বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

প্রতিবাদ-বিক্ষোভে উত্তাল দেশ

যাযাদি রিপোর্ট
  ০৫ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
প্রতিবাদ-বিক্ষোভে উত্তাল দেশ

অগ্নিঝরা মার্চের পঞ্চম দিনে পূর্ণ দিবস হরতাল পালনের সময় পুলিশ গুলি চালালে ৪ শ্রমিক নিহত ও ২৫ শ্রমিক আহত হন। দ্রম্নত এ খবর ছড়িয়ে পড়ে ঢাকাসহ আশপাশের শহরগুলোতে, সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ আরও প্রবল হয়ে ওঠে। বিক্ষোভে ফেটে পড়ে টঙ্গীর হাজার হাজার শ্রমিক। তারা টঙ্গী ব্রিজে আগুন ধরিয়ে রাস্তা অবরোধ করে প্রতিবাদ জানান। এভাবেই পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে ওঠে।

দিনব্যাপী হরতাল পালনে সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল বের হলেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে দুপুর আড়াইটা থেকে ৪টা পর্যন্ত ব্যাংকগুলো খোলা রাখা হয়। পাশাপাশি রেশন দোকানগুলো এ সময় খোলা রাখা হয়। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়া হয়।

এদিকে চট্টগ্রামে ২ দিনের সংঘর্ষে এবং সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহতের সংখ্যা ২২২ বলে দাবি করে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা বিবৃতি দেন। বঙ্গবন্ধু চট্টগ্রামে শান্তিপূূর্ণ পরিস্থিতি বজায় রাখার জন্য নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। উত্তাল বিক্ষোভে এদিন রাজশাহী এবং রংপুরেও গুলির ঘটনা ঘটে। বিক্ষুব্ধ জনতার ওপর সেনাবাহিনীর গুলির প্রতিবাদে ডাকসুর নেতৃত্বে বের হয় ঢাকায় বিশাল লাঠিমিছিল। ডাকসুর ভিপি আ স ম আবদুর রব এবং সাধারণ সম্পাদক আবদুল কুদ্দুস মাখনের নেতৃত্বে মিছিলে হাজার হাজার নারী-পুরুষ, ছাত্র-জনতা যোগ দেন। পূর্ব বাংলার লেখক, কবি, সাহিত্যিক ও শিল্পীরাও শহীদ মিনারে সমবেত হয়ে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিতের প্রতিবাদ এবং হত্যার নিন্দা জানান।

সভায় সভাপতিত্ব করেন ডক্টর আহমদ শরীফ। শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডক্টর মাযহারুল ইসলাম, অধ্যাপক ডক্টর বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, কবি শামসুর রাহমান, সাংবাদিক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, শিল্পী মহিউদ্দিন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। তারা পূর্ব বাংলার স্বাধিকারের জন্য সবাইকে আন্দোলন-সংগ্রামে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান।

মওলানা ভাসানী এক বিবৃতিতে গণহত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, দেশের মানুষ এর সমুচিত

জবাব দেবে। একই ধরনের বিবৃতি দেন ন্যাপের মোজাফফর আহমেদ ও সৈয়দ আলতাফ হোসেন। এ দিনেই জুলফিকার আলী ভুট্টো তার দলের কয়েকজন নেতাকে নিয়ে প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়ার সঙ্গে দেখা করেন। এর আগে ভুট্টো তার দলের কেন্দ্রীয় কমিটির দুদিনের অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, দেশের অখন্ডতা ও সংহতির স্বার্থে তার দল আওয়ামী লীগের ৬ দফা কর্মসূচির মধ্যে দুয়েকটা গ্রহণ করবেন। তবে তিনি জাতীয় পরিষদ অধিবেশন আহ্বানের জন্য দাবি জানাবেন কিনা বা স্থগিতের ঘোষণার প্রতিবাদ করবেন কিনা- এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ এক বিবৃতিতে সামরিক বাহিনীর নির্বিচারে হত্যার নিন্দা জানিয়ে বলেন, পরবর্তী যে কোনো পরিস্থিতির জন্য সেনাবাহিনীকেই দায়ী থাকতে হবে। তিনি আন্দোলনে শরিক হওয়ার জন্য পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণের প্রতিও আহ্বান জানান। তাছাড়া দেশের এ জরুরি পরিস্থিতিতে যে কোনো খবর আওয়ামী লীগ অফিসে এসে পৌঁছে দেওয়ার জন্যও জনগণের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

এ ছাড়া সংখ্যাগুরু দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে দেশের সংহতি রক্ষা করা অপরিহার্য বলে মন্তব্য করেন এয়ার মার্শাল (অব.) আসগর খান। মাওলানা গোলাম গাউস হাজারি জানিয়ে দেন, পশ্চিম পাকিস্তানের সব নির্বাচিত সদস্যের পক্ষ থেকে ভুট্টোর কথা বলার অধিকার নেই। মানিক গোলাম জিলানী বলেন, অবিলম্বে সংখ্যাগুরু দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী এসব নেতার কারও বক্তব্যই গুরুত্ব দেয়নি।

একদিকে ঢাকাসহ দেশজুড়ে চলছিল প্রচন্ড বিক্ষোভ। ঘরে ঘরে চলছিল প্রস্তুতি। গঠন করা হয়েছিল প্রতিটি এলাকায় সংগ্রাম কমিটি। চলছিল অস্ত্র সংগ্রহ এবং ট্রেনিং। অপরদিকে সান্ধ্যআইন জারি করে, মিছিলে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে সেনা শাসকরা বাঙালির সংগ্রামকে স্তব্ধ করে দিতে পরিকল্পনা নেয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে