বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ময়মনসিংহ সিটির নির্বাচন ও কুমিলস্নার উপনির্বাচন কাল

আবু সালেহ মো. মূসা, ময়মনসিংহ ও মো. আবদুল জলিল ভূঁইয়া, কুমিলস্না
  ০৮ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
ময়মনসিংহ সিটির নির্বাচন ও কুমিলস্নার উপনির্বাচন কাল

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন (মসিক) নির্বাচন ও কুমিলস্না সিটি করপোরেশনের (কুসিক) মেয়র পদে উপনির্বাচন আগামীকাল শনিবার। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের আনুষ্ঠানিক প্রচারযুদ্ধ বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে শেষ হয়েছে। শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মুখে ছিল প্রতিশ্রম্নতির ফুলঝুরি। দলীয় প্রতীকে কোনো প্রার্থী এই নির্বাচনে অংশ না নিলেও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। নির্বাচন অফিস সূত্র জানিয়েছে, ভোট গ্রহণের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।

এদিকে মসিক নির্বাচন ঘিরে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ছিল প্রার্থীদের বিরামহীন দৌড়ঝাঁপ। লিফলেট হাতে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা ছুটে বেড়িয়েছেন ভোটারদের কাছে, দিয়েছেন নানা প্রতিশ্রম্নতি। এছাড়াও প্রতিটি এলাকায় দিনভর খন্ড খন্ড মিছিল-স্স্নোগানে মুখর ছিল গোটা নগরী।

বিএনপিবিহীন এই সিটি নির্বাচনে

জাতীয় পার্টির একজন প্রার্থী থাকলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর মধ্যে হবে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। পাশাপাশি ভিন্ন মতাদর্শের কাউন্সিলর প্রার্থী থাকায় ভোটার উপস্থিতি ভালো হবে এবং উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট বলে আশা করছেন প্রার্থীরা।

মসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চারজন মেয়র প্রার্থী থাকলেও সদ্য সাবেক মেয়র ইকরামুল হক টিটু সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছেন। প্রচারেও তিনিই এগিয়ে ছিলেন বলে দাবি করেছেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি উত্তম চক্রবর্তী রকেট। তিনি বলেন, 'চারদিকে টিটুর টেবিল ঘড়ির জয়ধ্বনি শোনা যাচ্ছে। তার পক্ষে প্রচারণায় সবাই যেভাবে শামিল হয়েছেন তাতে স্পষ্টতই বলা যায়, আবারও টিটুই মেয়র হচ্ছেন।'

প্রচারণার শেষ দিনে সকাল থেকেই গণসংযোগে নামেন প্রার্থীরা। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নগরীর ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাঁশবাড়ি এলাকায় গণসংযোগ করেন টেবিল ঘড়ি প্রতীকের মেয়র প্রার্থী ইকরামুল হক টিটু।

এদিকে দুপুরে ব্রহ্মপুত্র নদে ঘড়ি মার্কার প্রচারণায় নৌকা নিয়ে মিছিল করেন মাঝিরা। ঘড়ি প্রতীকের পস্ন্যাকার্ড নিয়ে বিনামূল্যে পার্কে আসা মানুষদের বিনামূল্যে নৌকায় ঘুরান তারা। এ সময় সেখানে হাজির হন ইকরামুল হক টিটু। ব্রহ্মপুত্র নদের নৌকার মাঝিদের কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।

ইকরামুল হক টিটু বলেন, 'আমি নগরবাসীর ব্যাপক সমর্থন পাচ্ছি। আমি একজন প্রতিনিধি হিসেবে যেমন উন্নয়ন কাজ করেছি তেমনি সব সময়ে নাগরিকদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। সেই ভালোবাসার বন্ধন থেকে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, তারা আমাকে বিজয়ী করে আবারও সেবা করার সুযোগ দেবেন।'

এদিকে টিটুর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হাতি প্রতীকের প্রার্থী সাদেকুল হক মিল্কী টজু সন্ধ্যার পর বেশ কিছু নির্বাচনী ক্যাম্প পরিদর্শন করেন।

এ সময় তিনি বলেন, 'চারদিকে পরিবর্তনের জোয়ার উঠেছে। বর্তমান এমপির লোকজন ও নৌকার কর্মীরা আমার পক্ষে কাজ করায় ভোটের মাধ্যমে এবার জনগণ পরিবর্তন ঘটাবে বলে আশা করছি।'

আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের এহতেশামুল আলম নগরীর কলেজ রোড, কাঠগোলা, সানকিপাড়া শেষ মোড়, নিজকল্পা এলাকায় গণসংযোগকালে বলেন, 'দুর্নীতিমুক্ত সিটি গড়তে ও মানুষকে দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে চাই। মানুষ পরিবর্তন চাচ্ছে। এবার মানুষ ভোটের মাধ্যমে বিপস্নব ঘটাবে।'

এছাড়া নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য প্রার্থীরাও নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ ও ভোট প্রার্থনা করেন।

রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন চৌধুরী বলেন, 'নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে প্রতিটি ওয়ার্ডে মোবাইল ফোর্স ছাড়াও বিপুল সংখ্যক পুলিশ,র্ যাব, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন।'

ময়মনসিংহ সিটির দ্বিতীয় এই নির্বাচনে ইকরামুল হক টিটু, এহতেশামুল আলম ও অ্যাডভোকেট সাদেকুল হক খান মিল্কী টজু ছাড়াও মেয়র পদে লড়ছেন কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সাবেক সদস্য কৃৃষিবিদ ড. রেজাউল হক (হরিণ) এবং জেলা জাতীয় পার্টি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম স্বপন মন্ডল (লাঙ্গল)।

এছাড়া ৩৩টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৪৯ এবং ১১টি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে প্রার্থী আছেন ৬৯ জন। একটি ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ায় ৩২টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন হবে। ১২৮টি কেন্দ্রের ৯৯০টি কক্ষে ইভিএমে ভোটগ্রহণ করা হবে বলে নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে।

কুমিলস্নার মেয়র পদে উপনির্বাচন কাল

এদিকে কুমিলস্না সিটি করপোরেশনের (কুসিক) মেয়র পদে উপনির্বাচনের প্রচারণার শেষ দিনে বৃহস্পতিবার দিনভর গণসংযোগ ও উঠান বৈঠক করে ভোটারদের কাছে টানার চেষ্টা করেন প্রার্থীরা। নানা প্রতিশ্রম্নতি দেন জনগণ ও নগরীর উন্নয়নে।

অন্যদিকে নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে ইতোমধ্যের্ যাব, পুলিশ, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ৩ হাজার সদস্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এছাড়া মাঠে থাকবেন ৩৬ জন জুডিশিয়াল ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। জেলা প্রশাসক খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমানের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসনের একটি মনিটরিং টিম নগরীর ১০৫টি কেন্দ্র পরিদর্শনে মাঠে থাকবেন। বুধবার পর্যন্ত চার দিনব্যাপী প্রিজাইডিং অফিসারদের ট্রেনিং হয়েছে। ইতোমধ্যে ভোটগ্রহণের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।

বৃহস্পতিবার নগর আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী ডা. তাহসিন বাহার সূচনা নগরীর বেশ কয়েকটি এলাকায় গণসংযোগ ও দু'টি উঠান বৈঠক করেন। কর্মসূচিতে তিনি ভোটারদের নানা প্রতিশ্রম্নতি দেন। নগরীর উন্নয়নে পৃথক পরিকল্পনার কথা জানান। নির্বাচিত হলে রাস্তাঘাট, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন থেকে শুরু করে যানজট, জলাবদ্ধতা নিরসন, সুপেয় পানির সংকট দূর, গ্রিন-ক্লিন সিটি গড়ে তোলাসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন।

টেবিল ঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী সাবেক মেয়র মো. মনিরুল হক সাক্কু তার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সব উন্নয়নকাজ সমাপ্ত করার প্রতিশ্রম্নতি দেন। তিনি নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগকালে তিনি বলেন, 'আমি এখানে রাজনীতি করি। এখানেই রাজনীতি করে বড় হয়েছি। এই নগরীর জনগণের সঙ্গেই আমার চলাফেরা। তাই আমি কে নগরবাসী সবাই জানেন, আমাকে চেনেন। দু'বার মেয়র নির্বাচিত হয়ে নগরের উন্নয়নে অনেক কাজ করেছি, এবার নির্বাচিত হলে এই নগরের উন্নয়নে কোনো ছাড় দেব না।'

ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার আধুনিকতার ছোঁয়ায় কুমিলস্নাকে নতুন রূপ দেওয়ার প্রতিশ্রম্নতি দেন। তিনি নগরের উন্নয়ন নিয়ে তার কিছু আলাদা পরিকল্পনার কথা জানান। তিনি এ নগরকে সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে সাজাতে চান। নির্বাচিত হলে এই শহরকে বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে সব ধরনের উদ্যোগ নেবেন উলেস্নখ করে তিনি বলেন, 'আমরা রাজনীতি করি মানুষের কল্যাণের জন্য, মেয়র হতে চাই মানুষের সেবা করার জন্য। একটা দায়িত্ব পেলে এবং জনগণ যদি আমাকে নির্বাচিত করে তাহলে ব্যাপক আকারে মানুষের জন্য কাজ করতে পারব।'

তিনি নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগের পাশাপাশি উঠান বৈঠক করেন।

হাতি প্রতীকের প্রার্থী নূর উর-রহমান মাহমুদ তানিম বেকার যুবক-তরুণদের কর্মসংস্থান ও জীবনমান উন্নয়নে নানা প্রতিশ্রম্নতির কথা তুলে ধরেন ভোটারদের কাছে। নির্বাচিত হলে সিটি করপোরেশনকে দুর্নীতিমুক্ত করা, নগর ভবনকে দলীয় কার্যালয় না বানানো, জলাবদ্ধতা ও যানজট নিরসন, করের টাকা সততা-নিষ্ঠার সঙ্গে উন্নয়ন কাজে ব্যয় করাসহ দেন নানা প্রতিশ্রম্নতি। তিনিও নগরীর কয়েকটি এলাকায় উঠান বৈঠক করেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে