একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।'
ভাঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতে বরগুনা থেকে ইমরান ট্রাভেলস নামের একটি যাত্রীবাহী বাস ঢাকা যাচ্ছিল। বাসটিতে প্রায় ৩০ জন যাত্রী ছিলেন। রাত সোয়া ২টার দিকে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ভাঙ্গার চুমুরদী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পৌঁছালে চালকের অসাবধানতার কারণে বাসটি সড়কের ওপর উল্টে যায়। এ সময় দুর্ঘটনাস্থলেই দুই ব্যক্তি নিহত হন।
ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবদুলস্নাহেল বাকী বলেন, 'রাতে আমরা মহাসড়কে টহল গাড়ি নিয়ে ডিউটি করছিলাম। রাত সোয়া ২টার দিকে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করি।'
তিনি আরও বলেন, 'বাসটি জব্দ করা হয়েছে। নিহত এক ব্যক্তির বাড়িতে খবর দেওয়া হয়েছে। যাদের পরিচয় পাওয়া যায়নি, তাদের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে।'
এদিকে, শুক্রবার দুপুরে সিলেট-তামাবিল মহাসড়কে পর্যটকবাহী বাস ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছে। সে ময়মনসিংহের গৌরিপুর থানার রাসেল আহমদের ছেলে পরশ (৬)। সেই সঙ্গে বাসের ৪০ যাত্রী আহত হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ জানায়, ময়মনসিংহ থেকে পর্যটক নিয়ে সিলেটের জাফলংয়ে যাচ্ছিল বাসটি। জৈন্তাপুর উপজেলার উমনপুর এলাকায় পৌঁছামাত্র পর্যটকবাহী বাসের (ময়মনসিংহ ব ১১-০২৪৩) সঙ্গে সিলেটগামী পাথর বোঝাই ট্রাকের (ঢাকা মেট্রো ট ১৬-৫৯৪৮) মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
জৈন্তাপুর মডেল থানার ওসি তাজুল ইসলাম বলেন, 'উমনপুরে সড়কে পর্যটকবাহী বাস ও পাথর বোঝাই ট্রাকের সংঘর্ষে এক শিশু নিহত হয়েছে।'
দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় রওশন আলী (৩০) নামে এক আরোহীর মৃতু্য হয়েছে। তিনি উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নের দ্বীনেরটুক গ্রামের মিরন মিয়ার ছেলে। এ দুর্ঘটনায় আহত আরেক যুবককে দোয়ারাবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে সিলেট এমএজি উসমানী মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
শুক্রবার সকালে উপজেলার সদর ইউনিয়নের দোয়ারাবাজার-টেবলাই ব্রিটিশ সড়কের মুতির দোকান পয়েন্টে এই দুর্ঘটনাটি ঘটে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সকাল ১০টার দিকে উপজেলার নরসিংপুর থেকে সুনামগঞ্জে যাওয়ার পথে টেবলাই মুতির দোকান পয়েন্টে পথচারী এক মহিলাকে বাঁচাতে গিয়ে গাছের সঙ্গে মোটর সাইকেলের ধাক্কা লেগে মারা যান রওশন আলী।
দোয়ারাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বদরুল হাসান বলেন, 'মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় ১ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত ১ জনকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।'
রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি জানান, উপজেলায় করোনাইট কুমারগঞ্জ নামক স্থানে মহাসড়কে গাছের ডাল মাথায় পড়ে ইসমাইল উদ্দীন (৪৫) নামের এক মোটর সাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। শুক্রবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটেছে। তার বাড়ি বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ভানোর ইউনিয়নের বিশ্রামপুর গ্রামে।
স্থানীয়রা উপজেলা ফায়ার সার্ভিসের খবর দিলে ঘটনাস্থলে গিয়ে গুরুতর অবস্থায় ইসমাইলকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের জরুরি বিভাগে ভর্তি করে। দায়িত্বরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
রাণীশংকৈল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল রানা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।
সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি জানান, শুক্রবার সকালে সৈয়দপুর থেকে রংপুর যাওয়ার পথে বাইপাস সড়কের কামারপুকুর এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির (৫৫) মৃতু্য হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে তারাগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খান শরিফুল ইসলাম বলেন, 'খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তার নাম-পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে। এ বিষয়ে আইনি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।'