অবৈধ ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অভিযানে ডিসিদের সহায়তা চাইলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশ | ০৪ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
সারাদেশের অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের অভিযানে ডিসিদের সহায়তা চেয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। রোববার বিকালে ঢাকার ওসমানী মিলনায়তনে ডিসি সম্মেলনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কার্য অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি। অবৈধ ক্লিনিক নিয়ে কোনো নির্দেশনা দিয়েছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, জেলা প্রশাসকদের সাথে অনেক কথা হয়েছে। তারা বলেছেন, তাদের অনেক স্থানে জনবল নেই। হাসপাতালে বেডের থেকে রোগীর সংখ্যা \হবেশি, সে অনুপাতে টাকা বরাদ্দ নেই। এসব কথা আমি শুনেছি এবং বলেছি চেষ্টা করব সমস্যাগুলো সমাধানের। আমাদের তরফ থেকে একটা কথাই বলা হয়েছে। সেটা হলো- আমরা সম্প্রতি একটি অভিযান শুরু করেছি অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিকে আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর থেকে অভিযানে যে টিম যাবে তাদের যেন সর্বাত্মক সহায়তা করে। কারণ মন্ত্রণালয়ের তো জুডিশিয়াল ক্ষমতা নেই, সেটা ডিসিদের রয়েছে। এই অভিযান যাতে সুষ্ঠুভাবে হয়, কোনো ধরনের প্রতারণা না হয় এবং এ কাজে কোনো ধরনের বাধা আসলে আমাদের অবহিত করেন। এটাই ছিল তাদের কাছে মূল বিষয়, যাতে সারাবছর সুষ্ঠুভাবে অভিযানটা পরিচালনা করতে পারি। রাজধানী ঢাকায় দুই মাসের মধ্যে খতনা করাতে গিয়ে দুই শিশুর মৃতু্য নিয়ে আলোচনার মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর দেশজুড়ে অভিযান শুরু করেছে। প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকায় অভিযানে একাধিক ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধের খবর আসছে। এর মধ্যে ঢাকায় স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠানই বেশি। শুধু ২৭ ও ২৮ ফেব্রম্নয়ারি চিকিৎসাসেবা দেওয়ার অনুমতি না থাকা এবং নানা অনিয়মের অভিযোগে দেশের বিভিন্ন স্থানের ২২টি হাসপাতাল ও ক্লিনিক বন্ধ করে দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সবশেষ গত ২০ জানুয়ারি রাতে মালিবাগ চৌধুরীপাড়ার জেএস ডায়াগনস্টিক সেন্টারে খতনা করতে এসে মারা যায় ১০ বছর বয়সি আহনাফ তাহমিন আয়হাম। এর আগে গত ৩১ ডিসেম্বর রাজধানীর সাঁতারকুলের ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খতনার জন্য অজ্ঞান করার পর আর জ্ঞান ফেরেনি শিশু আয়ান আহমেদের। গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে সাত দিন লাইফ সাপোর্টে রাখার পর ৭ জানুয়ারি তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। এই দুই ঘটনার প্রেক্ষিতে দেশের সব বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিককে ১০টি নির্দেশনা দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। খতনার ঘটনা নিয়ে আলোচনার মধ্যে গত ২৫ ফেব্রম্নয়ারি স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, খতনা করাতে গিয়ে শিশুর মৃতু্যর ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে 'জিরো টলারেন্স' নীতিতে থাকতে কড়া নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সেদিন বলেছিলেন, 'অবৈধ ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান। অতীতে কী হয়েছে সেটা আমি তো বলছি এটা আমি চলমান রাখব।' এদিন ডিসি সম্মেলনে জনবল সংকটের বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব ছিল কি না জানতে চাইলে সামন্ত লাল বলেন, 'জনবল আমরা নিয়োগ করছি।' জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্য খাতে জনবল নিয়োগের বিষয়টি নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। সে অনুযায়ী জনবল পদায়ন ও পদোন্নতিতে কতদিন সময় লাগতে পারে- এমন প্রশ্নে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, 'একবারে তো সব কিছু সম্ভব না, পর্যায়ক্রমে করা হবে। এজন্য সময় লাগবে। পর্যায়ক্রমে আমরা আস্তে আস্তে সব হাসপাতালে করব।' হাসপাতালে বেডের থেকে রোগী বেশি থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, 'এতে হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে, ডাক্তাররা হিমশিম খাচ্ছে এত রোগী নিয়ে। আমরা পর্যায়ক্রমে আস্তে আস্তে সমাধানের দিকে এগিয়ে যাব।' হাসপাতালে চিকিৎসক না থাকার বিষয়ে নতুন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী রোকেয়া সুলতানা বলেন, 'অনেক সময় ডাক্তার থাকে না, ঠিক আছে। তবে হাসপাতালে বেডে ও মেঝেতে যেসব রোগী থাকে তাদের সবাইকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তারা যে সার্ভিসটা দিচ্ছে সেটাও বলতে হবে। এতে তারা উৎসাহিত হন। 'তবে চিকিৎসা সেবায় গাফিলতি করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চ্যালেঞ্জ নিয়েই কাজ করতে হয়। আমি চেষ্টা করব দেশের সাধারণ জনগণকে গুণগত মানসম্মত চিকিৎসা সেবা দিতে পারি। আমরা সম্মিলিতভাবে কাজ করব।' এর আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ডিসি সম্মেলনের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সম্পর্কিত কার্য অধিবেশনে আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানিযোগ্য পণ্য বহুমুখীকরণ, চামড়াজাত শিল্পের উন্নয়ন ও চামড়া রপ্তানির বিষয়ে গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। একই সঙ্গে রোজার মাস সামনে রেখে তেল, চিনি ও চালের দাম নিয়ন্ত্রণ, প্রকল্প বাস্তবায়নে ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়টি দ্রম্নত নিষ্পত্তি করা এবং সর্বজনীন পেনশন স্কিম বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জানানো হয়।