ডিসি সম্মেলন
অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সরব হতে ডিসিদের নির্দেশ
প্রকাশ | ০৫ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
মানুষের কাছে সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডের 'সত্যিকারের চিত্র' তুলে ধরতে এবং সরকারবিরোধীদের 'অপপ্রচারের' বিরুদ্ধে সরব হতে জেলা প্রশাসকদের আহ্বান জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
তিনি বলেছেন, 'আমি ডিসিদের ব্রডলি একটা কথা বলেছি। স্বাধীন বাংলাদেশে এখন আমরা সর্বোচ্চ স্থানে এসে দাঁড়িয়েছি। উন্নয়নের সূচকগুলো বাড়ছে। সবগুলো সূচকেই বাড়ছে, এখানে অনিশ্চয়তার কিছু নাই, হতাশারও কিছু নাই, এগুলো একটা মিথ্যা প্রোপাগান্ডা করা হচ্ছে। কিছুই হয় নাই এরকম প্রচারণা চলছে।'
তিনি বলেন, 'আপনারা (জেলা প্রশাসক) সত্যিকার যেটা আসল চিত্র তুলে ধরবেন। তাহলে মানুষ জানতে পারবে, সাংবাদিকরা জানতে পারবে প্রকৃত চিত্র।'
সোমবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে চার দিনের জেলা প্রশাসক সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের একটি অধিবেশনে অংশ নেন অর্থমন্ত্রী। নতুন অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান ও পরিকল্পনা
\হপ্রতিমন্ত্রী মো. শহীদুজ্জামান সরকারও ছিলেন তার সঙ্গে।
পরে অর্থমন্ত্রী মাহমুদ আলী সাংবাদিকদের বলেন, 'বিএনপি মহাসচিব বলছেন, তিনি কোনো উন্নয়ন দেখতে পাচ্ছেন না। বিএনপির যিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বেগম জিয়া, উনি তো বলেছেন যে, পদ্মা ব্রিজ ভেঙে পড়বে। তারা এই সবই বলে। উনি বলেছেন যে, আওয়ামী লীগ জোড়াতালি দিয়ে সেতু বানিয়েছে, এটা ভেঙে পড়তে পারে, আপনারা উঠবেন না। কিন্তু আসলে কী হয়েছে সবাই দেখেছে।'
শেখ হাসিনার ডেল্টা পস্ন্যান ধরে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে মাহমুদ আলী বলেন, 'সে কারণে জনগণের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। রাস্তায় ঘুরলে, মেট্রোরেলে চড়লেই সেটা বোঝা যায়। মহিলারা মেট্রোরেলের হাতলগুলো ধরে দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করছেন, তারা সন্তুষ্ট।'
মানুষের মূল ভাবনার বিষয় এখন মূল্যস্ফীতি, এ নিয়ে মন্ত্রী কী ভাবছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'মূল্যস্ফীতিই মূল কনসার্ন হয়ে গেল? আর কিছুই দেখলেন না। মেইন কনসার্নই বা কীভাবে হলো? এক কোটি মানুষকে কার্ড দেওয়া হয়েছে। তারা কম দামে জিনিস কিনতে পারছেন।'
অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান সাংবাদিকদের বলেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে যে ১১টি অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে সে ব্যাপারে জেলা প্রশাসকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে সম্মেলনে।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শহীদুজ্জামান সরকার বলেন, 'সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, সেই সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন করেন মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা। অর্থাৎ এই ডিসি পর্যায়ের কর্মকর্তারা। তাদের আমি আহ্বান জানিয়েছি, সরকারের যে ইচ্ছা সেটা কেবল রাজনৈতিক ইচ্ছাই নয়, উন্নয়ন করার যে ইচ্ছা সেই ইচ্ছা বাস্তবায়নে তারা যেন মনোযোগী হন।'
তিনি বলেন, 'দেশের মানুষ সরকার বলতে জেলা প্রশাসক ও ইউএনওদের বুঝে থাকে। তাই তাদের ভালো কর্মগুলো সরকারের ভালো কর্ম হিসেবে মানুষের কাছে বিবেচিত হয়। সে জন্য ডিসিদের আরও বেশি জনবান্ধব হওয়ার জন্য আমি অনুরোধ করেছি।'
সাধারণত সরকারের মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে প্রকল্পগুলো নেওয়া হয় মন্তব্য করে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, ডিসিরা যেহেতু মাঠপর্যায়ে কাজ করেন তাই জনবান্ধব কোনো প্রকল্পের বিষয়ে তাদের সুপারিশ থাকলে তারাও করতে পারবেন। সে কথা তাদের বলা হয়েছে।
বরই-পেয়ারা দিয়ে ইফতার করুন : শিল্পমন্ত্রী
আঙুর-খেজুরের পরিবর্তে বরই-পেয়ারা দিয়ে ইফতার করার পরামর্শ দিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। তিনি বলেছেন, আঙুর-খেজুর নয়, বরই-পেয়ারা দিয়ে ইফতার করুন।
তিনি বলেন, আপেল লাগে কেন? আঙুর লাগে কেন? আর কিছু নেই আমাদের। ইফতারে পেয়ারা খান, আমাদের যা আছে সেগুলো ব্যবহার করুন। ইফতারের পেস্নট সেভাবে সাজান।
সোমবার রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, 'আমাদের অভাব অভিযোগ আছে। অনেক পণ্য আমাদের আমদানি করতে হয়। দাম বেশি পড়ে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ইফতার পার্টি হবে না। আপনারা যেমন পরিবারের সমস্যাগুলো দেখেন সেভাবে দেশের সমস্যাগুলো নিজেদের মনে করে দেখতে হবে।'
তিনি বলেন, 'আমাদের পণ্যগুলো বিশ্বমানের করতে হবে। মন্ত্রণালয় কাজ করছে। আমরা আনন্দিত। জেলা প্রশাসকরা গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করেছেন। প্রতিটি এলাকার জেলা প্রশাসকদের গুরুত্বপূর্ণ পণ্যগুলো জিআই করার জন্য আবেদন করতে বলা হয়েছে। তারা আন্তরিকভাবে কাজ করছেন।'
চারা না গজালে বীজওয়ালাদের
চরম শাস্তি : কৃষিমন্ত্রী
যে সমস্ত বীজের অঙ্কুরোদগম হয় না (চারা গজায় না) সেসব বীজ যিনি বা যারা বাজারে সরবরাহ করবেন তাদের চরম শাস্তির আওতায় আনতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুস শহীদ। একই সঙ্গে তিনি জানান, রমজান মাসকে সামনে রেখে ঢাকা শহরে কৃষিপণ্যের বাজার খোলা হয়েছে যাতে মানুষ তাজা সবজি পায়।
সোমবার সকালে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের তৃতীয় অধিবেশনে কৃষি, খাদ্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কার্য অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান কৃষিমন্ত্রী।
জেলা প্রশাসকদের কী নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে আব্দুস শহীদ বলেন, 'কৃষকের ব্যাপারে আমরা অত্যন্ত সজাগ। বাংলাদেশ কৃষিনির্ভর দেশ। আমার জিডিপিও কৃষির ওপর অনেকটা নির্ভরশীল। যে সমস্ত বীজে অঙ্কুরোদগম হয় না- সেসব বীজ যিনি বা যারা বাজারে সরবরাহ করবেন তার শাস্তি কী আমরা বলে দিয়েছি। চরম শাস্তি হবে। সেজন্য কোনো বীজ যদি অঙ্কুরোদগম না হয় তাহলে তার শাস্তি পেতেই হবে। এসব বিষয়ে ডিসিদের বলা হয়েছে। আমি মনে করি, আপনাদের (সাংবাদিক) যে সমস্ত জানার চাহিদা, আপনারা যেভাবে দেখছেন, এর বাইরে কোনো কিছুই করছি না।'
তিনি বলেন, 'ইতোমধ্যে ঢাকা শহরে কৃষিপণ্যের বাজার খোলা হয়েছে। এই রমজান মাসকে সামনে রেখে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ও অন্যান্য জায়গায় ঘর পেলেই আমরা দোকান খুলে দিচ্ছি। যাতে তাজা সবজি মানুষ নিতে পারে এবং ন্যায্যমূল্যে ঠিক বলব না, প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে, কম দামে যাতে পাওয়া যায়। কারণ পার ক্যাপিটাল ইনকাম বেড়েছে,... ইকোনমিক্সের ক্যাপাসিটি বেড়েছে। আমরা যেহেতু এই সমস্ত কিছু অর্জন করেছি, বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার কারণে এগুলো হয়েছে। আমরা এলডিসিতে গিয়েছিলাম, সেখানেও দেখেছি, তারা বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে।'
৬০০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি : প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী
রমজানে ঢাকায় সাশ্রয়ী মূল্যে মাছ ও গরুর মাংস বিক্রি করবে সরকার। আগামী ১০ মার্চ থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত রাজধানীর ৩০টি জায়গায় তা পাওয়া যাবে।
সোমবার দুপুরে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে 'জেলা প্রশাসক সম্মেলন-২০২৪' এর দ্বিতীয় দিনের তৃতীয় অধিবেশনে কৃষি, খাদ্য, মৎস্য প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কার্য অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রহমান।
প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, রমজান উপলক্ষে গরুর মাংস ৬০০ টাকা, খাসির মাংস ৯০০ টাকা ও সলিড ব্রয়লার ২৮০ টাকায় বিক্রি করা হবে। এছাড়া ডিম বিক্রি হবে প্রতিটি ১০ টাকা ৫০ পয়সায়। এটাই হলো আমাদের একটি অন্তর্র্বর্তীকালীন ব্যবস্থা। আগামী ১০ মার্চ সেটা উদ্বোধন করা হবে।
এটা কী সারাদেশে করা হবে, জানতে চাইলে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, 'ঢাকায় ৩০টি জায়গায় এটা করা হবে। পর্যায়ক্রমে সামর্থ্য অনুসারে এ ব্যাপারগুলো আরও বেশি জায়গায় প্রসারিত করার চেষ্টা করব। ঢাকার বাইরে ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করার তাগিদ আছে। ব্যবসায়ীদের কাছে অনুরোধ, আপনারা মানুষকে কষ্ট দিয়ে অধিক মুনাফা লাভের চেষ্টা করবেন না।'
ইলিশ সংরক্ষণ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, জাটকা ধরার জায়গা থেকে মৎস্যজীবীদের সরিয়ে আনতে হবে। এটা বন্ধ হলে ইলিশ উৎপাদন বাড়বে। যতক্ষণ পর্যন্ত মাছটি নদীতে থাকতে পারবে ততই এর বৃদ্ধি ঘটবে।
৫০ লাখ পরিবার চাল পাবে : খাদ্যমন্ত্রী
রমজান মাস উপলক্ষে আগামী ১০ মার্চের মধ্যে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ৫০ লাখ পরিবারকে দেড় লাখ টন চাল দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। সোমবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ তথ্য জানান।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, 'খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি ১ মার্চ থেকেই লিফটিং (ডিলারদের চাল উঠাতে) করতে বলেছি। ১ থেকে ২০ মার্চ পর্যন্ত আমাদের একটি সিদ্ধান্ত ছিল। সেটা কমিয়ে ১০ মার্চের মধ্যে ৫০ লাখ পরিবারকে দেড় লাখ টন খাদ্য বিতরণ শেষ করা হবে।'
এই চাল বিতরণে বাজারে স্বস্তি ফিরবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'দেড় লাখ টন চাল যদি বাজারে ১৫ টাকা দরে যায়, তাহলে ৫০ লাখ পরিবারকে বাজার থেকে চাল কিনতে হবে না। এতে স্বস্তি আসবে বলে মনে করি।'
২০ ফেব্রম্নয়ারি থেকে বস্তায় চালের দাম ও জাত লেখার সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে কিনা জানতে চাইলে সাধন চন্দ্র বলেন, 'আমরা বলেছিলাম, ২০ ফেব্রম্নয়ারির মধ্যে পরিপত্র জারি করবো। কার্যকর করবো ১৪ এপ্রিল বা পহেলা বৈশাখ থেকে। তখন বাজারে বোরোর নতুন চাল আসবে। যেসব চাল এখন বাজারে বস্তাবন্দি এবং সিল মারা আছে, সেগুলোর প্যাকেট এখন কেউ পরিবর্তন করবে না। নতুন বছরে বোরো চাল উঠবে, তখন থেকে ওই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।'
ডিসিদের কাছে হালনাগাদ তথ্য আছে কিনা জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, 'ডিসি ও মিল মালিকদের সঙ্গে মিটিং শুরু হয়েছে। ধান ও চালের জাতের যে নমুনা, সেটা তাদেরও সরবরাহ করা হচ্ছে। ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট যে জাতগুলো দিয়েছে আউশ, আমন ও বোরোতে কোন কোন জাত, কোনটা মোটা, মাঝারি ও সরু সেটা নিয়ে তাদের সঙ্গে কাজ করছি।'
তদারকির নির্দেশ বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর
রোজায় এক কোটি পরিবারকে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে ছয়টি পণ্য দেওয়া হবে। সেসব পণ্য যাতে ঠিকভাবে মানুষের হাতে পৌঁছায়, জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) সেটা তদারকির নির্দেশনা দিয়েছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু।
সোমবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে ডিসিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'আগামী বছর থেকে ট্রাকে টিসিবির পণ্য বিক্রি না করে স্থায়ী দোকানের মাধ্যমে বিক্রি করা হবে। রোজার আগেই ভারত থেকে এক লাখ টন চিনি এবং ৫০ লাখ টন পেঁয়াজ আসবে। এর প্রভাব বাজারে পড়বে।'
তিনি বলেন, 'তেলের শুল্ক কমানোর জন্য ১০ টাকা কমেছে তেলের দাম। রোজাকে সামনে রেখে সব পণ্যের যথেষ্ট পরিমাণ সরবরাহ আছে। রোজায় কোনো পণ্যের দাম বাড়বে না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং বাজারে অব্যাহত আছে। কেউ এবার কারসাজি করতে পারবে না।'
দ্রবমূল্য নিয়ন্ত্রণে বাজার মনিটরিং অব্যাহত রাখতেও ডিসিদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।