সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীর ওপর গুলি চালানোর ঘটনায় শিক্ষক রায়হান শরীফের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে শিক্ষার্থীকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের ও তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। শিক্ষক রায়হান শরীফের স্থায়ী বহিষ্কার ও বিচারের দাবিতে তারা 'উই ওয়ান্ট জাস্টিস' স্স্নোগান দেন।
\হএ ছাড়া ওই শিক্ষকের বিসিএস ক্যাডার ও বিএমডিসি রেজিস্ট্রেশন বাতিল ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দেন সিরাজগঞ্জ-২ (সিরাজগঞ্জ সদর ও কামারখন্দ) আসনের সংসদ সদস্য ড. জান্নাত আরা হেনরী। তিনিও ওই শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন। পরে অধ্যক্ষ আমিরুল হোসেন চৌধুরী ও সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরী শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিলে তারা আন্দোলন স্থগিত করেন। তবে রায়হান শরীফকে চাকরিচু্যতিসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দেওয়া হলে আরও কঠোর আন্দোলন করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষার্থীরা।
সিরাজগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম জানান, গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থী আরাফাত আমিন তমালের বাবা আব্দুলস্নাহ আল আমিন বাদী হয়ে সোমবার রাতে একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় তিনি তার ছেলেকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা ও অস্ত্র দিয়ে ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ করেছেন। এ ছাড়া অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনে অন্য মামলাটি দায়ের করেছেন সিরাজগঞ্জ গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল ওয়াদুদ।
এদিকে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজকে প্রধান করে সোমবার রাতে তিন সদস্যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- অধিদপ্তরের পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. মো. মহিউদ্দিন মাতুব্বর এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ মোহসিন উদ্দিন। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত দল মঙ্গলবার সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজে পৌঁছে তদন্ত শুরু করেছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা মো. আব্দুলস্নাহ আল আমিন বলেন, 'আমার ছেলের সহপাঠীরা জানায় ওই শিক্ষক কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের লেকচারার। তিনি সর্বদাই শিক্ষকদের সঙ্গেও খারাপ আচরণ করেন। তিনি সব সময় ব্যাগে অস্ত্র নিয়ে এসে ক্লাসে টেবিলের ওপর রেখে লেকচার দেন। ছাত্র-ছাত্রীরা এ বিষয়ে আপত্তি তুললে তিনি তাদের ভয়ভীতি ও গুলি করে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেন। সোমবার পরীক্ষা চলাকালীন বিকাল ৩টার দিকে ওই শিক্ষক হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের অহেতুক বকাবকি করেন। বকাবকির এক পর্যায়ে তার ব্যাগ থেকে পিস্তল বের করে আমার ছেলেকে হত্যার করার উদ্দেশে গুলি করলে গুলিটি তার ডান পায়ের ঊরুর ওপরের অংশ লেগে গুরুতর জখম হয়।'
তিনি জানান, সহপাঠীরা আমার ছেলেকে চিকিৎসার জন্য জরুরি বিভাগে নিয়ে যেতে চাইলে ওই শিক্ষক অস্ত্র উঁচিয়ে সবাইকে ভয় দেখিয়ে বলে যে, তোরা যদি ওকে চিকিৎসার জন্য জরুরি বিভাগে নিয়ে যাস তাহলে তোদের সবাইকে গুলি করে মেরে ফেলব। পরে তার বন্ধুরা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন দিলে সিরাজগঞ্জ থানা পুলিশ, ডিবি ঘটনাস্থলে এসে ওই শিক্ষককে অস্ত্রসহ আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
\হ