প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আর্থিক, সামাজিক, রাজনীতি এবং খেলাধুলাসহ সব ক্ষেত্রে নারীদের এগিয়ে যেতে সরকার সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে আর নারীরা তাদের পারদর্শিতা দেখাচ্ছে।
শুক্রবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক নারী দিবসে জাতীয় পর্যায়ে 'সেরা জয়িতা পুরস্কার-২০২৩' বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
সমাজের নানা প্রতিকূলতা আর বাধা অতিক্রম করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনের স্বীকৃতি হিসেবে এবারে পাঁচ নারীর হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, 'এভারেস্টেও আমাদের মেয়েরা বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে গেছে। পাশাপাশি খেলাধুলায় অনেক সাধারণ ঘরের মেয়েরা তারা স্বর্ণ জয় করে আনে, তারা তাদের দক্ষতা দেখায়। মেয়েরা তো ফুটবল খেলায় ভারতকেও তিন-এক গোলে হারিয়ে দিয়েছে। নেপালকে হারিয়েছে। সবদিক থেকে তারা পারদর্শিতা দেখাচ্ছে। আমরা সুযোগ করে দিচ্ছি তারা তাদের পারদর্শিতা দেখাচ্ছে।'
নারীদের জন্য অর্থনৈতিক সচ্ছলতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ জানিয়ে সরকারপ্রধান মেয়েদের কর্মসংস্থান তৈরিতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের অবদান তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, 'আমি প্রথমবার নিয়ম করলাম যে প্রাইমারি শিক্ষকের ৬০ শতাংশ হবে মহিলা। সেইভাবে আমরা একে একে কাজ শুরু করেছি। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিক করেছি সারা বাংলাদেশে। ২০০১ এ প্রথমবার করেছিলাম, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে সেগুলো বন্ধ করে দেয়। সেখানে নারীরাই কাজ করে। প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের যে বৃত্তি দেই সেই বৃত্তির টাকা সরাসরি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মায়ের নামে চলে যায়। মায়ের নামে দিলে টাকাটা থাকে, কাজে লাগে আর সেটা সাশ্রয় হয়। বাবার নামে দিলে সব সময় যে পাবে তা তো না। দেখা গেল জুয়াটুয়া খেলে উড়িয়ে দিল বা দুটো বড় বড় ইলিশ মাছ নিয়ে এসে খেয়েদেয়ে সাফ করে দিল। মা সবসময় সঞ্চয় করে। মায়ের সবসময় সঞ্চয়ের মনোভাব আছে।'
এ সময় হাস্যরসের মাধ্যমে শেখ হাসিনা বলেন, 'আমি পুরুষদের বিরুদ্ধে কিছু বলছি না। বেশিকিছু বলে নিজের ভোট হারাতে চাই না।'
প্রধানমন্ত্রী মনে করেন এগিয়ে যাওয়ার জন্য সুযোগ তৈরি করে দেওয়া জরুরি। তিনি বলেন, 'আমরা নারীদের জন্য অনেক পদক্ষেপ নিয়েছি। আমাদের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, এমনকি বর্ডার গার্ড, কোথাও নারীদের অবস্থান ছিল না। আমরা সেখানে একে একে সব বাহিনীতে মেয়েদের সুযোগ করে দেই। জাতিসংঘ এখন সবচাইতে মেয়ে অফিসার চায়। পুলিশ, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনীতে আমাদের মেয়েরা দক্ষতার সাথে তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। একটা সুযোগ দিতে হয়, সুযোগ না দিলে হয় না।'
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে উঠে আসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রামে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের অবদানের কথা।
তিনি বলেন, 'আমি দেখেছি আমার মাকে, আমার বাবা সেই ১৯৪৮ সাল থেকে ভাষা আন্দোলন থেকে সংগ্রাম শুরু করেন। অধিক সময় কারাগারে কেটেছে। যখন আমার বাবা কারাগারে থাকতেন, একদিকে সংসার, আমাদেরকে মানুষ করার পাশাপাশি রাজনৈতিক দল করা, আন্দোলন সংগ্রামকে গড়ে তোলা, অত্যন্ত দক্ষতার সাথে কাজগুলো করে গেছেন। তিনি যা করেছেন সবই পর্দার আড়ালে করেছেন। গোয়েন্দা সংস্থাও ধরতে পারেনি। আমার মা বড় গেরিলা ছিলেন। ৪৮ সাল থেকে বাবার নামে গোয়েন্দার রিপোর্টগুলো আমি পড়ে দেখেছি, কোথাও আমার মা যে গোপনে আন্দোলনরত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীর সাথে দেখা করা, তাদের দিকনির্দেশনা দেওয়া, আন্দোলন কীভাবে গড়ে তুলবে সেগুলো দেওয়া, এই কাজগুলো যে করতেন। কখনো গোয়েন্দা লোকেরা ধরতে পারেননি। এজন্য তাদের কাছে রিপোর্টও নেই। তবে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা যখন দেয় তখন কয়েকবার আমার মাকে ইন্টারোগেশন করে। ধারণা ছিল তখন তাকেও গ্রেপ্তার করা হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা সেই সাহস পায়নি।'
সমাজে নারীদের এগিয়ে চলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নানা অবদান তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, 'বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত নারীদের বীরাঙ্গনা নাম দিয়ে তাদের সম্মান দিয়েছেন। আমরা তাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছি, তাদের অবদান ভোলার নয়।'
পাঁচ নারীকে 'জয়িতা পুরস্কার' প্রদান
এদিকে, সমাজের নানা প্রতিকূলতা আর বাধা অতিক্রম করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনের স্বীকৃতি হিসেবে পাঁচ নারীর হাতে জাতীয় পর্যায়ে 'সেরা জয়িতা পুরস্কার-২০২৩' তুলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুক্রবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের অনুষ্ঠানে এ পুরস্কার দেওয়া হয়। জয়িতা পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন- আনার কলি (অর্থনৈতিক), কল্যাণী মিঞ্জি (শিক্ষা ও কর্মসংস্থান), কমলি রবি দাশ (সফল মা), জাহানারা বেগম (নিপীড়ন প্রতিরোধ) এবং পাখি দত্ত হিজড়া (সামাজিক উন্নয়ন)।
পুরস্কারপ্রাপ্তদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকার চেক, ক্রেস্ট, স্যাশ (উত্তোরীয়) ও সনদপত্র দেওয়া হয়।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমা মোবারেক।
জয়িতা পুরস্কারপ্রাপ্তদের পক্ষ থেকে কল্যাণী মিঞ্জি পুরস্কার পাওয়ার পর তার অনুভূতি জানান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নারী ও কর্মকান্ডের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
'জয়িতা' (বিজয়ী), একজন নারী যিনি সকল বাধা জয় করে সাফল্যের শিখরে পৌঁছান, মানে এটি একজন সংগ্রামী ও অদম্য নারীর ছদ্মনাম।
সরকার পাঁচটি ক্যাটাগরিতে জয়িতাদের পুরস্কার দিয়েছে। সেগুলো হলো- অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী, শিক্ষা ও চাকরিতে সাফল্য অর্জনকারী নারী, সফল মা, নির্যাতনের কালো দিন মুছে দিয়ে ঘুরে দাঁড়ানো নারী এবং সামাজিক উন্নয়নে অবদান রেখেছেন এমন নারী।