ফুটফুটে ফাইরুজের শেষ ঠিকানা মা-বাবার পাশে
প্রকাশ | ০৪ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
উখিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার হলদিয়াপালং ইউনিয়নের পশ্চিম মরিচ্যা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও চিকিৎসক আবুল কাশেমের বাড়ির আঙিনায় রোববার সকাল থেকেই মানুষ ভিড় করেন। বাড়ির সামনের উঠানে পাশাপাশি শুয়ে আছেন আবুল কাশেমের ছেলে শুল্ক কর্মকর্তা শাহজালাল উদ্দিন (৩৫), তার স্ত্রী মেহেরুন নেছা হেলালি (২৪) এবং একমাত্র মেয়ে ফাইরুজ কাশেম জামিরা (৪)। শোকে কাতর লোকজন শেষবারের মতো তাদের মুখ দেখতে আসেন। তারা ঢাকার রাজধানীর বেইলি রোডে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে প্রাণ হারিয়েছেন তারা।
রোববার বেলা ১১টায় উপজেলার মরিচ্যা পালং মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নিহতদের জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এতে শোকার্ত মানুষের ঢল নামে। পরে তাদের দাফন কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। মা-বাবার পাশের কবরেই সমাহিত করা হয় ফুটফুটে ফাইরুজকে।
জানাজার পূর্বে সংক্ষিপ্ত স্মৃতিচারণ করেন- উখিয়া-টেকনাফের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি, নিহত শাহজালালের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাক্তার
আবুল কাশেম, উখিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ মাহমুদুল হক চৌধুরী, উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম, উখিয়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও রাজাপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী, ঝিলংজা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান টিপু সুলতান, হলদিয়া পালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী, সাবেক ইউপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমিনুল হক আমিন, নিহত স্ত্রীর বাবা ইঞ্জিনিয়ার মোক্তার হেলালি, নিহতের বড় ভাই শাহাজান সাজু, স্থানীয় আওয়ামী ও পরিবারের সদস্যরা। জানাজা শেষে পশ্চিম মরিচ্যা পারিবারিক কবরস্থানে চির নিদ্রায় শায়িত করা হয় তাদের।
এর আগে সকাল থেকেই দূর-দূরান্ত থেকে তাদের এক নজরে দেখতে ছুটে আসেন হাজারও মানুষ। মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স ঘিরে চলে স্বজনদের আহাজারি। চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি সাধারণ মানুষও। সবার বুকে ছিল পাহাড়সম পাথর। ব্যথিত হৃদয়ে ক্ষণজন্মা শাহ জালাল ও তার স্ত্রী-সন্তানকে চির বিদায় দেন সবাই। এ সময় সবার কণ্ঠে ধ্বনিত হয়, এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে। আর যেন কোনো বাবা-মায়ের কোল খালি না হয়।
কাস্টমসের সহকারী ইন্সপেক্টর শাহজালাল উদ্দিন (৩৭), স্ত্রী মেহেরুন নেছা (২৪) ও একমাত্র মেয়ে ফাইরুজ কাশেম জামিরাকে (৪) নিয়ে থাকতেন ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের বসুন্ধরা রিভারভিউ এলাকায়। বড় ভাই শাহাজান সাজু জানান, অফিস থেকে তিন দিনের ছুটি নিয়ে খাগড়াছড়ি সাজেকে বেড়াতে যাওয়ার জন্য ঢাকায় এসেছিলেন। গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় গ্রিন লাইন সার্ভিসে টিকিট কনফার্ম করে। রাতে ডিনার করার জন্য স্ত্রী ও একমাত্র কন্যা সন্তান নিয়ে কাচ্চি ভাইয়ে ডিনার করতে যান। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে আগুনে পুড়ে সেখানেই তিনজনের মর্মান্তিক মৃতু্য হয়েছে। গত শনিবার রাতে স্বামী-স্ত্রী-কন্যা সন্তানের নিথর দেহের কফিনবাহী অ্যাম্বুলেন্স গ্রামের বাড়িতে পৌঁছলে পিতা-মাতা ভাই বোন ও আত্মীয়স্বজনের কান্নায় আকাশভারী হয়ে উঠে।
এদিকে শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে শাহজালালের স্ত্রী মেহেরুন নেছার রামুর গ্রামের বাড়ি ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নে পৌঁছায় তাদের মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স। তাদের মরদেহ পৌঁছার পর সৃষ্টি হয় হৃদয়বিদারক পরিস্থিতি। ওই রাত সাড়ে ১১টায় অনুষ্ঠিত হয় প্রথম জানাজা। এরপর মরদেহ নেওয়া হয় শাহজালালের গ্রামের বাড়ি উখিয়ার হলদিয়া পালংয়ে। রোববার বেলা ১১টায় মরিচ্যা মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে দ্বিতীয় জানাজার নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে শায়িত করা হয় তাদের।
ছেলে শাহজালালসহ আদরের নাতনি ও পূত্রবধূকে হারিয়ে বাবা মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম এখন অনেকটাই বাক্রুদ্ধ। যুদ্ধে হানাদার বাহিনীর অত্যাচার সহ্য করা এই বীর মুক্তিযোদ্ধা এখন ছেলের শোকে কাতর। এ ঘটনায় পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।