মিয়ানমারে সংঘাত আবারও ভেসে আসছে ভারী গোলার শব্দ
প্রকাশ | ০৫ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
মিয়ানমারের আরাকান আর্মির (এএ) সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর তুমুল যুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে রাখাইন রাজ্য দখলে নিয়েছে দেশটির বিদ্রোহী বাহিনী। আর বিদ্রোহীদের দখল থেকে রাখাইন রাজ্য পুনরুদ্ধারে ফের ভারী গোলাবর্ষণ শুরু করেছে জান্তা বাহিনী। হেলিকপ্টার থেকেও গোলাবারুদ ছুড়ছে তারা। এমন পরিস্থিতিতে তিনদিন ধরে থেমে থেমে উখিয়া-টেকনাফ সীমান্তের এপারে ভেসে আসছে গোলার বিকট শব্দ। সবশেষ সোমবার ভোর ও সকালে মর্টারশেল ও হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া গোলার শব্দে কেঁপে ওঠে উখিয়া-টেকনাফ সীমান্তের এপার। এ ঘটনায় ফের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে সীমান্তের এপারের মানুষের মধ্যে। তারা স্বাভাবিক কাজকর্ম করতেও ভয় পাচ্ছেন। অন্যদিকে রোহিঙ্গা অনুপ্রেবেশের আশঙ্কায় বিজিবি ও কোস্টগার্ড সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সোমবার উখিয়ার থাইংখালী, টেকনাফের নাইটং পাড়া-হ্নীলা ও হোয়াইক্যং সীমান্তের এপারের বাসিন্দারা ভারী গোলাবর্ষণের শব্দ শুনতে পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন। ভোর ও সকালে মর্টারশেল ছাড়াও হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া গোলার শব্দ উখিয়া-টেকনাফ সীমান্তের এপারে ভেসে আসে।'
হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মোহাম্মদ আলী বলেন, 'গত কয়েকদিনে হ্নীলা সীমান্তের এপারে দফায় দফায়
রাতে ও দিনে বিকট শব্দ ভেসে আসছে। বিভিন্ন মাধ্যমে খবর পেয়েছি রাখাইনে আরাকান আর্মির হাতে দখলকৃত গ্রাম পুনরুদ্ধারসহ মংডুর রাচিডং-বুচিডং টাউনশিপ জান্তা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে দেশটির সেনাবাহিনী। তবে এমন ঘটনায় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবি ও কোস্টগার্ড সদস্যরা সর্তক পাহারায় রয়েছেন।'
হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ নুর আহমদ আনোয়ারী বলেন, 'মিয়ানমারের রাখাইনের সংঘাত দিনের পর দিন বাড়ার কারণে সীমান্তের এপারে বসবাসকারী অনেক মানুষ তাদের চিংড়ি-কাঁকড়ার ঘের ও ধানচাষে যেতে না পেরে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।'
এদিকে একটানা তিনদিন ধরে থেমে থেমে হোয়াইক্যং সীমান্তের এপারে বিকট শব্দ ভেসে আসছে। সীমান্তের ওপারে ধোঁয়ার কুন্ডলি দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
উখিয়ার থাইংখালী রহমতের বাসিন্দা হারুন রশিদ বলেন, 'শনি-রোববার রাত থেকে থাইংখালী রহমতের বিল সীমান্তের ওপারের বিকট শব্দ এপারে ভেসে আসছে। সোমবার সকাল ১০টার পর হঠাৎ পরপর বিকট আওয়াজ এপারে ভেসে এলে স্কুলের শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এ সময় যেসব চাষি সীমান্তবর্তী ক্ষেতে কাজ করছিলেন তারাও ভয়ে নিরাপদ স্থানে চলে আসেন। বেশ কয়েকটি গোলার শব্দ শোনা গেছে।'
কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি মুসা আকবর বলেন, 'মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির (এএ) মধ্যে দেশটির অভ্যন্তরে চলমান সংঘাতে রাখাইনে ১ জানুয়ারি থেকে ১৬ ফেব্রম্নয়ারি পর্যন্ত ৪০ জন রোহিঙ্গা নিহত, ১০৮ জন আহত এবং ৪ জন অপহরণের শিকার হয়েছে বলে জেনেছি। আমরা এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে উখিয়া-টেকনাফে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের নিয়ে গঠিত রোহিঙ্গা এফডিএমএন প্রতিনিধি কমিটির পক্ষ থেকে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে নিন্দা জানাই।'
পাশাপাশি আরাকানে রোহিঙ্গাদের জন্য অবিলম্বে এবং শক্তিশালী আন্তর্জাতিক নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠাসহ সাধারণ রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যা ও নির্যাতন বন্ধের দাবি করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় চিঠি দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, 'মিয়ানমারের রাখাইনে সংঘাতের কারণে সীমান্ত পরিস্থিতির খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। ওপারের পরিস্থিতির কারণে বিজিবি, কোস্টগার্ড ও পুলিশের টহল বাড়ানোর পাশাপাশি সীমান্তে বসবাসরতদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।'