রমজানের বাকি আর মাত্র কদিন কিন্তু বাজারে স্বস্তি মিলছে না ক্রেতাদের। শুক্রবারও প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে বাড়তি ব্যয় করতে হয়েছে তাদের। ভোজ্যতেল হতে শুরু করে চিনি, খেজুর, পেঁয়াজ ও ছোলাসহ চড়াই রয়েছে মসলা ও মাংসের বাজার। শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
বরাবরের মতো এবারও রমজান শুরুর অন্তত এক মাস আগে থেকেই বাজারে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়তির দিকে রয়েছে। যা এ সপ্তাহে এসেও অব্যাহত রয়েছে। ক্রেতারা বলেছেন, আগের রমজান থেকে এবার খেজুর, ছোলা, ডাল, চিনিসহ বেশ কিছু পণ্যের দাম অনেকটাই বাড়তি, কিছু পণ্যের দাম দ্বিগুণের কাছাকাছি।
শুক্রবার বাজারে সাধারণ মানের খেজুর বিক্রি হয়েছে ৪০০ টাকা দরে। যা গত বছর রমজানে বিক্রি হয়েছিল ২০০ থেকে ২২০ টাকা দরে। এছাড়া ভালোমানের প্রিমিয়াম কোয়ালিটির খেজুর ৮শ' টাকা থেকে শুরু করে বিক্রি হয়েছে ১৬শ' টাকা দরে। যা গত রমজানে বিক্রি হয়েছে ৫শ' থেকে ৯শ' টাকার মধ্যে।
এছাড়াও এদিন ছোলা কেজি বিক্রি হয়েছে ১১০ টাকা থেকে শুরু করে ১২০ টাকা দরে। গত বছর বাজারে এ সময় ছোলা বিক্রি হয়েছিল ৮৫ টাকা থেকে ৯৫ টাকার মধ্যে। অন্যদিকে খেসারি ডালের কেজি বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকা কেজি দরে। যা গত বছর বিক্রি হয়েছে ৯৫ টাকার মধ্যে।
এদিন বাজারে অন্যান্য ডালের মধ্যে মাঝারি ও সরু দানার মসুর ডালের কেজি ১২০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মানভেদে প্রতি কেজি অ্যাঙ্কর ডাল বিক্রি হয়েছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায়। আর মুগ ডালের কেজি বিক্রি হয়েছে ১৩০ থেকে ১৮০ টাকা দরে।
এদিন বাজারে রমজানের আরেক পণ্য চিনি প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা দরে। যদিও গত রমজানে প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছিল ১২০ টাকা দরে। সে হিসেবে এ পণ্যের দাম বেড়েছে প্রায় ৩০ টাকা।
এদিকে ১ মার্চ থেকে ভোজ্যতেলের নতুন দাম কার্যকরের কথা থাকলেও বাজারে এখনো তার প্রভাব দেখা যায়নি। তবে কিছু কিছু দোকানে নির্ধারিত দামে ৫ লিটারের বোতল বিক্রি করতে দেখা গেছে। বিক্রেতারা জানান, এবার রোজার অনেক আগে থেকেই ছোলা-খেসারি ডালসহ অন্যান্য সব ডালের দাম চড়া। গত বছরের তুলনায় বাড়তি থাকলেও বেশ কিছুদিন ধরে চিনির দাম স্থিতিশীল রয়েছে। অন্যদিকে কিছু দোকানে নতুন দামে তেলের সরবরাহ থাকলেও বেশিরভাগ দোকানেই নেই। দেখা গেছে আগের রেটের তেল অবিক্রীত থাকায় বিক্রেতারা নতুন দামে তেল নিচ্ছেন না। যদিও গত ৮ ফেব্রম্নয়ারি খেজুর, চিনি, সয়াবিন তেল ও চাল আমদানিতে শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়েছিল।
অন্যদিকে, রমজান ঘনিয়ে এলেও কমছে না পেঁয়াজ, আদা, রসুনসহ মসলা পণ্যের দাম। এমনকি ভারত থেকে আমদানি ও দেশি হালি পেঁয়াজ বাজারে আসা শুরু হলেও দাম এখনো বাড়তি দিকেই রয়েছে। তবে গত সপ্তাহের তুলনায় দাম কিছুটা কমেছে। এদিন প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকা দরে, আদা বিক্রি হয়েছে ২৪০ এবং রসুন বিক্রি হয়েছে ২২০ টাকা দরে। তবে অস্বাভাবিক দাম বিরাজ করছে গরম মসলার বাজারে।
গত সপ্তাহে প্রতি কেজি এলাচে প্রায় ১ হাজার টাকা বেড়ে খুচরা বাজারে বিক্রি হয়েছিল সর্বোচ্চ ৪ হাজার টাকা দরে। যা এ সপ্তাহেও অব্যাহত রয়েছে। একইভাবে লবঙ্গের কেজিতে প্রায় ২শ' টাকা বেড়ে প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে প্রায় ২ হাজার টাকা দরে। এছাড়াও হলুদ গুঁড়া, মরিচ গুঁড়া, ধনিয়া, জিরার দাম প্রতি ১শ গ্রামে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়ছে।
এছাড়াও বাজারে বাড়তির দিকেই রয়েছে সব ধরনের মাংসের বাজার। রমজানে বিশেষ করে গরুর মাংসের চাহিদা বেশি থাকায় ভোক্তাকে গুনতে হয়েছে বাড়তি দাম। মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় ৫০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি এদিন বিক্রি হয়েছে ৮শ' টাকায়। এছাড়াও গত সপ্তাহের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। এদিন বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার বিক্রি হয়েছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা ও সোনালি মুরগি বিক্রি হয়েছে ৩৩০ টাকা দরে।
তবে প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে সবজি ও মাছের বাজার। এদিন মাঝারি আকারের রুইয়ের কেজি বিক্রি হয়েছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, বড় কাতল ৪শ' টাকা, বড় পাঙাশ ২৫০ টাকা, চাষের কই (ছোট) ৩৩০ টাকা, তেলাপিয়া আড়াইশ টাকা ও শিং ৬শ' টাকা, শোল ৮শ' টাকা, পাবদা ৫শ' থেকে ৬শ' টাকা, টেংরার কেজি আকার ভেদে ৬শ' থেকে ৭শ' টাকা, মলা মাছ ৫শ' টাকা, বাইলা ১ হাজার টাকা, পোয়া ৩৫০ থেকে ৪শ' টাকা, মাঝারি আকারে বোয়াল ৫শ' থেকে ৬শ' টাকা, গুড়ামাছ ৩শ' টাকা, ছোট চিংড়ি ৫শ' টাকা, গলদা ৭শ' এবং বাগদা ৮শ' থেকে ৯শ' টাকা ও রূপচাঁদা ৯শ' টাকা দরে।