ঘরের মাঠে ২০৭ রানের বিশাল লক্ষ্য। বছরে নিজেদের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ। ধ্বংস স্তূপ থেকে ফিনিক্স পাখির মতো জেগে উঠলেন মাহমুদউলস্নাহ রিয়াদ। তার বিদায়ের পর দলের হাল ধরলেন জাকের আলী। অভিষেকে এমন ইনিংস খেললেন, যা সবার হৃদয়ে থাকবে বহুদিন। যদিও দলকে জেতাতে পারেননি তিনি। সোমবার সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে সফরকারী শ্রীলংকার বিপক্ষে ৩ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। ফলে সিরিজে শ্রীলংকা ১-০ তে এগিয়ে গেল। মাহমুদউলস্নাহ ৫৪ ও জাকের ৬৮ রান করেন।
প্রথমবারের মতো মূল দলে খেলতে নেমে ছক্কার রেকর্ড গড়েন জাকের আলি। একই সঙ্গে করেন ঝোড়ো ফিফটি। ছয় নম্বরে নেমে ১ চারের সঙ্গে ৬টি ছক্কায় স্রেফ ২৫ বলে পঞ্চাশ পূর্ণ করেন ২৬
বছর বয়সি ব্যাটসম্যান।
এই সংস্করণে বাংলাদেশের হয়ে এক ইনিংসে এটিই সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ড। ইনিংসে ৫টি করে ছক্কা মেরেছেন নাজিমউদ্দিন, জিয়াউর রহমান, তামিম ইকবাল, লিটন দাস, সৌম্য সরকার ও মাহমুদউলস্নাহ।
১০ বছর পর প্রথম পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে বাংলাদেশে এসেছে শ্রীলংকা। মাঝে বেশ কয়েকবার বাংলাদেশে এলেও পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলা হয়নি। এবার দুই দল তিনটি করে টি২০ ও ওয়ানডে এবং দুটি টেস্ট ম্যাচ খেলবে। সিরিজটি পুরোটাই হচ্ছে ঢাকার বাইরে। টি২০ সিলেটে। ওয়ানডে চট্টগ্রামে। সিলেট ও চট্টগ্রামে হবে একটি করে টেস্ট। একই ভেনু্যতে দ্বিতীয় টি২০ ম্যাচটি হবে ৬ মার্চ বুধবার।
বাংলাদেশ-শ্রীলংকা ম্যাচ মানেই এখন বাড়তি উত্তেজনা। টস জিতে ফিল্ডিংয়ে নামা বাংলাদেশকে প্রথম ওভারে উইকেট এনে দিয়ে উদযাপনে সেই উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দেন পেসার শরিফুল ইসলাম। দ্রম্নত আরেক উইকেট এনে দেন তাসকিন আহমেদও। এরপর ঘুরে দাঁড়িয়ে সাদিরা সামারবিক্রমাকে নিয়ে কুশল মেন্ডিসের প্রতিরোধ এবং প্রতি আক্রমণ। আর তাতেই ব্যাকফুটে বাংলাদেশ। সিরিজের প্রথম টি২০তে বড় সংগ্রহ পায় সফরকারী শ্রীলংকা। ৩ উইকেট হারিয়ে ২০৬ রানের বিশাল ইনিংস গড়ে তোলে।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সোমবার টস হেরে ব্যাট করতে নামা শ্রীলংকা নির্ধারিত ২০ ওভারে ৩ উইকেটে ২০৬ রানের বড় ইনিংস গড়ে তোলে। ইনিংসে দ্বিতীয় বলে আভিশকা ফার্নান্ডোকে হারানো শ্রীলংকাকে এ দিন পথ দেখিয়েছেন উইকেটকিপার-ব্যাটার কুশল মেন্ডিস। ৩৬ বলে ৫৯ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলেন তিনি। সাদিরা সামারবিক্রমা ৬১ ও আসালাঙ্কা মাত্র ২১ বলে ৪৪ রানে অপরাজিত থাকেন।
নাজমুল হোসেন শান্তর নিয়মিত অধিনায়ক হিসেবে অভিষেকের ম্যাচে টস বাংলাদেশকে সঙ্গ দিয়েছে। রাতের ডিউ ফ্যাক্টরের কথা বিবেচনায় নিয়ে আগে ফিল্ডিং নেন তিনি। ব্যাটিংয়ে নেমে ৩৭ রানে দুই উইকেট হারিয়ে ফেলে শ্রীলংকা। তবে সেখান থেকেই মেন্ডিস-সামারাবিক্রমার ব্যাটে ঘুরে দাঁড়াতে থাকে লঙ্কানরা। অষ্টম ওভারের প্রথম বলে ৫০ রান পূর্ণ করা শ্রীলংকা মেন্ডিস ঝড়ে শতরান পূর্ণ করে ১১.৫ ওভারে। তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৯৬ রানের জুটি গড়েন মেন্ডিস-সামারাবিক্রমা। ৩৬ বলে ৬ চার ও ৩ ছয়ে ৫৯ রান করে কুশল মেন্ডিস রিশাদের বলে বাউন্ডারিতে ধরা পড়লে এই জুটি ভাঙে। মেন্ডিসের বিদায়ের পর হাত খুলতে থাকেন সামারাবিক্রমা ও উইকেটে আসা লঙ্কান অধিনায়ক আশালাঙ্কা। এরই মাঝে ৪৩ বলে অর্ধশতক তুলে নেন সামারাবিক্রমা। মুস্তাফিজের করা ১৮তম ওভারে আসে ১৪ রান। পরের ওভারে শরিফুল এসে দেন ১১ রান। ২০তম ওভারের পঞ্চম বলে মুস্তাফিজকে ছয় মেরে শ্রীলংকাকে ২০০ রান পার করে দেন আশালাঙ্কা। মুস্তাফিজের করা এই ওভারে আসে ২৪ রান। শেষ পাঁচ ওভারে শ্রীলংকা তোলে ৬০ রান! ৪৮ বলে ৮ আর ও ১ ছয়ে ৬১ রান অপরাজিত থাকেন সামারাবিক্রমা। মাত্র ২১ বলে ৬ ছয়ে ৪৪ রান করেন অধিনায়ক আশালাঙ্কা।
বাংলাদেশের পক্ষে সফলতম বোলার রিশাদ হোসেন ৪ ওভারে ৩২ রান দিয়ে ১ উইকেট শিকার করেন। তাসকিন ৪ ওভারে ৪০ ও শরিফুল ৪৭ রান দিয়ে ১টি করে উইকেট শিকার করেন। মুস্তাফিজ ৪ ওভারে ৪২ রান দিয়ে উইকেটশূন্য থাকেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলংকা: ২০ ওভারে ২০৬/৩ (আভিশকা ৪, কুশল ৫৯, কামিন্দু ১৯, সামারাবিক্রমা ৬১*, আসালাঙ্কা ৪৪*; শরিফুল ১/৪৭, তাসকিন ১/৪০, মেহেদি হাসান ০/৩০, মুস্তাফিজ ০/৪২, রিশাদ ১/৩২, সৌম্য ০/৮)।
বাংলাদেশ:২০ ওভারে ২০৩/৮ (লিটন ০, সৌম্য ১২, শান্ত ২০, তৌহিদ ৮, মাহমুদউলস্নাহ ৫৪, জাকের আলী ৬৮, মেহেদী হাসান ১৬, রিশাদ ০, তাসকিন ১*, শরিফুল ৫*; ম্যাথিউস ২/১৭, ফার্নান্দো ২/৪১, পাথিরানা ১/৫৬, থিকশানা ১/৩২, শানাকা ১/৩১, ধনাঞ্জয়া ০/১৯)।
ফল: শ্রীলংকা ৩ রানে জয়ী।