ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেছেন, ভূমি সংক্রান্ত স্বচ্ছতার বিষয়ে মন্ত্রণালয় নজরদারি করবে এবং প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভূমি সেবা নিশ্চিতে এবং খাস জমি ইজারা দেওয়ার বিষয়ে সরকার জিরো টলারেন্স নীতিতে আছে।
বুধবার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক সম্মেলনের চতুর্থ দিনের প্রথম অধিবেশনে ভূমি মন্ত্রণালয়ের কার্য অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।
খাস জমির স্বচ্ছতা বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দিয়েছেন কিনা ডিসিদের এমন প্রশ্নের জবাবে ভূমিমন্ত্রী বলেন, অবশ্যই স্বচ্ছতার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভূমি সেবা নিশ্চিত করতে সরকার জিরো টলারেন্স নীতিতে আছে। ভূমির বিষয়ে আমাদের সবচেয়ে বেশি নির্ভর করতে হয় জেলা প্রশাসকদের ওপর। ভূমি কমিশনারদের স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যেহেতু এসিল্যান্ড পর্যন্ত বিসিএস ক্যাডার, তাই আশা করছি স্বচ্ছতা বাস্তবায়ন করতে পারব। ভূমিসেবায় স্বচ্ছতা আনতে ভূমিসেবা কার্যক্রম আধুনিকায়ন করা হচ্ছে।
নজরদারি কীভাবে থাকবে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, মন্ত্রণালয় নজরদারি করবে। এছাড়া ডিসি, এসিল্যান্ড ও ইউএনও আছে। আমরা স্থানীয়ভাবে সরাসরি পরিদর্শন করছি।
জনগণের কাছ থেকে অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করা হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আপনাদের নির্দেশনা কি ছিল জানতে চাইলে ভূমিমন্ত্রী বলেন, আমরা যে পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করছি সেগুলো তাদের জানানো হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে পরিচ্ছন্নতা ফিরিয়ে আনতে হবে। এছাড়া তারা খাস জমি নিয়ে কতগুলো সুপারিশ করেছে, আমরা সেগুলো উত্তর দিয়েছি। যে-সব বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি সেসব বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। একই সঙ্গে তাদের সহযোগিতা করা হবে, যাতে তারা সহজভাবে কাজ করতে পারে।
'মশা নিধনে সারাদেশে ৪০
কোটি টাকা বরাদ্দ'
স্থানীয় সরকার,পলস্নী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, এডিস মশার প্রকোপ কমাতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জন্য পাঁচ কোটি ও সারাদেশের জন্য ৪০ কোটি টাকার ওষুধ কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে জেলা প্রশাসকদের জনসচেতনতা বাড়াতে ও প্রচারণায় কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
বুধবার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক সম্মেলনের অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
তাজুল ইসলাম বলেন, পুরো পৃথিবী অনুধাবন করছে যে এডিস মশা মোকাবিলা করতে হলে সবচেয়ে বেশি দরকার বা হাতিয়ার ৯০ শতাংশ সচেতনতা। আর বাকি ১০ শতাংশ টেকনিক্যাল বা ওষুধ। তিন দিনে একদিন জমা পানি ফেলে দিন এটা যদি সম্ভব হয় তাহলে এডিস মশার প্রজননটা আমরা রোধ করতে পারব। আগে যদি আমরা ঢাকার বাইরে এক পারসেন্ট এডিস মশার প্রকোপ দেখতাম, বাকি ৯৯ শতাংশই কিন্তু দেখা যেত ঢাকা শহরে। গত বছর এডিস মশার প্রকোপ ঢাকায় কমে নেমেছে ২০ শতাংশের নিচে। কিন্তু ঢাকার বাইরে হয়েছে ৮০ শতাংশ।
তিনি বলেন, প্রতিদিন আগে যে পরিমাণ আমাদের সন্তান বা মানুষ ঢাকায় আক্রান্ত হতো। এখন তা হচ্ছে ঢাকার বাইরে অর্থাৎ ঢাকার মানুষ এখন অনেক সচেতন হয়েছে। এডিস মশাকে মোকাবিলা করার জন্য আমরা যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি সচেতনতা সৃষ্টি করার জন্য টিভিসি প্রচার করেছি, মানুষ সেটা দেখে দায়িত্বের সঙ্গে গ্রহণ করেছে।
এসব কারণে ঢাকায় এডিস মশার প্রকোপ কমেছে ও সফলতা এসেছে বলে দাবি করেন মন্ত্রী।
এব্যাপারে ডিসিদের কী বলেছেন জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আমরা এই অবস্থাটা জানিয়েছি। তাদেরকে বলা হয়েছে এ ব্যাপারে এখনই ইনিশিয়েটিভ নেওয়ার জন্য। তারা জনসচেতনতার জন্য লিফলেট বিতরণ করছেন। তাছাড়া মন্ত্রণালয় থেকে যেসব সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন টেলিভিশনে প্রচার করা হচ্ছে তাতেও গ্রামাঞ্চলের মানুষও সচেতন হচ্ছে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি সঠিকভাবে দেখভাল করা হচ্ছে কিনা সে ব্যাপারে ডিসিদের মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে।
'পার্বত্য চট্টগ্রামের কোথাও অনিরাপত্তা নেই'
পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তা সব জায়গাতেই আছে। কোথাও অনিরাপত্তা নেই বলে জানিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। তিনি বলেন, এ অঞ্চলে প্রচুর বিদু্যৎ ও পানির সমস্যা রয়েছে। এজন্য স্যোলার প্যানেলের মাধ্যমে বিদু্যৎ ও পানির জন্য প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।
বুধবার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক সম্মেলনের চতুর্থ দিনের দ্বিতীয় অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা জানান।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, জেলা প্রশাসকরা বিদু্যতের বিষয়ে বেশি বলেছেন। প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদু্যতের কথা বলেছেন। সেসব অঞ্চলে যারা বিদু্যৎ থেকে বঞ্চিত তাদের কাছে কীভাবে বিদু্যৎ পৌঁছানো যায় সে বিষয়ে আলোচনা করেছেন। এটা পার্বত্য চট্টগ্রামের চলমান কার্যক্রম।
তিনি বলেন, জাতীয় বিদু্যৎগ্রেডের আওতায় যেসমস্ত অঞ্চলে আগামী ২০ থেকে ২৫ বছরে বিদু্যৎ যাবে না। সেখানে আমরা সোলার প্যানেল দিয়ে বিদু্যৎ পৌঁছানোর ব্যবস্থা করছি। এ পর্যন্ত ৫৫ হাজার পরিবারকে সোলারের মাধ্যমে বিদু্যৎ সেবার আওতায় আনা হয়েছে। এছাড়া এ এলাকায় পানির সংকট ব্যাপক। সেখানে হাটে, বাজারেসহ যেখানে যেখানে পানির সমস্যা সেখানে পানি দেওয়ার জন্য প্রকল্প চলমান রয়েছে।
তিনি বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে অনেক পাহাড় পর্বত সেটা আপনারা সবাই জানেন। প্রাকৃতিক যে পানির উৎস্য সেটা শুকিয়ে গেছে, কিছু বনাঞ্চল ধ্বংস হয়েছে সব মিলিয়ে কিছু সমস্যা আছে।
ভূমি নিয়ে একটা সমস্যা আছে সে বিষয়ে ডিসিদের কি নির্দেশনা দিয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভূমি বিরোধের বিষয়ে একটা আইন প্রণীত হয়েছে। আরও কিছু বিধান আছে সেটা হয়ে গেলে কার্যক্রম শুরু হবে। আমাদের ভূমি কমিশন আছে সেখানে বিধিমালা হলে কাজ করা যাবে। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, পর্যটকদের নিয়ে আলোচনা হয়নি। তবে নিরাপত্তা সব জায়গাতেই আছে। কোথাও অনিরাপত্তা নেই পার্বত্য চট্টগ্রামে। আপনারা সবাই পার্বত্য চট্টগ্রামে ঘুরে যান দেখতে পারবেন অনেক ভালোও লাগবে।